এক্সপ্লোর

Kedarnath Tour: হিমালয় দর্শনের বাসনা, সঙ্গে পুণ্য অর্জন চান? এবার ভ্রমণ হোক কেদারনাথ

Kedarnath: কেদারনাথ ভ্রমণের ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। তবে হেঁটে কেদারনাথে যাওয়া সহজ নয়। রীতিমতো পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার অভ্যাস থাকা দরকার। না হলে মাঝপথে দমের ঘাটতি হয়, পায়েও চাপ পড়ে।

কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন অনেকের কাছেই স্বপ্নের জায়গা কেদারনাথ। বিশেষ করে প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও সারা আলি খানের ছবি ‘কেদারনাথ’ উত্তরাখণ্ডের এই জায়গাটিকে নেটিজেনদের কাছে বিখ্যাত করে তুলেছে। তবে বাঙালির কাছে কেদারনাথ মোটেই নতুন কোনও তীর্থক্ষেত্র না। বছরের পর বছর ধরে বাঙালি তীর্থযাত্রীরা কেদারনাথে যাচ্ছেন। এমনকী, সত্যজিৎ রায়ের রহস্য উপন্যাস ‘এবার কাণ্ড কেদারনাথে’-ও শিবঠাকুরের আপন দেশ উঠে এসেছিল। রহস্য সন্ধানে কেদারনাথে যেতে হয়েছিল ফেলুদা, তোপসে ও জটায়ুকে। সেখানে আবার নিজের ছোটকাকা দুর্গামোহন গঙ্গোপাধ্যায়কে খুঁজে পেয়েছিলেন জটায়ু।


Kedarnath Tour: হিমালয় দর্শনের বাসনা, সঙ্গে পুণ্য অর্জন চান? এবার ভ্রমণ হোক কেদারনাথ

চারধাম যাত্রা শুরু হয় কেদারনাথ ধাম দিয়ে তবে অনেকেই চারধাম যাত্রা না করে শুধু কেদারনাথ-বদ্রীনাথ ঘুরেই চলে আসেন। কেউ কেউ আবার শুধু কেদারনাথ যাত্রা সেরেই ফিরে আসেন। এখন আমরা শুধু কেদারনাথ যাত্রা নিয়েই আলোচনা করব। কেদার ভ্রমণের খুঁটিনাটি পাঠকদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

চারধাম যাত্রার প্রবেশপথ হরিদ্বার। গঙ্গার তীরবর্তী এই শহর দিয়েই যেতে হয় কেদারের পথে। হাওড়া স্টেশন থেকে কুম্ভ এক্সপ্রেস, দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার যাওয়া যায়। আবার দিল্লি হয়েও পৌঁছনো যায় হরিদ্বার। বিমানে যেতে হলে হরিদ্বারের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হল দেরাদুন। হরিদ্বার পৌঁছে সেখানে একটি রাত কাটিয়ে পরেরদিন সকালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রওনা হওয়া দরকার। কারণ, শোনপ্রয়াগ বা তার ২ কিলোমিটার আগে সীতাপুর পৌঁছতে গাড়িতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। ঋষিকেশ, দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে সীতাপুর যেতে বিকেল হয়ে যায়। শোনপ্রয়াগে হোটেল থাকলেও, বেশিরভাগ পর্যটকই থাকেন সীতাপুরে। এখান থেকে গৌরীকুণ্ড ৭ কিলোমিটার। শোনপ্রয়াগ থেকে গৌরীকুণ্ড যেতে হয় স্থানীয় জিপে। বাইরের গাড়ি এই পথে যেতে দেওয়া হয় না। সীতাপুরের আশেপাশে নানা মানের ও বাজেটের হোটেল আছে।

কেদারের পথে আসল যাত্রা শুরু হয় গৌরীকুণ্ড থেকেই। এখান থেকে চড়াই পথ শুরু হয়। কেউ হেঁটে, কেউ ঘোড়ায় আবার কেউ দোলায় কেদারনাথের পথে অগ্রসর হন। শুরুতেই ঘোড়া নিলে একেকজনের ২,৩০০ টাকার মতো ভাড়া লাগে। মাঝপথে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে কোনও জায়গা থেকে ঘোড়া নিলে তখন রীতিমতো দরদাম করতে হয়। দোলায় মূলত বয়স্ক বা শিশুদেরই তোলা হয়। এক্ষেত্রেও দরদাম করতে হয়। অনেক বাচ্চাকে আবার ঝুড়িতে বসিয়েও নিয়ে যান স্থানীয় মালবাহকরা।

২০১৩ সালের ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে পর্যন্ত গৌরীকুণ্ড থেকে কেদারনাথের দূরত্ব ছিল ১৪ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু সেই রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার নতুন করে যে পথ তৈরি করা হয়েছে, তাতে দূরত্ব বেড়ে হয়েছে প্রায় ২২ কিলোমিটার। রাস্তার বেশিরভাগ অংশই চড়াই। ফলে যাত্রা একেবারেই সহজসাধ্য নয়, বরং বেশ কঠিন। দীর্ঘ যাত্রাপথে বেশিরভাগ মানুষই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। খাওয়ার জন্যও একাধিকবার থামতে হয়। তাই বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। এই কারণে ভোরবেলা যাত্রা শুরু করা হল। তাহলে সন্ধে নামার আগেই কেদারে পৌঁছে যাওয়া যায়।

