(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
'পুজোয় ঘুরতে বেরিয়ে মনে হত, মা একা ঘরে বসে আছে'
কলকাতায় বসে আজও স্মরণজিৎ চক্রবর্তী-র মনে হয়, 'বাটানগরের মত পুজো আর কোথাও হয় না।'
কলকাতা: কলকাতার মুদিয়ালী চত্বরে বাড়ির গায়েই পুজো হয়। সারাদিন ঢাকের শব্দ মাঝেমধ্যে যেন বিরক্তই লাগে। মনে পড়ে যায় বাটানগরের দিনগুলোর কথা। খোলা মাঠে বিশাল মণ্ডপ, বন্ধুদের আড্ডা আর যাত্রার আসর। ভিড় এড়িয়ে পুজোর সময় গঙ্গার ধারে বসে থাকতে ভালো লাগত তাঁর। কলকাতায় বসে আজও স্মরণজিৎ চক্রবর্তী-র মনে হয়, 'বাটানগরের মত পুজো আর কোথাও হয় না।'
পুজোর আগে কেনাকাটা করতে যেতে ভালো লাগত না কখনও। কিন্তু নতুন জামার কিনতে যাওয়ার আকর্ষণ ছিল মোগলাই! স্মরণজিৎ বলছেন, 'আমার কখনও ভিড় ভালো লাগে না। দরদামও করতে পারি না। কিন্তু পুজোয় নতুন জামা কিনতে যাওয়ার অন্যতম আকর্ষণ ছিল মোগলাই পরোটা। আমরা ৪ ভাই-বোন মিলে যেতাম। গড়িয়াহাটের একটা দোকান থেকে ২টো মোগলাই ৪ জন ভাগ করে খেতাম। সেই দিনগুলো ভোলার নয়।'
ছোটবেলার পুজো বলতে সকালে বাবার সঙ্গে বাটানগরে ঘুরতে বেরনো আর বিকেলে কাকার সঙ্গে। বায়না করা খাবারের তালিকায় থাকত কোল্ডড্রিঙ্কস, আলুকাবলি, ফুচকার মত একগাদা খাবার। আর ছিল কাঠের নাগরদোলা। স্মরণজিৎ বলছেন, 'পুজোর সময় কখনও আবার ছোট পিসেমশাইয়ের সঙ্গে বাটানগরের ঐতিহাসিক জায়গা, পুরনো বাড়ি দেখতে যেতাম। ওগুলো আমায় খুব টানত। বাটানগরে বড় মাঠের মধ্যে খোলা মণ্ডপ হত। সেখানে সারাদিন ধরে আড্ডা চলত। মাঝেমধ্যে গঙ্গার ধারের শিবমন্দির চত্বরেও যেতাম। সন্ধ্যেয় যাত্রা হত। শহুরে পুজোয় সেই আমেজ আর নেই। তবে পুজোর বেরিয়েও একটা মনখারাপ কাজ করত আমার। মা কখনও পুজো দেখতে বেরতেন না। বাড়িতে বসে থাকতেন। একা আনন্দ করলেও মনে হত, মা বাড়িতে একা আছেন, তাড়াতাড়ি ফিরে যাই। পরবর্তীকালে পুজোর বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতেই কাটিয়েছি। এমনকি পড়াশোনাও করেছি।'
কলকাতায় এসে পুজোর সময় ঠাকুর দেখার চেয়ে মানুষ দেখা বেশি পছন্দ স্মরণজিতের। বলছেন, 'আমার পাড়ায় প্রচুর ঠাকুর হয়। কত মানুষ আসেন.. কারও পায়ে ফোস্কা, কারও গলায় ডিএসএলআর, কেউ রেগে গিয়েছেন, কেউ হারিয়ে গিয়েছেন। আমি এগুলো দেখি। অত ভিড়ে ঠাকুর দেখা আমার পোষায় না। তবে একবার মনে আছে, সপ্তমীর সন্ধেবেলা চুরমুর কিনতে বেরিয়েছি। বাড়ির কাছেই। হঠাৎ চোখে পড়ল, ফুটপাতে একটা ছেলে শুয়ে আছে। গায়ে জামা নেই, ছেঁড়া প্যান্ট। হাতে একটা বেলুন। এখনও চোখ বন্ধ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দৃশ্যটা। প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে, সত্যিই কি পুজো আনন্দের?'