এক্সপ্লোর

মাস্টারদা-র ‘ছাত্র’, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সেনানী, বাবা বিভূতিভূষণের স্মৃতিচারণায় ছেলে কুণাল সরকার

বিভূতিভূষণ সরকার। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ঘাঁটলে তাঁর নাম পাওয়া যাবে কিশোর বিপ্লবী হিসেবে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেপথ্যে থাকা এক সেনানী হিসেবে। আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে স্বাধীনোত্তর ভারতের এক বাঙালি শিল্পোদ্যোগী পরিচয়েও।

কলকাতা: বাল্যকাল থেকে কৈশোরে পা রেখেছিলেন যখন, তখন থেকেই তাঁর দুচোখ জুড়ে ছিল স্বাধীনতার সকালের স্বপ্ন। তাই যে বয়সটা মাঠেঘাটে দামালপনা করে কাটানোর কথা, তখন রাতের অন্ধকারে নদী সাঁতরে নৌকো থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে আনত ছেলেটি। পৌঁছে দিত সেই বিপ্লবীদের হাতে, যাঁদের বিশ্বাস ছিল সশস্ত্র আন্দোলনই স্বাধীনতালাভের একমাত্র পথ। সময়টা ১৯৩০ এর আশেপাশে। অধুনা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম তখন সশস্ত্র বিপ্লবের ভরকেন্দ্র। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সেখানে তখন বিপ্লবী কার্যকলাপ তুঙ্গে। বলছিলাম, বিভূতিভূষণ সরকারের কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস ঘাঁটলে তাঁর নাম পাওয়া যাবে কিশোর বিপ্লবী হিসেবে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেপথ্যে থাকা এক সেনানী হিসেবে। আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাবে স্বাধীনোত্তর ভারতের এক বাঙালি শিল্পোদ্যোগী পরিচয়েও। স্বাধীনতার পর ৭৩ টি বছর কাটিয়ে ফেলেছি আমরা। সেই সঙ্গে স্মৃতির অতলে হারিয়ে ফেলেছি এরকম অনেক মানুষকেই, যাঁদের জীবনের একটা বড় সময় কেটে গেছে দেশের কথা ভেবে, দেশের কাজে, ব্রিটিশদের অত্যাচারে। কিন্তু কিছু মানুষের স্মৃতিতে আজও জ্বলজ্বলে তাঁদের অস্তিত্ব। বিপ্লবী বিভূতিভূষণ সরকারের ছেলে চিকিৎসক কুণাল সরকার, প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। মাত্র ১৩ বছরেই বাবাকে হারান তিনি। তবুও স্মৃতিতে থাকা সেই মানুষটিই তাঁর কাছে ঈশ্বর, পথপ্রদর্শক। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, এবিপি আনন্দের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন কৈশোরের সেই উজ্জ্বল স্মৃতি। 'বাবা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পাহাড়ি এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছিলেন, জেল খেটেছিলেন কিন্তু এই বিষয়ে আলোচনা করা ছিল তাঁর স্বভাববিরুদ্ধ। তাঁর জীবনযাপনেই মিলত দেশভক্তির পরিচয়। আলাদা করে কথা বলে বোঝাতে হত না।' বলছিলেন ডা. কুণাল সরকার। অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকার জন্য পুলিশের খাতায় উঠে গেছিল বিভূতিভূষণ সরকারের নাম। হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। তিনিও পার্বত্য চট্টগ্রামে তখন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। ছেলে কুণালের আবছা স্মৃতি বলে, স্কুলের পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন তাঁর বাবা। অন্যদের মতো সেলুলার জেলে নয়, তাঁকে পাঠানো হয় তৎকালীন বার্মার থারওয়াডি জেলে। সম্ভবত সেখান থেকেই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দেন বিভূতিভূষণ। 