Delhi Election Results 2025: দুর্নীতি বিরোধী নেতা হিসেবে উত্থান, আবগারি মামলা-শিশমহল বিতর্ক, দিল্লির আস্থা হারালেন কেজরিওয়াল
Arvind Kejriwal: রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষিত, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছিলেন কেজরিওয়াল। কেন এমন পরিণতি হল?

নয়াদিল্লি: মানুষ চাইলে ফের ক্ষমতায় ফিরবেন। অন্যথায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন না। আবগারি দুর্নীতি মামলায় জেল থেকে বেরনোর পর, মাস পাঁচেক আগে ঘোষণা করেছিলেন। সেই মতো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কিন্তু দিল্লির মানুষ কেজরিওয়ালকে ফের একবার ক্ষমতায় ফেরালেন না। শনিবার সকাল থেকে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনা চলছে। দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত সেখানে ৪৮টি আসনে এগিয়ে BJP. আম আদমি পার্টি এগিয়ে ২২টি আসনে। নিজের আসনও ধরে রাখতে পারেননি কেজরিওয়াল। সেখানে হেরে গিয়েছেন তিনি।। (Delhi Election Results 2025)
রাজনীতিতে উচ্চশিক্ষিত, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেছিলেন কেজরিওয়াল। IIT খড়গপুর ফেরত ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল যেমন, তেমনই সরকারের অন্দরে রাজস্ব দফতরের আধিকারিক কাজ করার রেকর্ডও ছিল। দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকার সুবাদে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে আরও। আর তাতে ভর করেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরিওয়ালকে নির্বাচিত করেছিলেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই দিল্লির মানুষই এবার কেজরিওয়ালকে প্রত্যাখ্য়ান করলেন। কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি প্রতিষ্ঠান বিরোধিতারই শিকার হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। (Arvind Kejriwal)
২০১১ সালে যখন আন্না হাজারের দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে যখন যোগ দেন কেজরিওয়াল, ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে নজর কেড়েছিলেন তিনি। পোশাক-পরিচ্ছদ একেবারে সাধারণ থাকলেও, মানুষকে কাজের গুণে অসাধারণ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তিনি। রাজধানী দিল্লিতে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময় কেন্দ্রে ক্ষমতাদখলের পথে এগনো বিজেপি-ও সমর্থন জানিয়েছিল তাঁকে। আর তাতেই আম আদমি পার্টির ঝুলি ভরিয়ে দিয়েছিলেন দিল্লির সাধারণ মানুষ। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই দিল্লিবাসীই মুখ ফেরালেন কেজরিওয়ালের থেকে।
কিন্তু এমন পরিণতি হল কেন তাঁর? শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সুর গলায় ধরা পড়লেও, কেন দিল্লিবাসী কেজরিওয়ালকে হ্যাট্রিক করতে দিলেন না? প্রশ্নের জবাব রয়েছে গত কয়েক মাসের ঘটনাক্রমেই---
২০২৪ সালের ২১ মার্চ আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। মোটা টাকা ঘুষের বিনিময়ে কিছু মানুষকে দিল্লিতে সুরার ব্যবসায় তিনি বিশেষ সুবিধা করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। সেই মামলায় তিহাড় জেলে ঠাঁই হয় কেজরিওয়ালের। মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হওয়া প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গন্য হন তিনি। মণীশ সিসৌদিয়া থেকে সঞ্জয় সিংহের মতো দলের নেতাদেরও জেলে যেতে হয়।
শেষ পর্যন্ত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন পান কেজরিওয়াল। জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন তিনি। মানুষ যদি ভোট দিয়ে জেতান, তাহলে আবার দায়িত্বে ফিরবেন। কিন্তু গ্রেফতারি নিয়ে কেজরিওয়াল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব খাড়া করলেও, মানুষের মনে আবেগ সঞ্চার করতে চাইলেও, দিল্লিবাসী তাঁর আবেদনে সাড়া দেননি বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বরং সাম্প্রতিক 'শিশমহল' বিতর্ক কেজরিওয়ালের ভাবমূর্তিকে আরও কালিমালিপ্ত করে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর। জনগণের টাকায় দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনকে কেজরিওয়াল রীতিমতো শিশমহলে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ করে বিজেপি। যে হিসেব সামনে আসে, তাতে বলা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনকে নতুন করে সাজাতে ৫২ কোটি টাকা খরচ করেছেন কেজরিওয়াল।
বাংলোতে রিমোট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পর্দার পিছনেই কেজরিওয়াল ৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে জানা যায়। রেলিংয়ের পিছনে ১ কোটি, অটোমেটিক দরজার জন্য ৭০ লক্ষ, টিভির জন্য ৬৫ লক্ষ, রিমোট নিয়ন্ত্রিত আলোর জন্য ৩০ লক্ষ, ফ্রিজের জন্য ৯ লক্ষ, মাসাজ চেয়ারের জন্য ৪ লক্ষ টাকা খরচ করা হয় বলে দাবি করে বিজেপি। টয়লেটের কমোডের সিটের দামও ১২ লক্ষ টাকা বলে দেখানো হয়। সাধারণ মানুষের টাকায় কেজরিওয়াল নিজের জন্য ‘শিশমহল’ বানিয়েছেন বলে প্রকাশ্য জনসভায় খোঁচা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি জাতীয় স্তরে যে I.N.D.I.A জোটে শামিল কেজরিওয়াল, তাঁর শরিকদল কংগ্রেসও সেই নিয়ে আক্রমণ শানায়। এর পাল্টা আম আদমি পার্টি প্রধানমন্ত্রীর ২৭০০ কোটি টাকার বাসভবন, ৮০০০ কোটি টাকার বিমানের দোহাই দিলেও, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছিল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
প্রথম ক্ষমতায় এসে দিল্লিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ ব্যবস্থায় ব্যাপক রদবদল ঘটালেও, সাম্প্রতিক কালে দিল্লির সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি ছাড়া উন্নতি হয়নি বলেও অভিযোগ আসে। নির্বাচনী প্রচারের গেলে আম আদমি পার্টির প্রার্থীদের মুখের উপরই জবাব দিতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। নর্দমা, নালাগুলি পরিষ্কার করা হয় না কেন, চারিদিকে এত অব্যবস্থা কেন, প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। তাই মহিলাদের ভাতা দেওয়ার মতো জনমোহিনী প্রকল্পের ঘোষণা করলেও, কেজরিওয়ালের থেকে বিমুখ হয়ে পড়েন মানুষ।
জাতীয় স্তরে একজোট হয়ে লড়াই করলেও, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আম আদমি পার্টির সংঘাত বাধে সরাসরি। দিল্লি নির্বাচনে দুই দলই 'একলা চলো' নীতি নিয়েছিল। কিন্তু জোটধর্ম মেনে কেউ কাউকে তোয়াজ করেননি। বরং দুর্নীতি, অপশাসন নিয়ে কেজরিওয়ালকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে কংগ্রেস। জোটশরিকরা যেখানে কেজরিওয়ালকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ করছেন, সেখানে সাধারণ মানুষ কী করে তাঁর উপর আস্থা রাখবেন, তা বড় প্রশ্ন হয়ে ওঠে। এসবেরই প্রভাব ভোটবাক্সে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
