Vikrant Massey: টাকা থাকলেই সম্মান, বুঝেছিলেন ছোট্ট বয়সেই, বোকাবাক্সের ‘শ্যাম ভাইয়া’ থেকে রুপোলি পর্দার তারকা বিক্রান্ত
Vikrant Massey Success Story: ২০০৭ সালে ‘ধুম মাচাও ধুম’ ধারাবাহিকে আমির হাসানের চরিত্রে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তারও আগে তারকা কোরিওগ্রাফার শ্যামক দাওয়ারের কাছে নাচ শেখেন।
নয়াদিল্লি: বিক্রান্ত ম্যাসি (Vikrant Massey)। বিনোদন দুনিয়ায় যিনি এখন নতুন করে চর্চায়। খ্যাতির গ্রাফ যাঁর চড়চড় করে ঊর্ধ্বমুখী। সৌজন্যে অবশ্যই তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘12th ফেল’ (12th Fail)। বিধু বিনোদ চোপড়া (Vidhu Vinod Chopra) পরিচালিত এই ছবিতে তাঁকে আইপিএস অফিসার মনোজ কুমার শর্মার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। সেই আনন্দের পরিমাণ আরও বেড়েছে বাড়িতে খুদে সদস্যের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে। সম্প্রতি অভিনেতার স্ত্রী শীতল ঠাকুর, জন্ম দিয়েছেন পুত্র সন্তানের।
কিন্তু কেবল ‘12th ফেল’ ছবিতেই নয়, এর আগে যা যা কাজ করেছেন প্রত্যেকবারই নজর কেড়েছেন বিক্রান্ত। ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দা হয়েও ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, মন জয় করেছেন, ‘হসীন দিলরুবা’, ‘লভ হস্টেল’ বা ‘ফরেন্সিক’, ‘ছপাক’ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। তবে এই খ্যাতির শিখরে পৌঁছনোর রাস্তাটা তাঁর নেহাত মসৃণ ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, দারিদ্র্যের জন্য লাঞ্ছনার শিকার, স্থির করে নিয়েছিলেন যেভাবেই হোক প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেই হবে। সেই রাস্তাও নিজে তৈরি করলেন। কিন্তু তারপরও ছোটপর্দার বিপুল পারিশ্রমিকের কাজ ছেড়ে ঝুঁকি নিলেন, অপেক্ষা করলেন সিনেমায় অভিনয়ের। কথায় বলে, ‘চেষ্টা থাকলে উপায় হয়’। হয় বইকী! ঝুলিতে প্রচুর নায়ক সুলভ চরিত্রে অভিনয় করা কাজ নেই, তবুও তাঁকে এক নামে চেনেন দর্শক। কেমন ছিল তাঁর এই পথচলা?
বন্ধুদের থেকে লাঞ্ছনার শিকার
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান, তাঁরা ‘বড়লোক’ ছিলেন না, সেই কারণে নাকি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তাঁর বন্ধুরাও। এরপর তাঁরা নাকি সরিয়ে নিয়েছিলেন নিজেদের। তিনি জানান যে একবার বাড়িতে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন অভিনেতা। যখন তাঁরা এসে পৌঁছন, বাড়ির অবস্থা দেখে তাঁরা বেশ হতবাক হয়েছিলেন। বাড়িতে বসার জন্য ছিল প্লাস্টিকের চেয়ার, মেরামতির প্রয়োজন ছিল বাড়ির। অভিনেতার দাবি, যেই তাঁর বন্ধুরা বাড়িতে আসেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তিনি। বিক্রান্ত বলেন, ‘আমার মা খুব ভাল রান্না করতেন। আমি তাই ওঁদের আমন্ত্রণ জানাই, বলি ‘দাওয়াত পে আযাও’ (খাওয়া দাওয়া করতে এসো)। যখন তাঁরা বাড়িতে এসে তার হাল দেখেন, ওঁরা দেখেন যে ঘরে প্লাস্টিকের চেয়ার রয়েছে, দেওয়ালের রং খসে পড়ছে, সিলিংয়ে নোনা ধরেছে, রান্নাঘর ওঁদের মতে পরিষ্কার নয়, ঠিক তার পরের দিন থেকে আমার প্রতি তাঁদের আচরণ বদলে যায়।’ তিনি জানান এরপর অন্য বন্ধুবান্ধবদের মারফত তাঁদের মতামত জানতে পারেন অভিনেতা। জানতে পারেন যে বিক্রান্তের বাড়ি সম্পর্কে একাধিক অসম্মানজনক মন্তব্য করেন তাঁর নিজের বন্ধুরাই। তাঁরা আসেন, খাওয়াদাওয়া করেন এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। বিক্রান্তের কথায়, বন্ধুদের বাড়ি ডাকেন তিনি এবং সেই ব্যাপারে তিনি একটুও লজ্জিত নন।
অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি মাত্র ২৪ বছর বয়সে নিজের বাড়ি কেনেন। সেই সময়ে তাঁর মাসিক আয় ছিল প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানের কাছে এই টাকা নিঃসন্দেহে প্রচুর। নিজের মুখে তিনি স্বীকার করেন, ‘টেলিভিশনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে ফেলি আমি। ২৪ বছর বয়সে প্রথম বাড়ি কিনে ফেলি। প্রচুর অর্থ উপার্জন করছিলাম। ২৪ বছরের এক ছেলের ক্ষেত্রে মাসে ৩৫ লক্ষ টাকা অনেক। আর সে যদি এমন একজন হয় যার বাড়িতে মাসের প্রথম ১৫ দিন বাবার বেতনে সংসার চলত, ষোড়শ দিন থেকে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট শুরু হয়ে যেত।’
তবে সেই বিপুল অর্থ কোথাও যেন গিয়ে তাঁর রাতের ঘুম কাড়ছিল। এত টাকা যখন বিক্রান্তের আয়, তখন সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সেই ৩৫ লক্ষ টাকার কন্ট্র্যাক্ট ছাড়েন অভিনেতা। অকপট বিক্রান্ত নিজের মুখে বলেন, ‘টাকা দিয়ে ঘুম আসত না আমার। এবার ভাল কাজ করে শান্তির ঘুমের খোঁজ করছিলাম।’ এভাবেই ছোটপর্দা ছেড়ে বড়পর্দার সফর শুরু করেন তিনি।
ছোটপর্দা ছেড়ে বড়পর্দায় পা
অনেকেই বলেন, ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দায় পা দিলে, সফর খুব একটা মসৃণ হয় না। কিন্তু বিক্রান্ত ম্যাসির মতো শিল্পীরা সেই সফর খানিক সহজ করে ফেলেন, নিজেদের গুণে। ছোটপর্দায় মাসিক ৩৫ লক্ষের কন্ট্র্যাক্ট ছাড়ার কথা শুনে হতচকিত হয়ে যান অভিনেতার বাবা-মা। তাঁরা অবাক হয়ে যান যে এত অর্থ উপার্জন করেও কেন বড়পর্দায় নতুন করে শুরু করতে চাইছেন তিনি। তবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন বিক্রান্ত। মাত্র এক বছরে সমস্ত সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে যায় তাঁর। সেই সময় তাঁর হাত শক্ত করে ধরেন অভিনেতার স্ত্রী, তৎকালীন প্রেমিকা শীতল ঠাকুর। সিনেমার অডিশন দিতে যাওয়ার জন্য শীতল পকেটমানি দিতেন বিক্রান্তকে।
২০০৭ সালে ‘ধুম মাচাও ধুম’ ধারাবাহিকে আমির হাসানের চরিত্রে অভিনয় করে কেরিয়ার শুরু করেন তিনি। তারও আগে তারকা কোরিওগ্রাফার শ্যামক দাওয়ারের কাছে নাচ শেখেন এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন। জ্যাজ ও কন্টেম্পোরারি নাচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিনি। মাত্র ৭ বছর বয়স থেকে মঞ্চে পারফর্ম করতেন তিনি। এরপর ২০০৮ সালে ‘ধরম বীর’ ধারাবাহিকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে শুরু করেন তিনি। তবে মূল খ্যাতি তিনি পান ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকে শ্যাম সিংহ ওরফে 'শ্যাম ভাইয়া'র চরিত্রে অভিনয় করে। এরপরেও একাধিক ধারাবাহিকে তিনি কাজ করেছেন, ঘরে ঘরে পরিচিতি লাভ করেছেন।
