WB Municipal Elections 2022: দফায় দফায় অশান্তি-রক্তপাত-গুলি চলার অভিযোগে উত্তপ্ত রাজ্য, 'ভোট শান্তিপূর্ণ', মত কমিশনের
WB Municipal Elections 2022: পুলিশ, স্থানীয় নেতৃত্ব, আইপ্যাক-ত্রিমূর্তির নির্বাচন, দাবি অধীরের। সুকান্তর মতে, রাজ্যে শান্তিপূর্ন নির্বাচন করাতে কমিশন ব্যর্থ।
কলকাতা: শান্তিপূর্ণ ভোট করানোর প্রতিশ্রুতি শোনা গিয়েছিল এক দিন আগেও। কিন্তু শনিবার বকেয়া চার পুরসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ (WB Municipal Elections 2022) চলাকালীন অশান্তির ছবি ধরা পড়ল সব জায়গাতেই। ভোটলুঠ, ছাপ্পাভোটের অভিযোগে শাসক দলের বিরুদ্ধে যেমন সরব হয়েছে বিরোধী শিবির, তেমনই হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি, এমনকি গুলি চলার মতো অভিযোগও সামনে এসেছে। কিন্তু দিনের শেষে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) জানিয়েছে দু’-একটি বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই মিটেছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
যদিও পুলিশ এবং কমিশনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তাঁরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নামে নির্বাচন হচ্ছে। পুলিশ, স্থানীয় নেতৃত্ব, আইপ্যাক-ত্রিমূর্তির নির্বাচন। পুলিশ ভুল রিপোর্ট পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিভ্রান্ত করছে। যারা ভোটে জেতাতে চাইছেন, কোটি কোটি টাকার ডিল হয়েছে।”
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, "বহিরাগত ঢুকিয়ে ভোট করেছে তৃণমূল। মারধর, লুঠপাট চলছে, অথচ ভোট হয়ে যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে কী হচ্ছে।” রাজ্যে শান্তিপূর্ন নির্বাচন করাতে কমিশন ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিধাননগর, চন্দননগর, আসানসোল এবং শিলিগুড়ি পুরসভায় শনিবার ভোটগ্রহণ ছিল। এর মধ্যে বিধাননগর থেকেই সব চেয়ে বেশি অশান্তির খবর উঠে এসেছে। সেখানে সব্যসাচী দত্তর ওয়ার্ডের একটি বুথে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ৩৩৯ ভোট পড়ার অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, ভুয়ো ভোটার, বহিরাগতদের এনে ভোট বাড়িয়েছে তৃণমূল। যদিও হারের ভয়ে বিরোধীরা মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে পাল্টা জবাব দিয়েছে শাসক দল।
এ দিন বিধাননগর পুরভোটে উত্তেজনার কেন্দ্রে ছিল তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড। সল্টলেকের বিএফ ব্লকের মৌলানা আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথে। সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে সেখানে ৩৩৯টি ভোট পড়ে বলে দাবি করেছেন বিরোধীরা। ওই বুথের ৪৫ শতাংশ ভোটই পড়ে যায়, মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায়। সেই নিরিখে প্রতি ২ মিনিটে ৩টে করে ভোট পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথে তৃণমূলের মদতে ভুয়ো ভোটার ঢোকানো হয় বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা। এমনকি তাড়া করে ভুয়ো ভোটার ধরার ছবিও সামনে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। ধুন্ধুমারকাণ্ড দেখা যায় বিধাননগরের হাতিয়াড়াতেও। বাগুইআটির একটু বুথে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগে, হাতিহাতিতে জড়ান কংগ্রেস এবং তৃণমূল প্রার্থী।
আরও পড়ুন: Asansol Municipality: আসানসোল পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডে এজেন্ট বিভ্রাট
পুরভোটের দিন সকাল থেকে দফায় দফায় অশান্তি ছড়ায় হুগলির চন্দননগরেও। কোথাও বিজেপি প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে, তো কোথাও বিজেপি নেতাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে দেখা যায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের। শাসক দলের দাবি, অশান্তি পাকিয়েছেন বিরোধীরাই। যদিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করায় বিজেপি প্রার্থী এবং তাঁর বাবাকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ গেরুয়া শিবিরের।
এ দিন ভোটের সকালে রক্ত ঝরে আসানসোলে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী আদর্শ শর্মাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসকদলের বিরুদ্ধে ওঠে বুথ দখলের অভিযোগও। যদিও সব অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে শাসকদল। ঘটনার রিপোর্ট তলব করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে, সিধু-কান্হু ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের বুথ দখলের চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে।
আসানসোলের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের জামুড়িয়ার শ্রীপুর বয়েজ হাইস্কুলের বুথ দখলের চেষ্টা, গ্রামবাসীরা বাধা দেওয়ায় গুলি চালানোর অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএম প্রার্থীকে ভয় দেখাতেই গুলি, ফেসবুক লাইভে অভিযোগ সিপিএম প্রার্থী দয়াময় বাউড়ির মেয়ের। পাল্টা সিপিএম প্রার্থীর বিরুদ্ধেই গন্ডগোল পাকানোর অভিযোগ তৃণমূলের।
শিলিগুড়িতেও একই ছবি ধরা পড়ে। কোথাও বুথে বহিরাগত ঢোকানোর অভিযোগ ওঠে। কোথাও আবার ভোটারদের লাইন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা। এমনকি ভোটারদের চা খাইয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগও তোলেন বিরোধীরা।