এক্সপ্লোর
Advertisement
১ অক্টোবর হল খোলার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর, বিশদ নির্দেশিকার অপেক্ষায় বিনোদন দুনিয়া, বাড়বে কি টিকিটের দাম?
দীর্ঘ বিরতির পর ঠিক কী কী বদল ঘটিয়ে আমজনতার জীবনে ফিরবে বিনোদন? কী ভাবছেন প্রযোজক, হলমালিক থেকে শুরু করে সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা? খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ।
কলকাতা: প্রায় ৬ মাস অন্ধকার হয়ে পড়ে রয়েছে বিনোদন মঞ্চ। স্থবির রুপোলি পর্দা। করোনাকালে দীর্ঘ ছেদ পড়েছে বিনোদন দুনিয়ায়। আনলক পর্বে ধীরে ধীরে শ্যুটিং চালু হলেও তা স্বাভাবিকত্ব হারিয়েছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে কলাকুশলীদের সংখ্যা। শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্যুইট অবশ্য আশার সঞ্চার করেছে। ১ অক্টোবর থেকে সিনেমা হল, থিয়েটার, সাংস্কৃতিক সমস্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চ খোলার কথা ঘোষণা করেছেন মু্খ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ বিরতির পর ঠিক কী কী বদল ঘটিয়ে আমজনতার জীবনে ফিরবে বিনোদন? কী ভাবছেন প্রযোজক, হলমালিক থেকে শুরু করে সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা? খোঁজ নিল এবিপি আনন্দ।
করোনা আবহে আটকে রয়েছে বহু ছবির মুক্তি। হল খোলার ঘোষণা শুনে এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা-ডিরেক্টর মহেন্দ্র সোনি বলছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটা একটা বিশাল স্বস্তির খবর। তবে এই নিয়ম গোটা দেশ জুড়ে কার্যকর না হলে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছি। এসভিএফ আপাতত বিশদ নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছে। সমস্তরকম নিয়মবিধি মেনেই আমরা ছবি মুক্তির কথা ভাবব।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আগামীকাল ছবি মুক্তি-সহ অন্যান্য সুরক্ষাবিধি নিয়ে বৈঠকে বসবে এসভিএফ সংস্থা।
অন্যদিকে, প্রিয়া সিনেমাহলের মালিক অরিজিৎ দত্ত বলছেন, 'এখনও সরকারিভাবে কোনও নির্দেশিকা পাইনি। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে ১ তারিখ থেকে হল খোলার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো ব্যবস্থার প্রয়োজন।' প্রায় একই কথা জানানো হল অন্যতম জনপ্রিয় একটি মাল্টিপ্লেক্স সিনেমাহলের তরফেও। সেই সংস্থার মুখপাত্র বললেন, 'সরকারি নির্দেশিকা এলেই সমস্ত ব্যবস্থা করা হবে। আপাতত বিশদ নির্দেশিকার অপেক্ষায় আমরা।' রাজ্যে বেশ কয়েকটি নামী সিনমাহলের মালিক হিমাংশু ধানুকা বলছেন, 'সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাল্টিপ্লেক্সের জন্য এই সিদ্ধান্ত খুবই উপকারী। সংখ্যা বেঁধে দিলেও শো চালু করতে পারে শহরের মাল্টিপ্লেক্সগুলি। তবে সিঙ্গল স্ক্রিনের সিনেমাহলের ক্ষেত্রে ৫০ জন দর্শক নিয়ে শো শুরু করা এই মুহূর্তে একটু কঠিন। দর্শকদের সংখ্যা শতাংশে বেঁধে দিলে অবশ্য কিছুটা হলেও আশা রয়েছে।'