হেঁটে উঠলে সঙ্গে ওয়াকিং স্টিক রাখতে হবে। যাঁরা নিয়মিত পর্বতারোহণ করেন, তাঁদের কাছে ওয়াকিং স্টিক থাকে। না হলে গৌরীকুণ্ড থেকে লোহা লাগানো বাঁশের লাঠি কিনতে হয়। দাম ২০-২৫ টাকার মতো, ফেরার সময় ফেরত দিলে আবার ১০ টাকা পাওয়া যায়। যথাসম্ভব হাল্কা ব্যাগ নিয়ে কেদারের পথে যাত্রা করা উচিত। না হলে ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে আরও বেশি কষ্ট হয়। মোটা সোয়েটারের বদলে হাল্কা জ্যাকেট বা পুলওভার পরে নেওয়াই ভাল, যাতে সহজে খুলে ফেলা যায়। কারণ, ভোরবেলা ঠান্ডা লাগলেও, যত বেলা বাড়ে এবং হাঁটা চলতে থাকে, ততই গরম লাগে। যখন-তখন বৃষ্টি হতে পারে, তাই সঙ্গে রেনকোট রাখতেই হবে। ছাতা নয়, কারণ, তাতে হাঁটতে অসুবিধা হবে। যাঁদের শ্বাসকষ্টের বা হার্টের সমস্যা আছে, তাঁদের সঙ্গে ইনহেলার বা প্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা উচিত। না হলে সমস্যা হতে পারে।

বেশিরভাগ যাত্রীই একদিনে হেঁটে কেদারনাথ পৌঁছে যান। তবে এখন মাঝপথে কিছু তাঁবু হয়েছে। বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে সেখানে রাত কাটানো যায়। অনেকে আবার হেলিকপ্টারে উঠে পুজো দিয়ে সেদিনই নেমে আসেন। তবে কেদারে অন্তত একটা রাত কাটানো উচিত। কারণ, মন্দিরের পিছনেই হিমালয় পর্বতের শৃঙ্গ। ভোরবেলা সূর্যোদয় এবং বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। কেদারনাথে খুব একটা আরামদায়ক হোটেল নেই, খাওয়া-দাওয়াও সাধারণ। তবে তীর্থে গিয়ে এটুকু মেনে নেওয়াই যায়। বিশেষ করে সেই তীর্থস্থানের নাম যদি হয় কেদারনাথ।

হেঁটে ওঠার পথে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূর থেকে মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। তখন যেন এক নিমেষে যাবতীয় ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। নিজে থেকেই পা দু’টি মন্দিরের দিকে এগোতে থাকে। সন্ধেবেলা আরতি দর্শন করলে মন ভাল হয়ে যায়। পরদিন ভোরবেলা তিনটে-সাড়ে তিনটেয় উঠে মন্দিরে চলে যেতে পারলে আসল বিগ্রহ স্পর্শ করার সুযোগ পাওয়া যায়। একটু বেলা হয়ে গেলেই কিন্তু বিগ্রহ শুধু দর্শন করা যায়, স্পর্শ করা যায় না। কেদারনাথে সবাই সমান, সবাইকেই লাইন দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। কেউ লাইন ভেঙে আগে চলে যেতে পারেন না। তীর্থযাত্রীদের একটা বড় অংশ বাঙালি, তাই পুরোহিত থেকে শুরু করে হোটেলের মালিক, কর্মী, দোকানদাররা বাংলা অল্পবিস্তর বুঝতে পারেন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তীর্থযাত্রীদের এসে পুরোহিতরা প্রশ্ন করেন, বাঙালি? ইতিবাচক উত্তর দিলে তাঁরা স্পষ্টতই খুশি হন। মাথায়-পোশাকে পবিত্র জল ছিটিয়ে শুদ্ধ করে দেন।

কেদারনাথ মন্দির খোলে অক্ষয় তৃতীয়ায় এবং দ্বার বন্ধ হয় কার্তিক পূর্ণিমায়। বছরের বাকি সময় পুজো হয় উখীমঠে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই কেদারনাথে তুষারপাত শুরু হয়। ফলে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। শীতকালে গোটা অঞ্চলই পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা থাকে। সেই বরফ ভেঙে যাওয়া সহজ নয়। তাই মন্দির খোলা থাকার সময়ই বেশিরভাগ তীর্থযাত্রী কেদারনাথে যান। অন্য সময় গেলে পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায় বটে, কিন্তু মন্দির বন্ধ থাকায় পুজো দেওয়া যায় না। অন্য সব মন্দিরের সঙ্গে কেদারের পার্থক্য আছে। এখানে পাণ্ডাদের উৎপাত নেই, কোনও কড়াকড়িও নেই। যাঁরা যান, তাঁরা সবাই পুজো দিতে পারেন। কেউ জোরজুলুম করেন না, অন্য মন্দিরের মতো জুতো চুরি হওয়ার ভয়ও নেই।

