মানুষের ট্রোল করার অধিকার থাকলে আমারও নিজের শর্তে বাঁচার অধিকার আছে: সৌরভ
'আমি নেটিজেনদের কথা ভেবে অভিনয়ে আসিনি। আমার যেটা ভালো লাগে সেটাই করি। তাতে মানুষ আমায় ভালোবাসেন, আবার ট্রোলিং-ও করেন। সবেরই অধিকার আছে তাঁদের। তবে আমার জীবনটা আমি আমার মতো করেই কাটাব।'
কলকাতা: কালো টিশার্টের ওপর ডিজাইনার জ্যাকেট, সঙ্গে ডিজাইনার প্যান্ট। গলার বড় লকেটের ওপর আটকে রাখা চশমা। অনুষ্ঠানে তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট ছিল সবার থেকে থেকে আলাদা। রণবীর সিংহের সঙ্গে তুলনা টানতে একটু লজ্জা পেয়ে তিনি বললেন, 'ব্যাপারটা ঠিক তেমন না, থিমের সঙ্গে মানানসই পোশাক পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ অনিন্দিতার (অনিন্দিতা বসু) এই জ্যাকেটটা পছন্দ হল। আলমারি থেকে নিয়ে পরে চলে আসলাম। এখনও জানে না কিন্তু, দেখলেই রাগ করবে'... হেসে ফেললেন সৌরভ দাস।
তিনি চর্চিত অভিনেতা, বিতর্কিতও বটে। ব্যক্তিগত জীবন ও পছন্দ নিয়ে একাধিকবার নেটিজেনদের ট্রোলিং-এর স্বীকার হয়েছেন সৌরভ। কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় স্কার্ট পরে ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন অভিনেতা। এমন পোশাক নির্বাচন করতে কী বিশেষ সাহস লাগে? এবিপি লাইভকে সৌরভ বলছেন, 'আমি নেটিজেনদের কথা ভেবে অভিনয়ে আসিনি। আমার যেটা ভালো লাগে সেটাই করি। তাতে মানুষ আমায় ভালোবাসেন, আবার ট্রোলিং-ও করেন। সবেরই অধিকার আছে তাঁদের। তবে আমার জীবনটা আমি আমার মতো করেই কাটাব। আমারও তো সেই অধিকার আছে।'
সামনেই একাধিক ছবির মুক্তি, আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে নতুন ছবির শ্যুটিংও। সৌরভ বলেন, 'সামনের মাসেই আমার নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে 'অল্প হলেও সত্যি'। এসভিএফের 'রুদ্রবীণার অভিশাপ' সিরিজটা মুক্তি পাচ্ছে। 'কাটাকুটি' বলে একটি সিরিজও মুক্তি পাচ্ছে। সানি রায়ের 'বিষাক্ত মানুষ'-এর শ্যুটিং চলছে। কোনও চরিত্রের জন্য যে কনও অভিনেতাকেই হোমওয়ার্ক করতে হয়। সৌরভের ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতিটা ঠিক কী? সৌরভ বলছেন, যখন থেকে চিত্রনাট্য পাই তখন থেকেই চরিত্রটা নিয়ে ভাবা শুরু হয়ে যায়। তবে আমরা এতটা সময় বা টাকা কোনোটাই পাই না যে দুটো চরিত্রের মধ্যে ৬-৮ মাসের একটা বিরতি নেব। আমি আমার আসেপাশের মানুষদের মধ্য়েই চরিত্র খুঁজি, তাঁদের থেকেই শিখি। আর বাকিটা কল্পনা।
একাধিক ওয়েবসিরিজে কাজ করেছেন সৌরভ। করোনা পরিস্থিতি মানুষ আরও বেশি করে ওয়েব প্ল্যাটফর্মের দিকেই ঝুঁকছেন। সিনেমার ক্ষেত্রে এই প্রবণতা কী বিপদ ডেকে আনতে পারে? সৌরভ বলছেন, 'বর্তমানে পৃথিবীর বুকে যা চলছে সেটা খারাপ। মানুষ সিনেমাহলে যেতে পারছেননা বলেই মোবাইল, ল্যাপটপকে বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কেবল বাংলা কেন, অনেক বড় বলিউড ফিল্মও ওটিটিতে মুক্তি পাচ্ছে। তবে আমরা সবাই চাই পৃথিবীটা ঠিক হয়ে যাক। সিনেমা, ওয়েবসিরিজ, ধারাবাহিক সব নিজের নিজের রাস্তায় চলুক। এদের কারও সঙ্গে কারও তো বিরোধ নেই।'
কেবল অভিনয় নয়, রাজনীতিতেও নাম লিখেয়েছেন সৌরভ। নির্বাচনের আগেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আপাতত অবশ্য সক্রিয় রাজনীতি থেকে একটু দুরে সরে, শ্যুটিংয়েই ব্যস্ত সৌরভ। দুটো একসঙ্গে চালাতে হলে? অভিনেতা একটু ভেবে বললেন, 'বেশ কঠিন সেটা। আমি থিয়েটার ছেড়েছিলাম সেইজন্যই। দুটো কাজ একসঙ্গে করতে আমার একটু সমস্যা হয়। অভিনয় আমার প্যাশন। আমি এটার জন্য বাঁচি। আমার বাবা-মা বাঁচে আমার এক একটা চরিত্রের জন্য। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো অভিনয় নিয়ে আমার পাগলামিটা কমবে। তখন আমি সক্রিয় রাজনীতির কথা ভাবব।' অনেক সহকর্মীই রাজনীতি আর অভিনয় সামলাচ্ছেন একসঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কেউ কী সৌরভের অনুপ্রেরণা? এক মুহূর্তও না ভেবে সৌরভ উত্তর দিলেন, 'সায়নী। সবসময় যে বড় কারও কথা বলতে হবে এমন নয়। সায়নী ঘোষ আমার অনেকদিনের বন্ধু, আর অবশ্যই, সবসময়ের অনুপ্রেরণা।'
এমন কোনও স্বপ্নের চরিত্র রয়েছে যাতে অভিনয় করতে চান? 'জোকার.. ওই চরিত্রে অভিনয় করা আমার চিরকালের স্বপ্ন', একটু হেসে বললেন সৌরভ।