Ayatollah Ali Khamenei: তীর্থযাত্রায় গিয়ে সংসার পাতেন বিদেশে, উত্তরপ্রদেশের এই ছেলের হাতেই পাল্টে যায় ইরানের ইতিহাস...
Iran-India Relations: আয়াতোল্লা আলি খামেইনির রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ভারত।

নয়াদিল্লি: পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার মধ্যে অন্যতম। ঐতিহাসিক দিক থেকেও তাই ইরানের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনে সেই ইরানের ভবিষ্যৎই এখন প্রশ্নের মুখে। এই মুহূর্তে দেশের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের সিদ্ধান্তের উপর টিকে দেশের অস্তিত্ব। পশ্চিমি দেশগুলির চক্ষুশূল, ইরানের সর্বেসর্বা এই আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে কিন্তু ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ভারত। (Ayatollah Ali Khamenei)
১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লব তখনও ঘটেনি, আয়াতোল্লা আলি খামেনেই তো দূর, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতোল্লা রুহল্লা খোমেইনিরও আবির্ভাব হয়নি তখনও। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের বরাবাঁকি জেলার কিন্টুরে জন্ম হয় শিয়া সৈয়দ আহমেদ মুসাভি ‘হিন্দি’র। ধর্মপ্রাণ সৈয়দ পরবর্তীতে শিয়া ধর্মগুরু হয়ে ওঠেন। তাঁর আগের প্রজন্মই ইরান থেকে ভারতে চলে এসেছিল। কিন্তু ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাব ফিকে হতে শুরু করে। (Iran-India Relations)
আর সেই সন্ধিক্ষণেই বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন সৈয়দ। ১৮৩০ সালে কিন্টুর থেকে ইরাকের নাজাফের উদ্দেশে রওনা দেন সৈয়দ। শিয়া মুসলিমদের কাছে নাজাফ অন্যতম পবিত্র শহর। পয়গম্বর মহম্মদের জামাতা ইমাম আলির (প্রথম ইমাম) সমাধিক্ষেত্র সেটি। ইমামের সমাধিক্ষেত্র দেখতেই নাজাফ পৌঁছন সৈয়দ। কিন্তু সেখান থেকে আর ফেরেননি তিনি।
তীর্থযাত্রায় বেরোলেও, পরবর্তী সময়ে পরিযায়ীতে পরিণত হন সৈয়দ। এর কয়েক বছরের মধ্যেই ইরানের খোমেইন শহরে আশ্রয় নেন তিনি। সেখানেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, সন্তানধারণ করেন। ইরানের শিয়া ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভালই পরিচিত হয়ে ওঠেন সৈয়দ। কিন্তু ইরানের স্থানীয় সমাজের অংশ হয়ে উঠলেও, নিজের নাম থেকে কখনও ‘হিন্দি’ শব্দটি সরাননি। যতদিন বেঁচেছিলেন নামের পাশে নিয়ম করে ‘হিন্দি’ লিখতেন, ভারতকে নিজের জন্মস্থান হিসেবে বোঝাতেই। এমনকি ইরানের সরকারি রেকর্ডে আজও তাঁর নামের পাশে ‘হিন্দি’ লেখা রয়েছে।
১৮৬৯ সালে মারা যান সৈয়দ। কারবালায় সমাধিস্থ করতে হয় তাঁকে। কিন্তু তাঁর ধর্মশিক্ষা, তাঁর আদর্শ আজও বহন করে চলেছে ইরানের শিয়া সমাজের বড় অংশ। পরবর্তী সময়ে ইরানের ভিত্তিও গড়ে ওঠে সেই আদর্শের উপরই। সৈয়দের ছেলে মুস্তাফা হিন্দির ছেলেই প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা রুহল্লা খোমেইনি। ১৯০২ সালে রুহল্লার জন্ম হয়। তিনি ইসলামি বিপ্লবের জনক এবং দেশের প্রথম সর্বোচ্চ শাসক।
ছয়ের দশকে পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হন রুহল্লা। শাহ মহম্মদ রেজার পেহলবির ঘোর সমালোচক ছিলেন তিনি। বলা হয়, দাদুর সঙ্গে দেখা না হলেও, সৈয়দের বিচারবুদ্ধির ধারক ও বাহক হয়ে ওঠেন রুহল্লা। ১৯৭৯ সালে পেহলবির পতন ঘটলে, রুহল্লাকে সামনে রেখেই বিপ্লব নেমে আসে ইরানে। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ শাসক হয়ে ওঠার মধ্য়েই নিজের উদার ও মুক্ত চিন্তাকে সরিয়ে তিনি কট্টর ধর্মশাসনের সমর্থক হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ শোনা যায়। তিনি যেমন আমেরিকার বিরোধী ছিলেন, তেমনই সৌদি আরব, ইজরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্কে ছেদ পড়ে। একটা সময় দেশের মুদ্রা থেকে পাঠ্যবই, সবেতে তাঁর ছবি ছাপা হতে থাকে। কিন্তু লোকচক্ষুর আড়ালে, নিজের পৃথক জীবনও ছিল রুহল্লার। কবিতা লিখতেন তিনি, লিখতেন গজ়ল। সেখানে নিজের আসল নাম ব্যবহার না করে, লিখতেন ‘হিন্দি’। তাঁর লেখালেখিতেও বার বার উঠে এসেছে ‘হিন্দে’র কথা।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের জন্ম ১৯৩৯ সালে। ইরানের বিপ্লবের সময় খোমেইনির সান্নিধ্যে আসেন খামেনেই, তাঁর শিষ্য হয় ওঠেন। এমনকি, দূর সম্পর্কের হলেও, খোমেইনির সঙ্গে পারিবারিক সংযোগ রয়েছে খামেনেইয়ের। ভারত নিয়ে সেভাবে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন না খামেনেই। তবে ইরানের অভিজাত মহলে তাঁর ভারত-সংযোগ নিয়ে চর্চা শোনা যায়। এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীর নজর ইরানের দিকে। যে কোনও মুহূর্তে পৃথিবীর ভূরাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু এই সবকিছুর সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের কিন্টুরের গভীর সংযোগ রয়েছে।






















