Sukanya Mondal: ‘সুকন্যা মাতৃহারা, বাবা জেলবন্দি, বাইরে রাখা যাচ্ছিল না!’ অনুব্রত-কন্যায় সহানুভূতির আর্জি তৃণমূলের
Cattle Smuggling Case: বীরভূমে বিজেপি-র সভাপতি পদ থেকে অনুব্রতকে আসীন রেখেছে তৃণমূল। তাই সুকন্যার গ্রেফতারিতে দলের অবস্থান জানতে মুখিয়ে ছিলেন সকলে।
কলকাতা: গরুপাচার মামলায় (Cattle Smuggling Case) আট মাস আগে গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mondal)। তার পর থেকেই চর্চা শুরু হয়েছিল তাঁকে নিয়ে। চাকরির প্রশ্নে আদালতে হাজিরা দেওয়া হোক, বা সম্পত্তির খতিয়ান নিয়েও তদন্তকারীদের সামনে হাজির হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তার পর থেকে সে ভাবে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর ফের খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মন্ডল (Sukanya Mondal)। গ্রেফতার হওয়ার পরও যেখানে বীরভূমে বিজেপি-র সভাপতি পদ থেকে অনুব্রতকে আসীন রেখেছে তৃণমূল (TMC), সেখানে সুকন্যার গ্রেফতারিতে দলের অবস্থান জানতে মুখিয়ে ছিলেন সকলে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষই সেই অবস্থান স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিলেন।
সুকন্যার গ্রেফতারিতে তৃণমূলের অবস্থান স্পষ্ট
এবিপি আনন্দে সুকন্যার গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খোলেন কুণাল। তিনি বলেন, "আইন আইনের পথে চলবে। কেউ বা কারা, কোনও দোষ করে থাকলে, অবশ্যই শাস্তি পাবে। এ নিয়ে তৃণমূল কাউকে ডিফেন্ড করতে যায়নি, আর যাবেও না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে একটি বিষয় বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। যে মেয়েটিকে গ্রেফতার করা হল, কিছু দিন আগে, দীর্ঘ অসুস্থতার পর তার মা মারা গিয়েছে। বাবা গ্রেফতার হয়ে রয়েছে জেলে। সেখানে তদন্তের প্রয়োজনে তাকে যে অ্যারেস্ট করা হল, বাইরে রেখে কি তদন্ত করা যাচ্ছিল না? এটা কোনও ভয়ঙ্কর, প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নহলের চাপ নয়ত? যে মেয়েটিকেও ছাড়া যাবে না, কারণ তিনি অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে!"
২০২০ সালের ২৪ জানুয়ারি মারা যান অনুব্রতর স্ত্রী ছবি মণ্ডল। দীর্ঘ দিন ধরেি অসুস্থ ছিলেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যান্সারে। কলকাতার টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। সেই সময় স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য নিত্যদিন ছুটে বেড়াতে হতো অনুব্রতকে। স্ত্রীকে নিয়ে অনুব্রত মানসিক চাপেও ছিলেন বলে শোনা যায়। সুকন্যার গ্রেফতারিতে তাঁর মাতৃবিয়োগের কথা তুলে ধরে তৃণমূল আসলে অনুব্রত-কন্যার প্রতি সহানুভূতিই ব্যক্ত করছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত-কন্যাকে নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হলে, গোড়ার দিকে বিরোধী শিবিরের নেতা-নেত্রীদেরও সুকন্যার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি বাবার 'পাপের মাশুল মেয়েকে গুনতে হচ্ছে' বলেও মন্তব্য করেছিলেন কেউ কেউ। সুকন্যাকে নিয়ে টানাপোড়েন দেখে খারাপ লাগছে বলেও জানিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ইডি-র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর আইন আইনের পথে চলবে বলেই মূলত একমত বিরোধী শিবির।
আরও পড়ুন: Anubrata Mondal: ‘মিথ্যা মামলা দিয়েছে CBI, আসানসোলে ফিরতে দিন’, আদালতে কাতর আর্জি অনুব্রতর
এ নিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "আমি আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম যে, শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।" কারণ ইডি-সিবিাআই বার বার তাঁকে ডেকেছে। কিন্তু কোনও রকম সহযোগিতা পাইনি। বরং উচ্চ আদালত থেকে বার বার বাইপাস করার চেষ্টা হয়েছে। ইডি তাই বাধ্য হয়েছে গ্রেফতার করতে। বিপুল সম্পত্তি রয়েছে তাঁর নামে। ব্যক্তিগত জীবনে তো প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন! বেশি দিন চাকরি করার সুযোগও পাননি। এত সম্পত্তি হল কী করে? অনুব্রত মণ্ডলেরও রোজগারের কোনও হদিশ পাইনি আমরা। সম্পত্তির হদিশ পেয়েছিল শুধুমাত্র। উত্তর তো দিতে হবে।"
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত-কন্যার বিরুদ্ধে ইডি-র হাতিয়ার হতে চলেছে তাঁর এবং তাঁর বাবার ঘনিষ্ঠদের বয়ানই। ইডি-র দাবি, আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিলেন সুকন্যা। আর্থিক লেনদেনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। ইডি-র দাবি, তদন্তে ব্যাঙ্কে নগদ জমার প্রায় দেড়শো-দু’শো রসিদ মিলেছে। টাকার অঙ্ক ছিল ১০ কোটির বেশি, যা নগদে জমা পড়েছে।
ইডি-র দাবি, অনুব্রতর পরিচারক, রাঁধুনি, সুকন্যার গাড়ি চালকরা বিভিন্ন সময়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমা করেছেন। কে টাকা পাঠিয়েছে জানতে চাইলে তাঁরাই সুকন্যার নাম করেন। ইডি সূত্রের খবর, তথ্যপ্রমাণ দেখালেও সুকন্য়া জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। বার বার দাবি করেন, সব জানেন বাবা আর তাঁদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারি। ইডি-র দাবি, সুকন্যার দাবি যে ঠিক নয়, তা জানান অনুব্রত-ঘনিষ্ঠরাই। গতকালও বাবার দিকেই দায় ঠেলায়, সুকন্যাকে গ্রেফতার করা হয়।
লেনদেনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন সুকন্যা!
ইডি-র দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শুধু অনুব্রত নন, সুকন্যাও নির্দেশ দিতেন। রাইস মিল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন সুকন্যা। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, জায়গা-জমি ছাড়াও ব্যাঙ্কে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের কোনও সদুত্তর সুকন্যা দেননি বলে ইডি-র দাবি। আজ রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে এই সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেশ করে অনুব্রত-কন্যাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে ইডি। তবে সুকন্যাকে নিয়ে যে তৃণমূল সহানুভূতিশীল, তা প্রকাশ পেল কুণালের মন্তব্যেই। অনুব্রতকেও এখনও বীরভূমের সভাপতি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে।