উচ্চবর্ণের বাড়ির গাছের ফুল তুলেছে কিশোরী, একঘরে ৪০টি দলিত পরিবার
ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে, সালিশি সভার রায় মেনে স্থানীয় দোকানদার, বিক্রেতারা দলিতদের জিনিসপত্র বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে। সামান্য কিছু কিনতেও তাদের পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।
নয়াদিল্লি: বছর পনেরোর মেয়েটি নেহাত খেলার ছলেই এক উচ্চবর্ণের বাড়ির গাছ থেকে ফুল পেড়েছিল। আর তারই ফল ভুগতে হচ্ছে গোটা গ্রামকে। ঘটনাটি ঘটেছে ওড়িষায়। ঢেঙ্কানল জেলার কাঁতিও কাতেনি গ্রামের ৪০টি পরিবার একঘরে হয়ে রয়েছে দুই পক্ষকালের বেশি সময় ধরে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে, সালিশি সভার রায় মেনে স্থানীয় দোকানদার, বিক্রেতারা দলিতদের জিনিসপত্র বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে। সামান্য কিছু কিনতেও তাদের পাঁচ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। আবার গ্রামবাসীরাও একঘরে হয়ে যাওয়া দলিতদের সঙ্গে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকী, গ্রামের রাস্তা দিয়ে তাদের বরযাত্রী বা মৃতদেহ নিয়ে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। উচ্চবর্ণের লোকজনে তরফে এমন ফতোয়াও জারি করা হয়েছে যে, দলিত শিশুরা গ্রামের সরকারি স্কুলে পড়তে পারবে না। ঘটনার শুরু মাস খানেক আগে। উচ্চবর্ণের বাড়ি থেকে ফুল কেন তুলবে একটি দলিত পরিবারের মেয়ে, এই প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদ জানায় একটি পরিবার। এই ‘অপরাধ’, উচিত-অনুচিত নিয়ে দলিত বনাম উচ্চবর্ণের মানুষের জোর তর্কাতর্কি হয়।বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটাতে গ্রামেই বসে সালিশি সভা। সেখানেই ঠিক হয় যে সংশ্লিষ্ট গ্রামের ৮০টি দলিত পরিবারের মধ্যে ৪০টিকে একঘরে করা হবে। সেই রায়ই বলবৎ বয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয় জেলা প্রশাসন এবং থানায় স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দুই পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করছে প্রশাসনও। পুলিশের দাবি, গত সপ্তাহের শেষের দিক থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। যদিও কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়নি। যে মেয়েটি ফুল তুলেছিল বলে এই সমস্যা, তার বাবা নিরঞ্জন নাইক বলেছেন, ‘‘আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলাম যাতে বিষয়টি মিটে যায় । কিন্তু তারপরও একাধিক বৈঠক ডেকে আমাদের একেবারে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে গ্রামের কেউ এমনকী কথা পর্যন্ত বলেন না। বলা হয়েছে, গ্রামের সামাজিক অনুষ্ঠানেও আমরা যোগ দিতে পারব না।’