বহু বছর পর মুক্তি পেল পুজোর অ্যালবাম, রূপঙ্কর-রাঘব-ইমন-শুভমিতার গানে ফিরল নস্টালজিয়া
পুজোর গানের আলব্যামের ঠাঁই এখন স্মৃতির মণিকোঠায়। তবে এবারের পুজোয় বাঙালির সেই স্মৃতিমেদুরতাকে নতুন করে উস্কে দিলেন সুরকার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত।
কলকাতা: একসময় পুজোর গান ছিল পুজোর আরেকটি অঙ্গ। অনেকটা শারদীয়া পুজোবার্ষিকীর মতোই। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অভ্যাসে বদল এসেছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে পরিবর্তন এসেছে অনেকটাই। আমাদের জীবন-যাপনে নতুন মোড় এসেছে। তবে পরিবর্তনের যুগে ফের সেই লিস্টে যুক্ত হয়েছে পুজোর গানও। পুজোর গানের প্রকাশে এখন নতুন হাওয়া। তনবে সেই আগের মতোই পুজোর গানের অ্যালবাম এবার রিলিজ হল।
সঙ্গীতজগতের অনেকের মতে এখন শিল্পীরা যে যাঁর নিজের মত একটা করে পুজোর গান গেয়ে ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেন। পুজোর গান প্রকাশের এখন যেন সেটাই নতুন চল। পুজোর গানের আলব্যামের ঠাঁই এখন স্মৃতির মণিকোঠায়। তবে এবারের পুজোয় বাঙালির সেই স্মৃতিমেদুরতাকে নতুন করে উস্কে দিলেন সুরকার এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। পুজোয় গান রিলিজের পুরনো রীতিকে নতুন করে ফিরিয়ে আনতে তিনি বানিয়ে ফেলেছেন গোটা একটা পুজোর আলব্যাম।
এই আলব্যামে ঠাঁই পেয়েছে ৬টা নিখাদ বাংলা গান। ছ'টা গানেরই সুর বেঁধেছেন ইন্দ্রদীপ নিজে। গানগুলি লিখেছেন রিতম সেন, শ্রীজাত এবং সুব্রত বারিসওয়ালা। গানগুলি গেয়েছেন সঙ্গীত জগতের নামী-দামি শিল্পীরা। শান, মোনালি ঠাকুর, রূপঙ্কর বাগচী, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, শুভমিতা এবং ইমন চক্রবর্তী। সম্প্রতি পুজোর আলব্যামটি মুক্তি পেয়েছে। আলব্যামটির নামই দেওয়া হয়েছে 'পুজোর গান'। মুক্তির দিন সকল শিল্পীরাই উপস্থিত ছিলেন।
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর কথায়, "নন-ফিল্মি গানের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অ্যালবাম তো আমরা আর কেউ করিই না। সোশ্যাল মিডিয়া এসে সব ওলট-পালট করে দিয়েছে। বহু বছর পর বিশেষ করে পুজোতে আবার আলব্যামের জন্য গান বেঁধে সত্যি খুব ভাল লেগেছে। এরজন্য ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য শ্যাম স্টিলের। ওদের উদ্যোগেই আবার পুজোয় আলব্যাম রিলিজ সম্ভব হল। বাটারফ্লাই ফিল্মস এবং মিউজিকের অবদানও অনেক।"
তবে সুরকারের গলায় ছিল অনুযোগের সুরও। ইন্দ্রদীপ বলেন, "অ্যালবাম মানেই সেখানে বলিউড শিল্পীকে রাখতে হবে, এমন মনোবভাব থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। পরের বছর আলব্যামের সবকটা গানই যেন বাংলার শিল্পী রাই গাইতে পারেন, আমাদের সেই পথ করে দিতে হবে। আর অবশ্যই আমাদের নন-ফিল্মি গানের সংখ্যা বাড়াতে হবে।" অন্যদিকে, ইন্দ্রদীপের সুরে পুজোর আলব্যাম গান গেয়ে খুশি সমস্ত শিল্পীরাই। ইমন বলেন, "ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্দ্রদীপদাকে আমি গুরু মানি। আমি যে ধারার গান গাই, তার থেকে একদম অন্য ধারার গান উনি আমায় দিয়ে গাইয়ে নিয়েছেন। এই গানটা গাওয়ানোর আগে আমায় ইন্দ্রদীপদা বলেছিল,' দিনরাত তো ফ্যাশন করেই বেড়াস, এবার হারমোনিয়াম নিয়ে বসে এই গানটা তুলে নে।' কতটা পারলাম, আপনারা বলবেন।"
শুভমিতা অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তকে আগে তিনি বেশ ভয়েই পেতেন। এখন অবশ্য কাজ করতে করতে সেই ভয় অনেকটাই কেটে গেছে। তাঁর কথায়, "একটু ভুলচুক হলেই আই ডি বকাবকি করতেন। ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এখন অবশ্য আমরা অনেকটাই বন্ধু হয়ে উঠেছি।" বহু বছর পর পুজোর আলব্যাম গান গাইতে পেরে রাঘব চট্টোপাধ্যায় এবং রূপঙ্কর দুজনেই খুশি। তাঁরা দুজনেই অনেক দিন পর নন-ফিল্মি গানে ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁরা কাজ করলেন। দু'জনেই সুরকারের গুণমুগ্ধ। এই অ্যালবামের ছ'টি গানই ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে। 'পুজোর গান'-এ বাঙালির পুজো এবার জমজমাট।