২০১৩ সালে তিনি বলিউডে ডেবিউ করেন বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানের ‘লুটেরা’ ছবির হাত ধরে। রণবীর সিংহের সহকারী ও বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি এই ছবিতে। সিনেমায় প্রথম মুখ্য চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন ২০১৭ সালে ‘এ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’, অভিনয় করেন কঙ্কনা সেনশর্মার বিপরীতে। বিপুল প্রসংশা পান। কিন্তু এরপরেও কাজের খরা কাটেনি তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান অডিশন দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হত তাঁকে। বিক্রান্তের কথায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অডিশন নিতেন অসফল অভিনেতা বা উঠতি অভিনেতারা, বা যাঁরা নিজেরাও ওই স্থানে পৌঁছতে চাইছেন। বিক্রান্তের মনে হয়েছিল যাঁরা অডিশন নিতেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেদের কাজে পটু ছিলেন না। ফলে তিনি অডিশনে পরিচালকদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করতে শুরু করেন। অভিনেতা বলেন, ‘অডিশন খুব জটিল ব্যাপার। সবচেয়ে খারাপ বিষয় ছিল যাঁরা অডিশন নিচ্ছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা নিজেরাই অভিনেতা হতে চান। বেশিরভাগ কাস্টিং ডিরেক্টররা অসফল অভিনেতা যাঁরা আংশিক কড়াও বটে বা তাঁদের সহকারীরা নিজেরাই উঠতি অভিনেতা। খুব জটিল জায়গা এবং আমি সেটা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি।’ এই পরিস্থিতির বদল তিনি ঘটাতে চেয়েছিলেন, নিজের সাধ্য মতো। অভিনেতা বলেন, ‘অনেক পরে গিয়ে, যখন আমি ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’ বা এমনকী ‘লুটেরা’র মতো সিনেমায় কাজ করে ফেলেছি, তখন আমি বলতে শুরু করি, ‘আমি অডিশন দেওয়ার সময় পরিচালক উপস্থিত থাকতে পারেন কি? এবং আমাকে আপনি উপদেশ দেবেন না কারণ আমি জানি যে চরিত্রের জন্য আমি অডিশন দিচ্ছি আপনি সেই চরিত্রতে নিজে অভিনয় করতে চান’।’
তবে নিজের শিল্পের মাধ্যমে, দক্ষ অভিনয় ক্ষমতার মাধ্যমে বলিউডে এখন বিক্রান্ত ম্যাসি প্রতিষ্ঠিত নাম। সিনেমার দুনিয়ার সাফল্য লাভের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে তাঁর পারিশ্রমিকের পরিমাণও। একাধিক রিপোর্ট বলে, ২০২১ সালে প্রত্যেক সিনেমার জন্য বিক্রান্ত ৭৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিতেন। এরপরে পারিশ্রমিকের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় দেড় কোটিতে, সেই সঙ্গে যুক্ত হয় একটি শর্ত। তাঁর চুক্তি অনুযায়ী, যদি তাঁর অভিনীত ছবি সরাসরি ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্মে মুক্তির জন্য বেছে নেওয়া হয় বা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাহলে পারিশ্রমিকে আরও দেড় কোটি টাকা যুক্ত করতে হবে।
আপাতত ‘12th ফেল’ ছবির সাফল্য, ও বাবা হওয়ার আনন্দে দিন কাটছে বিক্রান্তের। তবে ২০২৪ সালে অনুরাগীরা অপেক্ষায় রয়েছেন বিক্রান্ত ম্যাসি ও তাপসী পন্নু অভিনীত জনপ্রিয় ‘হসীন দিলরুবা’ সিনেমার সিক্যুয়েলের জন্য। এই ছবির নাম নির্ধারিত হয়েছে ‘ফির আই হসীন দিলরুবা’। জয়প্রসাদ দেসাই পরিচালিত এই ছবিতে পুরনো চরিত্রেই ফিরবেন বিক্রান্ত ও তাপসী, সেই সঙ্গে দেখা যাবে সানি কৌশল ও জিমি শেরগিলকে।
আজ ৩ এপ্রিল, ৩৭ পূর্ণ করলেন বিক্রান্ত। তাঁর জন্য রইল শুভেচ্ছা।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।