গরমে খারাপ এসি, দর্শকদের অনুরোধে মঞ্চস্থ স্বপ্নসন্ধানীর নতুন নাটক
দর্শক ভর্তি হলে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। অনেক চেষ্টার পরে শেষ পর্যন্ত অভিনয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল গোটা দল। কিন্তু দর্শকদের সেই কথা বলতেই শুরু প্রবল আপত্তি। 'স্বপ্নসন্ধানী'-র নতুন নাটক 'কবির বন্ধুরা' মঞ্চস্থ হওয়ার ঘটনা বোধহয় চিরকাল মনে থাকবে কৌশিক সেন, ঋদ্ধি-সহ গোটা দলের।
কলকাতা: নতুন নাটক মঞ্চস্থ হবে প্রথমবার। যতই পেশাদার হোক না কেন, তবু উচ্ছাস, উদ্বেগ ঘিরে রয়েছে কলাকুশলীদের। মঞ্চ থেকে মেকআপ, সবই তৈরি ছিল। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন। দর্শক ভর্তি হলে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র। অনেক চেষ্টার পরে শেষ পর্যন্ত অভিনয় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল গোটা দল। কিন্তু দর্শকদের সেই কথা বলতেই শুরু প্রবল আপত্তি। 'স্বপ্নসন্ধানী'-র নতুন নাটক 'কবির বন্ধুরা' মঞ্চস্থ হওয়ার ঘটনা বোধহয় চিরকাল মনে থাকবে কৌশিক সেন, ঋদ্ধি-সহ গোটা দলের।
আজ নিজের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ওয়ালে লম্বা পোস্ট করে গোটা ঘটনাটি লেখেন ঋদ্ধি সেন।
অভিনেতা লিখেছেন, 'স্বপ্নসন্ধানীর নতুন নাটক কবির বন্ধুরার প্রথম অভিনয়, প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ , সন্ধ্যে ৬.৩০টায় শুরু হওয়ার কথা নাটক, ঠিক ৫.৫০ বাজার সময় জ্ঞান মঞ্চের ACটি বার্স্ট করলো l প্রায় সব দর্শক উপস্থিত , AC কখন ঠিক হবে কেউ বলতে পারছে না l নতুন মোটর এসে কানেকশন পরীক্ষা করে পাওয়ার আনতে আরও এক থেকে দেড় ঘন্টা, তাও কোনো নিশ্চয়তা নেই যে নতুন মোটর লাগালেই চলে আসবে কানেকশন , হয়তো উল্টে সব পাওয়ার টেনে নিয়ে ব্লাক আউট হয়ে যেতে পারে প্রেক্ষাগৃহ l আমরা ভাবলাম অভিনয় বন্ধ করতে হবে , প্রথম অভিনয় cancel l কিন্তু অনিশ্চিত হলেও , হলের লোক আর আমাদের নাট্যদলের সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পাওয়ার আনার, কিন্তু যখন সন্ধ্যে ৭টা অতিক্রম করে গেলো তখন সত্যি মনে হলো আজ আর অভিনয় করা যাবে না , দর্শকের কাছে গিয়ে বাবা সহ আরও দলের সদস্যরা ক্ষমা চেয়ে যখন জিজ্ঞেস করলেন যে আজকের অভিনয় বন্ধ করা উচিত কিনা, তখন সমস্বরে প্রত্তেকজন দর্শক দৃঢ় ভাবে বলে উঠলেন যে নাটক কিছুতেই বন্ধ হবে না , তাঁরা AC ছাড়াই আজকের অভিনয় দেখবেন l তখন বাজে ৭.৩০ , শুরু করা হলো দুই ঘন্টা চল্লিশ মিনিটের নাটক l এবং আমাদের সক্কলের টেলিপ্যাথি আর চেষ্টার জোরে ঠিক ৭.৪০’এর মধ্যে ফিরে এলো নতুন মোটরের মাধ্যমে AC ‘র কানেকশন l অভিনয় শেষ হলো নির্ধারিত সময়ের এক ঘন্টা পর, ১০.৩০টা l তখনও প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ l গোটা নাটকের অভিনয়ের সময় ছিলো ‘pin drop silence ‘ l এই অভিজ্ঞতা কখনো ভুলব না l কলকাতা শহরের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা আবার বেড়ে গেলো , আবার নতুন করে শিখলাম দর্শক কিভাবে হতে হয় , ১ এপ্রিল , জ্ঞান মঞ্চে আসা প্রত্যেকটি দর্শকের বিশ্বাস আর সাহস যদি আমরা না পেতাম , তাহলে সত্যি প্রথম অভিনয় cancel করতে হতো l তারাও সেদিন হয়ে উঠেছিলো আমাদের নাটকের অংশ, প্রমান পেলাম যে সহনশীলতা আর সহানুভূতি নামক শব্দগুলি এখনও হারিয়ে যায়নি l সেদিন আসা প্রত্তেকজন দর্শককে আমাদের প্রণাম এবং ভালোবাসা l এই ছবিটা নাটকের পর তোলা , সেই হাসি মুখগুলো , যারা সেদিন পরিস্থিতির চাপ ভুলে বিশ্বাস করেছিলো যে আজকে প্রথম অভিনয় হবেই।' (বানান অপরিবর্তিত)
শুধু ঋদ্ধি নয়, দর্শকদের উষ্ণতা পেয়ে আবেগে ভেসেছে গোটা স্বপ্নসন্ধানী। ঋদ্ধির পোস্টে তাই কমেন্ট, শেয়ারের বন্যা। পোস্টের সঙ্গে অভিনেতা শেয়ার করেছেন গোটা টিমের ছবি। সেই ছবিতে সবার মুখে সাফল্যের হাসি, জয়ের আনন্দ।