উদ্বোধনের আগেই খড়গপুরে আইআইটির তৈরি হাসপাতালের নাম বদল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গাঁধী থেকে জওহরলাল নেহরু, চিকিৎসক বিধান রায়ের রোগীর তালিকায় ছিল হেভিওয়েট সব নাম। মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে বিলেত গিয়ে দু’বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস, প্রায় একই সঙ্গে অর্জন করেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, তার আগের মাসেও ডাক্তারি থেকে আয় ছিল ৪২ হাজার টাকা। আর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নিজেই মাইনে বিধানচন্দ্র রায় কমিয়ে করেছিলেন ১৪০০ টাকা।
![উদ্বোধনের আগেই খড়গপুরে আইআইটির তৈরি হাসপাতালের নাম বদল Before the inauguration, the name of Kharagpur IIT Hospital was changed উদ্বোধনের আগেই খড়গপুরে আইআইটির তৈরি হাসপাতালের নাম বদল](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2021/02/20/e4ae3ab7bfb73f68e4b22382932db30e_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
বিশ্বজিৎ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: উদ্বোধনের আগেই বদলে গেল খড়গপুরে আইআইটির তৈরি হাসপাতালের নাম। বিসি রায়ের বদলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হবে হাসপাতাল। আইআইটি কর্তৃপক্ষের দাবি, বোর্ড মিটিং করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এনিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
হওয়ার কথা ছিল বিধানচন্দ্র রায়ের নামে, বিসি রায় ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ হাসপাতাল। তার বদলে হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ। হাসপাতাল চালুর আগেই নাম বদলের সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষর।
বাংলার রূপকার নামে পরিচিত বিধানচন্দ্র রায়ের পরিবর্তে, বিজেপির পূর্বসুরী, জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হাসপাতালের নামকরণের সিদ্ধান্ত ঘিরে, ভোটের মুখে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পশ্চিম মেদিনীপুরের বলরামপুরে এই হাসপাতাল তৈরি করেছে আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ। ৭৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। ২৩ ফেব্রুয়ারি ভার্চুয়ালি যার উদ্বোধন করবেন নরেন্দ্র মোদি। তার ঠিক আগেই, বদলে ফেলা হল হাসপাতালের নাম! এনিয়ে খড়গপুর আইআইটি-র রেজিস্ট্রারের দাবি, আইআইটি কর্তৃপক্ষ বোর্ড মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, হাসপাতালের নাম শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ হবে। বিসি রায়ের নামে ইতিমধ্যেই একটি হাসপাতাল রয়েছে তাই নাম বদল করা হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি, মহাত্মা গাঁধী থেকে জওহরলাল নেহরু, চিকিৎসক বিধান রায়ের রোগীর তালিকায় ছিল হেভিওয়েট সব নাম। মাত্র ১২০০ টাকা সম্বল করে বিলেত গিয়ে দু’বছরে মেডিসিন ও সার্জারির চূড়ান্ত সম্মান এম আর সি পি এবং এফ আর সি এস, প্রায় একই সঙ্গে অর্জন করেছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, তার আগের মাসেও ডাক্তারি থেকে আয় ছিল ৪২ হাজার টাকা। আর মুখ্যমন্ত্রী হয়ে নিজেই মাইনে বিধানচন্দ্র রায় কমিয়ে করেছিলেন ১৪০০ টাকা।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াও নিজ গুণে সমৃদ্ধ ছিলেন বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কমবয়সি উপাচার্য হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৩৭ সালে তাঁর আমলেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবার বাংলা ভাষায় সমাবর্তনী ভাষণ দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হিন্দি এবং উর্দু ভাষার শিক্ষাকেও প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিধান রায়ের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ভাল। কিন্তু, এখন চিকিৎসক বিধান রায়ের পরিবর্তে, শিক্ষাবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে হাসপাতালের নামকরণ নিয়ে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।
পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অজিত মাইতি জানান, ‘‘ভালো জিনিসকে দলের কুক্ষিগত করে দিতে হবে, এদের উদ্দেশ্য ভালো জিনিসকে নষ্ট করে দেওয়া, কি প্রয়োজন আছে এই নাম পরিবর্তনের, উনি সূক্ষ্ম রাজনীতি চাল দিয়ে সরকারি কাজগুলোকে পরিচালনা করতে চান ৷’’
রাজ্য বিজেপির সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ভারতের গর্ব, তৃণমূল কংগ্রেস এখানে রাজনীতি করছে, ওদের মানসিকতা খুব ছোট, ওরা ইতিহাস জানে না ৷’’
বাংলার রাশ নিয়ে এখন তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে জোর লড়াই! আর তারইমধ্যে আইআইটির হাসপাতালের নাম বদল ঘিরেও জোর রাজনীতি।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)