WBCS Result Exclusive: স্বপ্ন বুনে দিয়েছিলেন বাবা, সেই পথে হেঁটেই ডব্লুবিসিএসে দশম কেতুগ্রামের মহম্মদ আরিফ নওয়াজ
দাঁত দাঁত চেপে সেই লড়াইয়েরই দাম পেলেন কেতুগ্রামের মহম্মদ আরিফ নওয়াজ। ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় দশম স্থান অধিকার করে পূরণ করলেন বাবার স্বপ্ন।
রাণা দাস, কেতুগ্রাম : স্বপ্নটা দেখিয়েছিলেন বাবা। সেই লক্ষ্য পূরণই কার্যত "পাখির চোখ" করে নিয়েছিলেন। ব্যর্থতাও এসেছে চলার পথে। কিন্তু, তিনি হাল ছাড়েননি। কারণ, বাবার দেখা "স্বপ্ন" যে তাঁকে ঘুমাতে দিত না। দাঁত দাঁত চেপে সেই লড়াইয়েরই দাম পেলেন কেতুগ্রামের মহম্মদ আরিফ নওয়াজ। এবার ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় দশম স্থান অধিকার করে বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন আরিফ। তবে আফসোস একটা থেকেই যাচ্ছে, বাবা যদি দেখে যেতে পারতেন তাঁর গায়ে তিন স্টার লাগানো খাঁকি পোশাকটা!
ছোট্ট আরিফ বাবার সঙ্গে প্রায়ই থানায় যেতেন। দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতেন, কোনও বড় পুলিশ অফিসার এলেই বাবা তাঁকে স্যালুট করছেন। ছোট্ট আরিফের মনে কৌতূহল হয়েছিল। বাবাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "বাবা এঁদের কেন স্যালুট করো" ? বাবা তখন আরিফের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, এঁদের মতো বড় অফিসার হলে দেখবে তোমাকেও কতজন স্যালুট করছে।
আজ সেই কথাটাই মনে করে আরিফের চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আরিফের জোর গলায় চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে, দেখো বাবা, আজ তোমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কনস্টেবলের ছেলে এবার ডিএসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক হবেন।
মহম্মদ আল্লা নওয়াজ। রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন । স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন কেতুগ্রামের আদি বাড়ি শিলুড়িতে। তাঁর শেষ পোস্টিং ছিল কাটোয়া থানায়। অবসরের পরে মহম্মদ আল্লা নওয়াজ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০১৪ সালে তিনি মারা যান।
ছোট ছেলে আরিফের আজও মনে পড়ে, বাবা যখন খুব অসুস্থ হয়ে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন, তখন তাঁকে বলেছিলেন, এবার জীবনের লক্ষ্য স্থির কর। এমন কিছু করিস যাতে স্যালুট পাওয়ার যোগ্য হোস। আরিফ বলছিলেন, সেই দিনই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন তাঁকে ডব্লুবিসিএস পাস করতেই হবে। হতে হবে বড় পুলিশ আধিকারিক।
তবে সেই পথ খুব একটা সোজা ছিল না। বাবার পেনশনের টাকায় কোনও রকমে সংসার চলত। দাদার সাথে চাষের কাজে হাতও লাগাতে হত। তার মধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া । দু'বার ডব্লুবিসিএসের প্রিলিতে পাস করলেও, মেন ক্লিয়ার করতে পারেননি। তবুও হার মানেননি আরিফ। তিনবারের বার ২০১৯ ব্যাচের ডব্লুবিসিএস গ্রুপ বি পদে উত্তীর্ণ হন মহম্মদ আরিফ নওয়াজ।
এখন শুধু নিয়োগপত্র পেয়ে ট্রেনিংয়ের অপেক্ষা । তার পরে ট্রেনিং সেরে আরিফের গায়ে উঠবে তিন স্টার লাগানো খাঁকি পোশাক। আরিফ এখন সেই দিনের অপেক্ষায় আছেন, যেদিন তিন স্টার লাগানো খাঁকি পোশাক পরে বাবার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বাবাকে বুক ফুলিয়ে স্যালুট করতে পারবেন।