'এরপর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাবাকে নিয়ে ঠাকুর্দা চলে আসেন কলকাতায়। দুর্দান্ত রেজাল্ট করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে। তখন সশস্ত্র আন্দোলনের পথ থেকে বেশ কিছুটা সরে এসেছিলেন তিনি। যুক্ত হয় কংগ্রেসী রাজনীতির সঙ্গে। হয়ত কিছুটা গাঁধীজীর অনুরাগীও হয়ে পড়েন তিনি।', বলছিলেন কুণাল সরকার। ভাল রেজাল্ট ছিল বলে যে কোনও প্রশাসনিক পদে চাকরি করার কথা ভাবতেই পারতেন। কিন্তু কোনওদিনই ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরি করতে চাননি তিনি। চেয়েছিলেন দেশের জন্য কিছু করতে। স্বাধীন ভারতকে একটা ঝকঝকে ভবিষ্যৎ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই হয়ত তাঁর জীবনের পরবর্তী অধ্যায় 'কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস'কে ঘিরে। ১৯৪৩-এ তিনি ৬ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে কলকাতার যাদবপুরে এই সংস্থার সূত্রপাত। নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম রেখেছিলেন স্ত্রী কৃষ্ণার নামে। স্বাধীনতা তখন খুবই কাছাকাছি। চাইতেন তাঁর এই শিল্পোদ্যোগ স্বাধীন ভারতে আরও শাখা-প্রশাখা বিস্তার করুক। বাংলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করুক। অনেকটা ঘটেওছিল তেমনই। ষাটের দশকের শেষের দিকে এটি ভারতের অন্যতম কাঁচশিল্পের মর্যাদা লাভ করে। সেই সময় যাদবপুর, বারুইপুর ও মুম্বইতে কৃষ্ণা গ্লাস ফ্যাক্টরির তিনটি শাখা ছিল। কাজ করতেন প্রায় আড়াই হাজার কর্মী। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট। সেইদিন। যেদিনটি দেখার আশায় বিভূতিভূষণের মতো মানুষরা জীবন বাজি রেখেছিলেন। বাবার মুখে শোনা অল্প কয়েকটি কথার মধ্যে কুণাল সরকারের মনে পড়ে, বিভূতিভূষণ বারবার বলতেন, রাজধানী দিল্লিতে যখন স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হল, জাতির জনক তখন কলকাতায়। স্বাধীনতার আগে-পরে বঙ্গে সাম্প্রদায়িক অশান্তি প্রশমিত করার জন্য বেলেঘাটার বাড়িতে থাকতেন মহাত্মা গাঁধী। সেই সময় সশস্ত্র আন্দোলনের থেকে বেশি করে গাঁধীর ভাবধারার কথা উঠে আসত তাঁর মুখে। বলছিলেন পুত্র কুণাল সরকার। স্বাধীন ভারতে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যাদবপুর থেকে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু জিততে পারেননি। বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি মারা যান। কুণাল সরকারের বয়স তখন মাত্র ১৩। এরপর সুদীর্ঘ লড়াই গেছে। পরবর্তীতে একাধিকবার বাংলাদেশে যান কুণাল সরকার। তিনি একবার দেখতে চেয়েছিলেন চট্টগ্রামের সেই ঐতিহাসিক অস্ত্রাগার। কিন্তু কেউই তাঁকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেনি। তাঁর মনে হয়েছে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের স্মৃতিগুলিকে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে ততটা সচেতন নন সে-দেশের মানুষ। সেই দুঃখটা বড্ড তাড়া করে বেড়ায়।
আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Kasba Incident Update: বাইকে চেপে হাওড়া হয়ে বর্ধমানের দিকে পালানোর সময় পাকড়াও, কসবাকাণ্ডে জালে 'মাস্টারমাইন্ড' ইকবাল
বাইকে চেপে হাওড়া হয়ে বর্ধমানের দিকে পালানোর সময় পাকড়াও, কসবাকাণ্ডে জালে 'মাস্টারমাইন্ড' ইকবাল
Kasba shootout: মাত্র ১০ হাজার টাকাতেই কাউন্সিলরকে খুন করতে এসেছিল যুবক? ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কে এই ইকবাল?
মাত্র ১০ হাজার টাকাতেই কাউন্সিলরকে খুন করতে এসেছিল যুবক? ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কে এই ইকবাল?