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাড়তে পারে কি টিকিটের দাম? হিমাংশু বলছেন, 'মাল্টিপ্লেক্সের টিকিটের দাম দিন বা ছবির ওপর নির্ভর করে। সপ্তাহান্তে বড় ছবি মুক্তি পেলে তার টিকিটের দাম বেশি হয়। তাই পুজোর সময় হল খুললে মাল্টিপ্লেক্স টিকিটের দাম বাড়াতে পারে। কিন্তু সিঙ্গল স্ক্রিনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখতে হবে টাকার অঙ্ক।' সেই সঙ্গে হিমাংশু যোগ করলেন, 'যতদিন না সারা ভারতে সিনেমাহল খোলার খোলার নির্দেশিকা আসবে, ততদিন বলিউড ফিল্ম মুক্তি পাবে না। সুতরাং শুধু বাংলা ছবি ও ৫০জন দর্শক নিয়ে সিনেমাহল চালানো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে। নির্দিষ্ট সংখ্যক দর্শককে অনুমতি দিয়ে গোটা দেশের সিনেমাহল যদি খোলা হয়, তাহলে হলমালিক ও প্রযোজনা সংস্থা কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।'
কেবল সিনেমাহলে শো নয়, অনুমতি পেয়েছে গান, নাটক, ম্যাজিক শো, ও আবৃত্তির মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়ে গায়ক রুপঙ্কর বাগচী বলছেন, 'সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রচুর মানুষ। কেবল যাঁরা মঞ্চে থাকেন তাঁরাই নয়, তাঁর বাইরেও বহু মানুষের এটাই রুজিরুটি। করোনা আবহে এতদিন সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। সামনে পুজো। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা মেনে অনুষ্ঠান চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।'
খুশির ছোঁয়া সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রের গলাতেও। পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। এবিপি আনন্দকে লোপামুদ্রা বললেন, 'আমি খুব খুশি। আমাদের হয়ত কিছুটা অন্যায় আবদারই ছিল। কিন্তু আপাতত ৫০ জনকে নিয়ে শো শুরু করার নির্দেশিকাই যথেষ্ট। কোভিড পরিস্থিতিতে অনেকেই অর্থাভাবে রয়েছেন। ভেবে ভাল লাগছে আবার সবাই শো করবেন। আমি, আমার মিউজিশিয়ানরা তো সবাই তৈরি। কেউ ডাকলেই যাব।'
নাটকের মঞ্চ অনুমতি পেলেও নাট্যকর্মীদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে চিন্তিত নাট্যকার কৌশিক সেন। বললেন, 'ট্রায়াল হিসাবে এটা ভালো পদক্ষেপ। কিন্তু ৫০ জনের সংখ্যাটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কলাকুশলী ও ক্রু ৫০ জন, নাকি দর্শক সংখ্যা ৫০, তা স্পষ্ট নয়।’ কৌশিক যোগ করলেন, ‘দীর্ঘদিন থিয়েটার বন্ধ থাকার ফলে কার্যত অনাহারে রয়েছে বহু নাট্যকর্মী। আমরা নিজেদের উদ্যোগে যতটা সম্ভব সাহায্য করছি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, বিশেষ করে নাট্যকর্মীদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার। এখন তো পুরোহিতরাও ভাতা পাচ্ছেন। দুর্গাপুজোয় বহু ক্লাব টাকা পাচ্ছে। সেখান থেকে খরচা কমিয়ে থিয়েটার কর্মীদের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা যেত।' মঞ্চ খোলা নিয়ে কৌশিকের মন্তব্য, 'এতদিন ধরে হলগুলো বন্ধ পড়ে রয়েছে। কেবল মঞ্চ খোলা নয়, সেগুলিকে সঠিকভাবে পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ করতে হবে। আর প্রয়োজনে বদলে ফেলতে হবে থিয়েটারের ধরন।’
অন্যদিকে নাট্যব্যক্তিত্ব তথা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলছেন, 'থিয়েটারের কথা ভেবে মঞ্চ খুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে ৫০ জনকে নিয়ে শুরু হচ্ছে নাটক। এটা একটা আপদকালীন পরিস্থিতি। আর অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতি হয়েছে সমস্ত ক্ষেত্রেরই। থিয়েটারও তার বাইরে নয়। তাই থিয়েটার শুরু হলেও কতটা টাকা উঠবে তা নিয়ে আপাতত সংশয় থাকছে।'
বিনোদনের (Entertainment) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
কলকাতা
খবর
খবর
জেলার
Advertisement