Music Festival: কলকাতা ভাসল সুরের মূর্ছনায়, সম্পন্ন হল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'
'Swara Samrat Festival': ১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর কলকাতার নজরুল মঞ্চ কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ ফাইনাল-জ্বরও কাবু করতে পারেনি কলকাতার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রীতিকে।
কলকাতা: শীতের মরসুমে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উষ্ণতায় আরও একবার গা গরম করল শহর কলকাতা। আর সেই সুযোগ করে দিল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল' (Swara Samrat Festival)। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের (Classical Music) মূর্ছনায় গা ভাসানোর সুযোগ বিগত দশ বছর ধরে কলকাতাকে (Kolkata) দিয়ে আসছে এই ফেস্টিভ্যাল।
কলকাতা ভাসল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'-এর সুরের মূর্ছনায়
এই উৎসবের কাণ্ডারি এক গুণী শিল্পী। স্বয়ং সরোদ বাদক পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। তেজেনবাবুর শ্রী রঞ্জনি ফাউন্ডেশন এই স্বর সম্রাট উৎসবের আয়োজক। এই বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর নজরুল মঞ্চে বসেছিল শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর। এই বছর আলি আকবর খাঁ সাহেবের শতবর্ষ পূর্তি। সেই কথা মাথায় রেখে নতুন ভাবে ডালা সাজিয়েছিল 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'। এই প্রথম দেশের চারটে শহরে বসছে স্বর সম্রাটের আসর। আগেই অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছে দিল্লিতে। সদ্য শেষ হল কলকাতায়। পরের বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইতে।
১৫ থেকে ১৮ ডিসেম্বর কলকাতার নজরুল মঞ্চ কানায় কানায় ভরে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ ফাইনাল-জ্বরও কাবু করতে পারেনি কলকাতার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রীতিকে। শেষ দিনও নজরুল মঞ্চে ছিল ঠাসা শ্রোতার ভিড়। শেষ দিনের শেষে শিল্পী ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। সঞ্চালিকা মধুমন্তী মৈত্র মজা করে ঘোষণা করেছিলেন 'আজ এসি (অর্থাৎ অজয় চক্রবর্তী) ভার্সাস মেসি'! নজরুল মঞ্চের ভেতর কিন্তু 'এসি'-রই জয় হয়েছিল। সাধে কি উস্তাদ জাকির হুসেন এবার বাজানোর আগে বললেন 'আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিমণ্ডলে একটা কথার রেওয়াজ আছে, যদি কোনও শিল্পী একবার কলকাতার মন জয় করতে পারে, তাহলে সে সারা বিশ্বের মন অনায়াসেই জয় করে ফেলতে পারবে।' কলকাতা এবারও সেই কথার সাক্ষ্য বহন করে চলল।
এই বছর স্বর সম্রাটে চাঁদের হাট বসেছিল। চারদিনের উৎসবে কিংবদন্তি শিল্পীদের আনাগোনা। প্রথম দিনের তালিকায় ছিলেন উস্তাদ রাশিদ খান, বিশ্বমোহন ভট্ট, এল সুব্রহ্মণ্যমের মত গুণী শিল্পীরা। দ্বিতীয় দিনে উৎসব আলো করেছিলেন তবলার ঈশ্বর স্বয়ং জাকির হুসেন এবং সেতার বাদক নীলাদ্রি কুমার। এই দুজনের যুগলবন্দি কলকাতা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছে। দর্শক আসনেও সেই দিন ছিলেন তাবড় তাবড় গুণী শিল্পীরা। কৌশিকি চক্রবর্তী, তন্ময় বোস, জয় সরকার, শুভমিতা, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য এবং আরও অনেকে। তবলার ঈশ্বরকে দেখতে আর শুনতে সেদিন নজরুল মঞ্চে তিল ধরার জায়গা ছিল না। এবারের উৎসবে আরও এক গুণী উদীয়মান শিল্পীকে পেল কলকাতা। তিনি সরোদ বাদক ইন্দ্রায়ুধ মজুমদার। ওঁর বাবাই যে স্বয়ং তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। তৃতীয় দিন ছিল একটু বিশেষ। সেই দিন বাজালেন আলি আকবর খানের পুত্র আলম খান। বহু বছর পর আবার তিনি কলকাতায় বাজালেন এবং নিঃসন্দেহে মন জয় করে নিলেন শ্রোতাদের। ছিলেন উল্লাস কশলকর, বিদুষী কলা রামনাথ। শেষ দিনের চমক বাঁশি বাদক হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া এবং অজয় চক্রবর্তী। সঙ্গে অবশ্যই তবলা বাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং বেনারস ঘরানার বিদুষী মালিনী আওয়াস্তি। হরিজির বয়স এখন ৮৫। কিন্তু কে বলবে! বাঁশির সুরের জাদুতে কলকাতাকে বুঁদ করে রাখলেন কয়েক ঘণ্টা। হরিজিও কলকাতা অন্ত প্রাণ। কলকাতার দর্শকের অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেন তিনি।
আরও পড়ুন: Akorik: কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হবে ঋতুপর্ণার ছবি 'আকরিক'
শেষ হল কলকাতায় 'স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল'। আবার এক বছরের অপেক্ষা।