Arjun Singh : অর্জুন সিংহের শরীরে সত্যি প্রাণঘাতী রাসায়নিক স্প্রে? কেন সকাল সকাল হাসপাতালে ?
অর্জুন সিংহের শরীরে সত্যি প্রাণঘাতী রাসায়নিক স্প্রে? কেন সকাল সকাল হাসপাতালে ?
Recruitment News: ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশে ৫২৬ পদে নিয়োগ হবে, কারা আবেদন করতে পারবেন ?
ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশে ৫২৬ পদে নিয়োগ হবে, কারা আবেদন করতে পারবেন ?
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Anubrata Mondal: বীরভূমে তৃণমূলের কোর কমিটিতে কেষ্টই 'ক্যাপ্টেন' | ABP Ananda LIVETMC News: কসবায় তৃণমূল কাউন্সিলরকে খুনের চেষ্টা, মেয়রের নিশানায় পুলিশHowrah Bridge: রাতে বন্ধ হাওড়া ব্রিজ, যানবাহন বন্ধ করে হাওড়া ব্রিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা | ABP Ananda LIVETmc Councillor: তৃণমূল কাউন্সিলরের উপর হামলা, নেপথ্যে কি শুধুই ইকবাল? | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Kasba Incident Update: বাইকে চেপে হাওড়া হয়ে বর্ধমানের দিকে পালানোর সময় পাকড়াও, কসবাকাণ্ডে জালে 'মাস্টারমাইন্ড' ইকবাল
বাইকে চেপে হাওড়া হয়ে বর্ধমানের দিকে পালানোর সময় পাকড়াও, কসবাকাণ্ডে জালে 'মাস্টারমাইন্ড' ইকবাল
Kasba shootout: মাত্র ১০ হাজার টাকাতেই কাউন্সিলরকে খুন করতে এসেছিল যুবক? ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কে এই ইকবাল?
মাত্র ১০ হাজার টাকাতেই কাউন্সিলরকে খুন করতে এসেছিল যুবক? ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে কে এই ইকবাল?
Arjun Singh : অর্জুন সিংহের শরীরে সত্যি প্রাণঘাতী রাসায়নিক স্প্রে? কেন সকাল সকাল হাসপাতালে ?
অর্জুন সিংহের শরীরে সত্যি প্রাণঘাতী রাসায়নিক স্প্রে? কেন সকাল সকাল হাসপাতালে ?
Recruitment News: ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশে ৫২৬ পদে নিয়োগ হবে, কারা আবেদন করতে পারবেন ?
ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশে ৫২৬ পদে নিয়োগ হবে, কারা আবেদন করতে পারবেন ?
IPL Auction 2025: মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সর্বকালের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলের নিলামে, কে সে?
মাত্র ১৩ বছর বয়সেই সর্বকালের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলের নিলামে, কে সে?
Employment Fraud: জালিয়াতির শিকার জনপ্রিয় বলি-নায়িকার বাবা, সরকারি চাকরির ফাঁদে খোয়ালেন ২৫ লক্ষ টাকা
জালিয়াতির শিকার জনপ্রিয় বলি-নায়িকার বাবা, সরকারি চাকরির ফাঁদে খোয়ালেন ২৫ লক্ষ টাকা
Pentagon UFO Report: মাঝ আকাশে বিমানের সঙ্গে UFO-র ধাক্কা লাগার উপক্রম? ৭৫৭ বার চোখে পড়ে ভিনগ্রহী যান? উল্লেখ আমেরিকার রিপোর্টে
মাঝ আকাশে বিমানের সঙ্গে UFO-র ধাক্কা লাগার উপক্রম? ৭৫৭ বার চোখে পড়ে ভিনগ্রহী যান? উল্লেখ আমেরিকার রিপোর্টে
West Bengal Weather : কলকাতার দরজায় শীতের কড়া নাড়া, ২০ নিচে নামল পারদ, আজ কত ?
কলকাতার দরজায় শীতের কড়া নাড়া, ২০ নিচে নামল পারদ, আজ কত ?
Embed widget