কেদারনাথের কাছেই বাসুকি তাল। সেখানে অগাস্ট মাস নাগাদ গেলে ব্রহ্মকমল ফুটে থাকতে দেখা যেতে পারে। অক্টোবরে গেলে আবার গোটা জলাশয়টাই বরফে ঢাকা দেখা যাবে। কেদারনাথ থেকে চোপতা হয়ে অনেকে আবার চলে যান বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু শিবমন্দির তুঙ্গনাথ দর্শন করতে। চন্দ্রশীলার অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য এই পথের অন্যতম আকর্ষণ।

বছরের পর বছর ধরে মানুষ আধ্যাত্মিকতা এবং হিমালয় দর্শনের টানে ছুটে যাচ্ছেন কেদারনাথে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও মানুষের এই অমোঘ আকর্ষণকে দমাতে পারেনি।

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Rohit Sharma: অজ়িভূমেই ইতি! রোহিতকে টেস্ট দলে চাননা ভারতীয় নির্বাচকরা?
অজ়িভূমেই ইতি! রোহিতকে টেস্ট দলে চাননা ভারতীয় নির্বাচকরা?
Calcutta National Medical College: বিকল C-Arm যন্ত্র, পিছোচ্ছে একাধিক বিভাগের অস্ত্রোপচার; ন্যাশনাল মেডিক্যালে দুর্ভোগ
বিকল C-Arm যন্ত্র, পিছোচ্ছে একাধিক বিভাগের অস্ত্রোপচার; ন্যাশনাল মেডিক্যালে দুর্ভোগ
India vs Australia Day 1 Highlights: শেষবেলায় চড়ল পারদ, সাফল্য পেলেন বুমরা, সিডনিতে প্রথম দিনশেষে ১৭৬ রানে এগিয়ে ভারত
শেষবেলায় চড়ল পারদ, সাফল্য পেলেন বুমরা, সিডনিতে প্রথম দিনশেষে ১৭৬ রানে এগিয়ে ভারত
West Bengal News Live: পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ
পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Fake Passport News: ইতালিতে থাকাকালীন বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ধীরেনের ! | ABP Ananda LIVEKolkata News: ন্যাশনাল মেডিক্যালে ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিকল C-Arm যন্ত্র ! হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠিDinhata News: দিনহাটা তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্ষোভের মুখে লকেট | ABP Ananda LIVEBangladesh News: স্বরূপনগর সীমান্ত থেকে ৪ বাংলাদেশি গ্রেফতার | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Rohit Sharma: অজ়িভূমেই ইতি! রোহিতকে টেস্ট দলে চাননা ভারতীয় নির্বাচকরা?
অজ়িভূমেই ইতি! রোহিতকে টেস্ট দলে চাননা ভারতীয় নির্বাচকরা?
Calcutta National Medical College: বিকল C-Arm যন্ত্র, পিছোচ্ছে একাধিক বিভাগের অস্ত্রোপচার; ন্যাশনাল মেডিক্যালে দুর্ভোগ
বিকল C-Arm যন্ত্র, পিছোচ্ছে একাধিক বিভাগের অস্ত্রোপচার; ন্যাশনাল মেডিক্যালে দুর্ভোগ
India vs Australia Day 1 Highlights: শেষবেলায় চড়ল পারদ, সাফল্য পেলেন বুমরা, সিডনিতে প্রথম দিনশেষে ১৭৬ রানে এগিয়ে ভারত
শেষবেলায় চড়ল পারদ, সাফল্য পেলেন বুমরা, সিডনিতে প্রথম দিনশেষে ১৭৬ রানে এগিয়ে ভারত
West Bengal News Live: পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ
পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় কংগ্রেসের বিক্ষোভ
Mamata Banerjee: 'ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট সাইলেন্ট ডিপার্টমেন্ট হয়ে গেছে' পরিবহণমন্ত্রীকে ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর
'ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট সাইলেন্ট ডিপার্টমেন্ট হয়ে গেছে' পরিবহণমন্ত্রীকে ভর্ৎসনা মুখ্যমন্ত্রীর
Viral News: হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন, অ্যাম্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতেই ফিরল প্রাণ; হেঁটে বাড়ি ফিরলেন এই বৃদ্ধ
হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন, অ্যাম্বুলেন্সের ঝাঁকুনিতেই ফিরল প্রাণ; হেঁটে বাড়ি ফিরলেন এই বৃদ্ধ
Mamata Banerjee: পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট পুলিশমন্ত্রী মমতা! TMC নেতার মৃত্যুর জন্য গাফিলতির অভিযোগ তুললেন
পুলিশের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট পুলিশমন্ত্রী মমতা! TMC নেতার মৃত্যুর জন্য গাফিলতির অভিযোগ তুললেন
Cricket Association of Bengal: আবেদনপত্র পাঠাতে দেরি! বিসিসিআই-এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না সিএবি
আবেদনপত্র পাঠাতে দেরি! বিসিসিআই-এর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না সিএবি
Embed widget