Katchatheevu Island: ইতিহাস টেনে ফের কংগ্রেসকে নিশানা, শ্রীলঙ্কাকে দ্বীপ ‘ছেড়ে’ দেওয়া নিয়ে আক্রমণে মোদি
Lok Sabha Elections 2024: RTI জবাবকে হাতিয়ার করেই নতুন করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি।
নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনের আগে আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের পালা চলছেই রাজনীতিতে। এবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশের অখণ্ডতায় আঘাত হানার অভিযোগ তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির অভিযোগ, শ্রীলঙ্কার হাতে কচ্ছতিবু দ্বীপ (Katchatheevu Island) তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত কংগ্রেস নিয়েছিল, তা ভারতের জাতীয় অখণ্ডতা এবং স্বার্থকে দুর্বল করে দিয়েছে। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে কচ্ছতিবুাতিবু নিয়ে নতুন করে বিতর্কে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকেই। (Lok Sabha Elections 2024)
তথ্য জানার অধিকার আইনে কচ্ছতিবু দ্বীপ নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রের কাছে তথ্য জানতে চান তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই। তিনি যে জবাব পান তা হল, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার ১৯৭৪ সালে কচ্ছতিবু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। ওই RTI জবাবকে হাতিয়ার করেই নতুন করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন মোদি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে মোদি লেখেন, 'চোখ খুলে দেওয়ার মতো এবং বিস্ময়কর! নতুন তথ্য বলছে, কত নিষ্ঠুর ভাবে কংগ্রেস কচ্ছতিবু দ্বীপটি ছেড়ে দিয়েছিল। প্রত্যেক ভারতীয় বিষয়টি জানতে পেরে ক্রুদ্ধ এবং বুঝতে পারছেন, কংগ্রেসকে কখনও বিশ্বাস করা যাবে না।গত ৭৫ বছর ধরে ভারতের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বার্থকে দুর্বল করে দেওয়ার কাজই করেছে কংগ্রেস এবং আজও করে চলেছে'। গত বছরও এ নিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন মোদি।
RTI-এর আওতায় কচ্ছতিবু নিয়ে জবাব চান আন্নামালাই। তিনি জানতে পারেন, ভারতীয় উপকূল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, ১.৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কার দখলে রয়েছে। ১৯৭৪ সালের জুন মাসে কচ্ছতিবু শ্রীলঙ্কার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধিকে জানান কেন্দ্রের তদানীন্তন বিদেশসচিব কেবল সিংহ।
সেই সময় কেবল যদিও জানিয়েছিলেন, কচ্ছতিবু দ্বীপটির উপর জমিদারি সূত্রে অধিকার ছিল রামনাথপুরনের রাজা রামনাদের। দ্বীপের উপর নিজেদের দাবি জানালেও, তার সপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই শ্রীলঙ্কার হাতে। তবে ওলন্দাজ এবং ইংরেজদের মানচিত্রে কচ্ছতিবু দ্বীপটিকে শ্রীলঙ্কার উত্তরের জাফনাপতনম সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবেই দেখানো হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন বিদেশসচিব ডব্লিউটি জয়সিঙ্ঘে জানিয়েছেন, ১৮৪৫ সালে তদানীন্তন Ceylon-এর গভর্নর কলিন ক্যাম্পবেল তিনটি ঘোষণাপত্র জারি করেন, যার আওতায় জফনাপতনমের সীমা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে কচ্ছতিবুর উল্লেখ ছিল না। ১৯২১ সালে পরাধীন ভারত থেকে একটি প্রতিনিধিদল Cyelon-এ যায়। সমুদ্রসীমা নিয়ে সেখানে আলোচনা হলে তারা কচ্ছতিবুর দখলদারি ছাড়তে রাজি হয়নি। সেন্ট অ্যান্টনি গির্জা-সহ ওই দ্বীপ জাফনার অংশ বলে দাবি করা হয় তাদের তরফে।
এর পর কচ্ছতিবুর পশ্চিম অংশের তিন মাইল দূরত্ব থেকে জলসীমা নির্ধারণে রাজি হয় দুই পক্ষ। তবে কচ্ছতিবু Cylon-এর অন্তর্ভুক্ত বলে কোনও পক্ষেই সিলমোহর পড়েনি। ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত ওই দ্বীপের ইজারা ছিল ইংরেজদের হাতে। তাই ওই জলসীমা স্থায়ী নয় বলে জানিয়ে দেয় ইংরেজ-ভারতীয় প্রতিনিধি দল।
এর পর ১৯৪৭-'৪৮ সালে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা, দুই দেশই স্বাধীন হয়। আন্তর্জাতিক জলসীমা নির্ধারণের প্রয়োজন উপলব্ধি করে দুই দেশই। তার পরও বার বার সংসদে বিষয়টি উঠে আসে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা বিদেশমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর যুক্তি ছিল, কচ্ছতিবু নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কচ্ছতিবুর সঙ্গে ভারতের জাতীয় মর্যাদা জড়িয়ে নেই বলেও মত ছিল তাঁর।
#WATCH | Meerut, UP: On the Katchatheevu Island, Prime Minister Narendra Modi says "Today, another anti-national act of Congress has come before the country. Katchatheevu is an island in Tamil Nadu, off the coast of India, between Sri Lanka and Tamil Nadu and this island is… pic.twitter.com/ef5c9tEbqz
— ANI (@ANI) March 31, 2024
সেই থেকে মূলত মৎস্যজীবীদের আনাগোনা ছিল কচ্ছতিবুতে। মাদকচক্রেরও ঘাঁটি হয়ে ওঠে দ্বীপটি। এখনও প্রতি বছর অন্তত একবার হলেও কচ্ছতিবুর গির্জায় শ্রীলঙ্কা থেকে প্রচুর মানুষ পা রাখেন। ওই গির্জার নির্মাতা ছিলেন রামনাদের বণিক সিনিকুপ্পান পদায়ছি। ভারতীয় এবং শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীদের বিশ্রামস্থল হিসেবে সেটির নির্মাণ করেন তাঁরা, যাতে সেখানে জাল শুকিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি, সামুদ্রিক ঝঞ্ঝার সময় আশ্রয় নেওয়া যায়।
১৯৬৮ সালে কচ্ছের কিছু অংশ পাকিস্তানের হাতে উঠলে কচ্ছতিবু নিয়ে উদগ্রীব হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কা। জাফনার রোমান ক্যাথলিক পাদরির অধীনে যেহেতু সেন্ট অ্যান্টনির গির্জাটি পড়ে বলে দাবি জানায় তারা। 'কচ্ছতিবুতে শ্রীলঙ্কার শাসন কায়েম হল' বলে খবরও ছাপে সেদেশের সংবাদমাধ্যমগুলি। ওই দ্বীপে তেল থাকতে পারে ভেবে সেটির কিছু অংশ চিনের সংস্থাকে ইজারাও দেয় শ্রীলঙ্কা। সেই সময় ভারত মাহাসাগরের সেতুসমুদ্রম-সহ বেশ কিছু অঞ্চলে অস্থিরতা দেখা দেয়। সাতের দশকে সিংহলী-তামিল সংঘাত মাথাচাড়া দেয় যেমন, কট্টরপন্থী সিংহলী কমিউনিস্ট গোষ্ঠী জনতা বিমুক্ত পেরামুনাও সক্রিয় হয়ে ওঠে। চিনের প্রভাবও বাড়তে শুরু করে শ্রীলঙ্কার উপর।
পাশাপাশি, ১৯৬৮ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে আমেরিকা এবং রাশিয়ার নৌহাবিনীর আনাগোনা বড়তে থাকে। ফলে জলসীমা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো প্রয়োজন বলে অনুধাবন করে দিল্লি। তাই দ্বিপাক্ষিক শান্তিস্থাপনের 'অতি ক্ষুদ্র মূল্য' হিসেবেই শ্রীলঙ্কার হাতে ছেড়ে দেওয়া হয় কচ্ছতিবুকে, সেই সম যার তীব্র বিরোধিতা করেছিল DMK. যদিও সেখানে মাছ ধরতে যাওয়ার অনুমতি ছিল তামিল মৎস্যজীবীদের। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধের জেরে পরবর্তীতে ভারতীয় মৎস্যজীবীদের সঙ্গেও শত্রুর মতো আচরণ শুরু হয়। দেখামাত্র গুলি করা থেকে বন্দি করে রাখার ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই সময় এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন DMK.
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ থামলে ২০০৮ সালে তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে আবেদন জানান ১৯৭৪ এবং ১৯৭৬ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, ভারতীয় মৎস্যজীবীরা তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে মোদির দ্বারস্থ হন জয়ললিতা। ২০১৪ সালে দেশের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনালের মুকুল রোহাতগি শীর্ষ আদালতে জানান, কচ্ছতিবুর উপর এখন দাবি জানানোর অর্থ যুদ্ধ ডেকে আনা। কারণ বিষয়টি মোটেই দ্বিপাক্ষিক সংঘাত নয়, চুক্তি নিয়ে কোনও পক্ষেরই এতদিন কোনও আপত্তি ছিল না। বিষয়টি আজও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এতদিন সেই নিয়ে কেন্দ্রের তরফে কোনও মন্তব্যও করা হয়নি। কিন্তু ২০২২ সালের শুরুতে বন্দি ভারতীয় মৎস্যজীবীদের মুক্তি দিতে শ্রীলঙ্কার তরফে যখন টাকার দাবি জানানো হয়, আবারও কচ্ছতিবু নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন মোদির কাছে স্মারকলিপিও জমা দেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে কচ্ছতিবু নিয়ে বিবাদ শুরু হল।
তবে চাইলেই ভারত চুক্তি বাতিল করতে পারে না বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, ভিয়েনা সম্মেলন আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে যে বিধান দিয়েছিল, তা মেনে চলতে বাধ্য ভারত, শ্রীলঙ্কা দুই দেশই। কোনও পক্ষই চুক্তি নিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে না। দুই দেশই যদি কোনও পরিবর্তন চায় চুক্তিতে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুচ্ছেদ ৩৩-র আওতায়, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপও লাগবে। বিষয়টি পাঠানো হতে পারে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতেও।