ABP Exclusive: নিউমোনিয়া থেকে শিশুদের দূরে রাখবেন কীভাবে? কী পরামর্শ চিকিৎসকদের
Prevent Pneumonia: সদ্যোজাতদের মধ্যে নিউমোনিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি সর্বাধিক। কীভাবে এই সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্ভব, উত্তর দিলেন ডাঃ সৌমিত্র দত্ত, ডাঃ অপূর্ব ঘোষ, ডাঃ জয়দেব রায়
কলকাতা: পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ৫০ সেকেন্ডে নিউমোনিয়ায় (Pneumonia) আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে ১ জন শিশুর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র (WHO) ২০১৭ সালের হিসেবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত (Pneumonia Affected) হয়ে প্রতি বছর ৮ লক্ষেরও বেশি শিশু প্রাণ হারায় (Child Death)। ২০১৯ সালে বিশ্ব জুড়ে শিশু ও বয়স্ক মিলিয়ে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষের। অঙ্কের হিসেব ভয়াবহ হলেও সবচেয়ে বেশি অবহেলা করা হয় এই রোগকে।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন আগেভাগে সতর্ক হলেই অনেকাংশেই রুখে দেওয়া যায় এই সাংঘাতিক রোগ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌমিত্র দত্ত জানিয়েছেন, 'জন্মের পরে শুধুমাত্র মাতৃদুগ্ধ পান করেই শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া অনেকাংশ ঠেকানো সম্ভব' অর্থাৎ শিশুকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধই খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ভাইরাসঘটিত বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত এই দু-রকম নিউমোনিয়া হতে পারে। ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়াও রয়েছে তালিকায়। তবে এদের আবার রকমফেরও রয়েছে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus Pneumoniae) নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ নিউমোনিয়া (Pneumoniae) রোগের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
নিউমোনিয়া প্রতিরোধে টিকাকরণের (Pneumonia Vaccine) গুরুত্ব কী? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়দেব রায় জোর দিয়েছেন টিকা করণের ওপরেই। নিউমোনিয়া রুখতে টিকাকরণই যে গুরুত্বপূর্ণ দিক সেকথাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এ সম্পর্কে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন। ডিপথেরিয়া ও HIB টিকা এবং নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুর রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বেসরকারিভাবে বাজারে ৩ ধরনের নিউমোনিয়া টিকা রয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনও খুবই কার্যকর। পারটুসিস (হুপিং কাশি), হাম, হেমফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি সংক্রমণ (HIB), রোটা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ টিকা সকলকেই দেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডাঃ অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, 'তবে বেশকিছু ভাইরাল নিউমোনিয়া (Pneumonia) যেমন RSV, Corona Virus (কোভিড-১৯ নয়), রয়েছে যার প্রতিরোধে এখনও কোনও টিকা আবিষ্কার হয়নি। সদ্যোজাতদের ক্ষেত্রে হুপিংকাশি থেকে নিউমোনিয়া সংক্রমণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধেরও কোনও উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে সদ্যোজাতর আশেপাশে যাঁরা আসেন তাঁদের কিছু নিয়ম মানা জরুরি। যার মধ্যে মাস্ক পরা, প্রয়োজনীয় টিকাকরণ অন্যতম।
উল্লেখ্য, এতদিন শুধুমাত্র বেসরকারিভাবেই সদ্যোজাতদের PCV (নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন) দেওয়া যেত। তা ছিল বেশ খরচসাপেক্ষ। তবে এখন সদ্যোজাতদের নিউমোনিয়ার টিকাকেও সরকারি টিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিউমোনিয়ায় রাজ্যে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে গত ৩ নভেম্বর থেকে সরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদ্যোজাতদের নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (PCV) দেওয়া শুরু হয়েছে। ২৯ অক্টোবর এক নির্দেশিকা জারি করে একথা জানায় রাজ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর। তারপরই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে সদ্যোজাতদের নিউমোনিয়া টিকাকরণ।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, 'RSV ভাইরাস থেকে যে সংক্রমণ হয় তার কোনও প্রতিষেধক এখনও নেই। জলপাইগুড়ি, মালদাতে RSV ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তবে ইতিমধ্যেই একটি গবেষণামূলক পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রসূতি অবস্থায় মাকে এই RSV টিকা দেওয়া হবে। জন্মের পর তা থেকেই সুরক্ষা পাবে সন্তান।'
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়দেব রায়ের কথায় শিশু হোক বা বয়স্ক, নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। আপাতভাবে কী কী সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন? চিকিৎসক জয়দেব রায় জানালেন,
- পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
- হাত ধোওয়ার মতো সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
- ফুসফুসের এপিথেলিয়াল কোষ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন-এ (Vitamin-A)। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে ভিটামিন-এ খাওয়ানো যেতে পারে।
- বাড়ির পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা।
- ঘরোয়া বায়ুদূষণ (Air Polution) কমানো।
- বাড়িতে উনুন বা রান্নার ধোঁয়া, সিগারেটের ধোঁয়া, ধুলো-ময়লা থেকেও ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
- বিশুদ্ধ পানীয় জল, শৌচালয়ের সু-ব্যবস্থা।
- মাস্কের ব্যবহার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা।
- ভিড় থেকে ছোটদের দূরে রাখা।
- অসুস্থ ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
মূলত শিশুদের নিউমোনিয়ার (Pneumonia) কবল থেকে রক্ষা করতে গ্লোবাল কোয়ালিশন এগেনস্ট চাইল্ড নিউমোনিয়া ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর দিনটিকে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেই সময় বিশ্বে ৫ বছরের কম বয়সিদের নিউমোনিয়ায় বাৎসরিক মৃত্যু ছিল প্রায় ১২ লক্ষ। গত ১১ বছরে সচেতনতা কিছুটা বাড়ায় মৃত্যু হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা গেছে। আগামী ২০২৫ সালে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে তিনের নীচে নামিয়ে আনাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের লক্ষ্য।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )