ABP Exclusive: 'বাস্তবে শ্রীময়ী হলে, রোহিতকে বিয়ে করায় কোনও দোষ দেখতাম না'
নিজের সুখের জন্য সংসার ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন এক মধ্যবয়সী গৃহবধূ! কেবল বাস্তব জীবন কেন, পর্দাতেও এই নজির অমিলই বলা চলে। কিন্তু যুগ পাল্টাচ্ছে, বদলাচ্ছে চিন্তাধারাও।
কলকাতা: কেউ খুশি, কেউ নেহাত মেনে নিতে পারছেন না। নিজের সুখের জন্য সংসার ছেড়ে অন্য কারও সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন এক মধ্যবয়সী গৃহবধূ! কেবল বাস্তব জীবন কেন, পর্দাতেও এই নজির অমিলই বলা চলে। কিন্তু যুগ পাল্টাচ্ছে, বদলাচ্ছে চিন্তাধারাও। আর সেই বদলকেই যেন গল্পের মোড়কে পর্দায় তুলে আনার সাহস দেখাল 'শ্রীময়ী'। জনপ্রিয় এই ধারাবাহিকের গল্প চিরচারিত ভাবনার একেবারে উল্টোপথে হেঁটে বার্তা দিল, 'প্রত্যেক মানুষেরই সুখী হওয়ার অধিকার রয়েছে। কেউ কষ্ট পেতে পৃথিবীতে আসে না।'
ধারাবাহিকের গল্পে আপাতত শ্রীময়ী আর রোহিত সেনের বিয়েতে নতুন মোড়। দর্শকদের কাছে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া পাচ্ছেন শিল্পীরা। মঙ্গলবার বিকেলে এবিপি লাইভের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেই অভিজ্ঞতাই ভাগ করে নিচ্ছিলেন ইন্দ্রাণী। বিবাহ পর্বের শ্যুটিং শেষ হয়ে, চালু হয়ে গিয়েছে টেলিকাস্টও। ইন্দ্রাণী বলছেন, 'আমারা দর্শকদের কাছে এতটাই জীবন্ত যে তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতামত দিয়ে থাকেন। একটা কেন হল, ওটা কেন হল না... ধুতিটা লাল না হলুদ, শাড়ীটা এমন হলে ভালো হত। সেটে এগুলো নিয়ে আমরা হাসাহাসি করি। তবে দর্শকদের এই মতামত খুব জরুরী। ধারাবাহিকের গল্পে শ্রীময়ী অনেক কিছু পেরিয়ে তারপর রোহিত সেনের সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্তটা ভীষণ সাহসী পদক্ষেপ। ভেবেছিলাম দর্শকেরা সমর্থন করবেন না। তবে এখন দেখছি, মানুষ ভালোবাসছেন। তাঁরা শ্রীময়ী রোহিতের বিয়েতে খুশি। সমর্থনের পাল্লাটাই ভারী।'
শ্রীময়ী একা নয়, পর্দার মতই তাঁর সঙ্গে হাজির ছিলেন রোহিত সেন ওরফে টোটা রায়চৌধুরীও। কথার শুধু করলেন, 'ইন্দ্রাণী ঠিকই বলছে' বলে। তারপর বললেন, 'আমায় একজন বলেছিলেন, 'গত ২০ বছরে বাংলা ধারাবাহিকে এত সাহসী কোনও পদক্ষেপ দেখানো হয়নি। একজন মধ্যবয়সী নারী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব পালন করেও যে নিজের সুখে থাকাটা বেছে নিচ্ছেন, এই বার্তাটা অনবদ্য। শ্রীময়ীর গল্পেও হঠাৎ করে সে রোহিতকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিভিন্ন পরিস্থিতি কার্যত এই সিদ্ধান্তের দিকেই তাকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা কেউ দুঃখ পাওয়ার জন্য জন্মাইনি। কাউকে দুঃখ না দিয়েও যদি নিজে খুশি থাকা যায়, তাতে অপরাধ কোথায়? মানুষের মানসিকতা বদলাচ্ছে, যুগ বদলাচ্ছে। সেই বদলকেই তো দেখাতে চেয়েছে শ্রীময়ী।'
এ তো ধারাবাহিকের গল্প। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে কতটা প্রভাব ফেলেছে রোহিত-শ্রীময়ী? টোটা বলছেন, এমন ধারবাহিকে কাজ করার সুযোগ খুব কম হয় যা মানুষের বাস্তব জীবনেও আলোড়ন ফেলতে পারে। কেবল বাংলা নয়, শ্রীময়ী ৬টি ভাষাতে অনুবাদ করা হচ্ছে। তার মধ্যে একটা হিন্দি। বলাই যায়, জাতীয়ভাবে ধারাবাহিকটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটা কেবল ধারাবাহিক নয়, একটা আন্দোলন। আর এটা শুরু হয়েছে দুই বঙ্গকন্য়ার হাত ধরেই। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আর ইন্দ্রাণী..' টোটাকে থামিয়ে দিয়ে ইন্দ্রাণী বলে উঠলেন, 'এটায় আমার ঘোর আপত্তি। তুমি একটু বেশি বিনয়ী হয়ে যাচ্ছো। কেবল আমরা না, ধারাবাহিকে যত জন অভিনয় করেন, এমনকি সমস্ত ক্রুদেরও অবদান রয়েছে শ্রীময়ীর সাফল্যের পিছনে।'
ধারাবাহিকের মত আলাপচারিতাতেও বেঁধে বেঁধে রইলেন রোহিত-শ্রীময়ী। পর্দার বাইরেও তাঁদের মসৃণ বোঝাপড়া। শটের ডাক পড়ায় তড়িঘড়ি উঠে পড়লেন টোটা। তাঁর সুরেই শেষ করলেন ইন্দ্রাণী। তাঁর কথায়, 'আমার ব্যক্তিগত জীবন যদি শ্রীময়ীর মত হত, আর সেখানে যদি রোহিত সেনের মত একজন বন্ধু থাকতেন, তাহলে তাঁকে বিয়ে করার মধ্যে কোনও অপরাধ আমি দেখতাম না।'