Assets of Political Parties: এক বছরে ১৫২% সম্পত্তিবৃদ্ধি তৃণমূলের, কিন্তু CPM-এর চেয়ে দরিদ্রই, বিজেপি-র ধারেকাছে নেই কোনও দল
ADR Report: Association for Democratic Reforms. সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন দল সবচেয়ে ধনী, কাদের সম্পত্তির বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি, তা সামনে এল।
নয়াদিল্লি: 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি নিয়ে বিতর্কের মধ্যেও পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। সেই আবহেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্পত্তির খতিয়ান সামনে এল। ২০২০-'২১ এবং ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ জমা দিয়েছিল দলগুলি, তাতে কে, কোথায় দাঁড়িয়ে তা প্রকাশ করল Association for Democratic Reforms. সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোন দল সবচেয়ে ধনী, কাদের সম্পত্তির বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি, তা সামনে এল।(Assets of Political Parties)
Association for Democratic Reforms একটি নির্বাচনী সংস্কার এবং অধিকার সংক্রান্ত সংগঠন। ২০২০-'২১ এবং ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে আয়-ব্যয়ের হিসেব দিয়েছিল যে জাতীয় দলগুলি, তা প্রকাশ করেছে তারা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, সিপিআই, সিপিএম, তৃণমূল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। এর মধ্যে তৃণমূল, সিপিআই, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ইতিমধ্যেই জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারিয়েছে। যদিও যে সময়কার হিসেব সামনে আনা হয়েছে, তখন জাতীয় দলই ছিল তারা। আম আদমি পার্টি বর্তমানে জাতীয় দলের স্বীকৃতি পেয়েছে। (ADR Report)
ADR জানিয়েছে, ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে জাতীয় স্তরে আটটি রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত দলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭,২৯৭.৬২ কোটি টাকা। ২০২১-'২২ সালে তা বেড়ে ৮,৮২৯.১৬ কোটি টাকা হয়। এর মধ্যে, ২০২০-'২১ সালে বিজেপি-র মোট সম্পত্তি যেখানে ৪,৯৯০ কোটি টাকা ছিল, ২০২১-'২২ সালে তা বেড়ে হয় ৬,০৪৬.৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে তাদের সম্পত্তিবৃদ্ধির হার ছিল ২১.১৭ শতাংশ।
একই ভাবে, ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে কংগ্রেসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬৯১.১১ কোটি টাকা। ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে তা বেড়ে ৮০৫.৬৮ কোটিতে গিয়ে ঠেকে। অর্থাৎ কংগ্রেসের সম্পত্তি বৃদ্ধি হয় ১৬.৫৮ শতাংশ। কিন্তু সম্পত্তিবৃদ্ধির নিরিখে তৃণমূল সকলকে ছাপিয়ে যায় বলে দেখা যাচ্ছে পরিসংখ্যানে। ADR জানিয়েছে, ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে তৃণমূলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৮২.০০১ কোটি টাকা। ২০২১-'২২ অর্থবর্ষে তা বেড়ে ৪৫৮.১০ কোটি টাকা হয়। অর্থাৎ একধাক্কায় তৃণমূলের সম্পত্তির বৃদ্ধি হয় ১৫১.৭০ শতাংশ।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচন ছিল পশ্চিমবঙ্গে, যাতে বিপুল জনাদেশ পেয়ে জয়ী হয় তৃণমূল। নির্বাচনের বছরে ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে তাদের আয় বৃদ্ধি পায় বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে সম্পত্তি বাড়লেও, বিজেপি, কংগ্রেস, বহুজন সমাজ পার্টি, সিপিএম-এর চেয়ে এখনও মোট সম্পত্তির নিরিখে ঢের পিছিয়ে তৃণমূল।
জাতীয় দল হিসেবে একমাত্র মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির সম্পত্তিতেই পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে তাদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৭৩২.৭৯ কোটি টাকা। ২০২০-'২১ অর্থবর্ষে তা কমে ৬৯০.৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তাদের সম্পত্তিতে ৫.৭৪ শতাংশ পতন লক্ষ্য করা যায়।
২০২০-’২১ সালে সিপিএম-এর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬৫৪.৭৯ কোটি টাকা। ২০২১-’২২ সালে তা বেড়ে ৭৩৫.৭৭ কোটি টাকা হয়। শরদ পওয়ারের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ২০২০-’২১ সালে নিজেদের ৩০.৯৩ কোটি টাকা দেখায়। ২০২১-’২২ সালে তা বেড়ে ৭৪.৫৪ কোটি টাকা হয়।
কোন দলের কাঁধে কত পরিমাণ ঋণ ছিল, তারও হিসেব প্রকাশ করেছে ADR. তাতে দেখা গিয়েছে, ২০২০-’২১ সালে আটটি জাতীয় দলের কাঁধে থাকা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৩.৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাজারে কংগ্রেসের ধার ছিল ৭১.৫৮ কোটি, সিপিএম-এর ১৬.১০৯ কোটি টাকা।
২০২১-’২২ সালে আবার কংগ্রেসের কাঁধে ৪১.৯৫ কোটি টাকার ঋণ ছিল। সিপিএম-এর ১২.২১ কোটি এবং বিজেপি-র ঋণ ছিল ৫.১৭ কোটি টাকা। ২০২০-’২১ এবং ২০২১-’২২ সালের মধ্যে ছ’টি রাজনৈতিক দলই নিজেদের কাঁধে থাকা ঋণের পরিমাণ খোলসা করে।সেই অনুযায়ী, কংগ্রেসের ঋণের পরিমাণ কমে হয় ২৯.৬৩ কোটি, বিজেপি-র ৬.০৩ কোটি, সিপিএম-এর ৩.৮৯ কোটি, তৃণমূলের ১.৩০ কোটি এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির ১ লক্ষ টাকা।
ধার-দেনা বাদ দিয়ে, কোন দলের কত সম্পত্তি, তা-ও জানিয়েছে ADR. সেই নিরিখে ২০২০-’২১ সালে বিজেপি-র মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল সর্বাধিক, ৬,০৪১.৬৪ কোটি টাকা। কংগ্রেসের ৭৬৩.৭৩ এবং সিপিএম-এর ৭২৩.৫৬ কোটি টাকা। ২০২১-’২২ অর্থবর্ষে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ১.৮২ কোটির এবং সিপিআই ১৫.৬৭ কোটির সম্পত্তি দেখায়।
তবে সম্পত্তির নিরিখে ফারাক থাকলেও, একটি বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই মিল পাওয়া গিয়েছে, তা হল, ঋণ দেখালেও, কোন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাঙ্ক বা সংস্থার কাছ থেকে তা নেওয়া হয়, কোনও দলই খোলসা করেননি। ঋণশোধের সময়সীমা, কিস্তি সংক্রান্ত বিশদ তথ্যও জানানো বাধ্যতামূলক। ঋণবাবদ নগদে কত টাকা এসেছে, দলের আয়ের উৎস কী, তাও জানাতে বাধ্য রাজনৈতিক দলগুলি। নির্বাচন কমিশনের তরফে তার সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দলই সংই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেনি।