(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Womens Day 2021: দিদাকে বলা হল না, তিনিই দেশের প্রথম মহিলা ফায়ার ফাইটার...
ছোটবেলায় তাঁর জীবন ছিল আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে স্বপ্ন দেখতেন নতুন কিছু করে দেখানোর। সেই জন্যেই ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিয়েছিলেন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বাঙালি কন্যা। মাসের পর মাস কঠিন ট্রেনিং, অবশেষে সাফল্য। দেশের প্রথম ফায়ার ফাইটার হিসাবে কর্মরত কলকাতার মেয়ে তানিয়া।
কলকাতা: ঝকঝকে চেহারা। গভীর চোখ। বুদ্ধিদীপ্ত চাউনি। মুখের হাসিতে মুগ্ধতা। সৌন্দর্যে কোনও অভিনেত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন।
অথচ অভিনয় নয়, তানিয়া সান্যাল পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’! খেলাই তো। তাঁর বয়সী মেয়েরা যখন কেউ সিনেমা বা মডেলিংয়ের জগতে নাম লেখাচ্ছেন, কেউ ছুটছেন কর্পোরেট চাকরির পিছনে, কেউ হয়তো বেছে নিচ্ছেন শিক্ষকতার মতো গতানুগতিক কাজ, তানিয়া তখন ঝাঁপিয়ে পড়েন বিধ্বংসী আগুনের মধ্যে! জীবনরক্ষার তাগিদে। প্রাণ বাঁচানোই যে তাঁর গুরুদায়িত্ব। ভালবাসার কাজও।
ছোটবেলায় তাঁর জীবন ছিল আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে স্বপ্ন দেখতেন নতুন কিছু করে দেখানোর। সেই জন্যেই ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিয়েছিলেন সদ্য যৌবনে পা দেওয়া বাঙালি কন্যা। মাসের পর মাস কঠিন ট্রেনিং, অবশেষে সাফল্য। দেশের প্রথম ফায়ার ফাইটার হিসাবে কর্মরত কলকাতার মেয়ে তানিয়া।
এতরকম পেশা থাকতে, কেন দমকলকর্মীর পথ বেছে নিয়েছিলেন? তানিয়া বলছেন, ‘এই সুযোগটার কথা প্রথম জানতে পারি খবরের কাগজ দেখে। পেশাটা জেনে মনে হয়েছিল এটা নতুন কিছু। খুব আকর্ষণীয় লেগেছিল কাজটা। তখনও বুঝতে পারিনি আমার জন্য এত বড় চমক অপেক্ষা করছে। দিল্লির ফায়ার ট্রেনিং সেন্টারে আমার ট্রেনিং চলেছিল ৫ মাস ধরে। আর সেখানে গিয়েই জানতে পারি, আমিই প্রথম মহিলা ফায়ারফাইটার হতে চলেছি। সমস্ত পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ শিখেছি, কাজ করেছি। সেটাই বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় স্মৃতি।’
ছোটবেলায় কখনও ফায়ারফাইটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি তানিয়া। সেজন্যই কখনও কোনও ট্রেনিং করেননি। কিন্তু বাড়ি থেকে সবসময় সাহায্য পেয়েছিলেন তিনি। তানিয়া বলছেন, ‘আমার বাবা-মা সবসময় বলতেন, যেটা স্বপ্ন দেখো, সেটা পূরণ করো। আমার প্রত্যেক পদক্ষেপে বাড়ির সবাইকে পাশে পেয়েছি। আর পরীক্ষার আগে দিদি আমায় খুব সাহায্য করেছিলেন। ভুবনেশ্বরে আমার পরীক্ষা হয়েছিল। প্রস্তুতির জন্য আমায় দিদি ভীষণ সাহায্য করেছিলেন। ওই আমার প্রথম র্ট্রেনার।’
সাফল্যকে ছুঁয়ে দেখেছেন তানিয়া। তবুও আফশোস? ‘হ্যাঁ আফশোস তো রয়েছে।’ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তানিয়া। তারপর বললেন, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা হচ্ছেন রাঙাদিদা। কিন্তু আমি যেদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম, সেদিনই রাঙাদিদা মারা যান। ওঁকে আর বলা হল না, আমিও পেরেছি, আমিও করে দেখিয়েছি।’ তবে নিজের সাফল্যকে আঁকড়ে ধরেই আত্মবিশ্বাসী তানিয়া। নিজের প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে তাঁর মুখে হাসি। বললেন, ‘কেবল নিজের জন্য নয়, আমার সফল হওয়া প্রয়োজন ছিল সব মেয়েদের জন্য। সবাইকে দেখানোর প্রয়োজন ছিল, কোনও কাজই কেবল পুরুষদের জন্য হতে পারে না। সুযোগ পেলে মেয়েরাও সমানভাবে সব কাজেই সাফল্য পেতে পারে। খুব ভালো লাগে, যখন কোনও মহিলা এসে বলেন, তাঁরাও নিজেদের মেয়েদের এমনই কোনও কর্মক্ষেত্রে দেখতে চান। এইরকম কিছু শুনলে মনে হয় কিছু মেয়েদের আমি উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছি।’
আজ নারী দিবস। ‘অগ্নিকন্যা’-র কাছে নারীদিবসের অর্থ কী? মৃদু হেসে তানিয়া বললেন, ‘আমি তো বলব কেবল একটা দিন কেন, ৩৬৫ দিনই আমরা মেয়েরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে লড়াই করে চলেছি আর আমাদের প্রমাণ করে চলেছি। আমার মতে প্রত্যেক মহিলাই যোদ্ধা। আর নারী মানেই শক্তি। যদি মন-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করা যায়, তাহলে যে কোনও বাধাই সফলভাবে পেরনো যায়।’