(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
NCRB Report: বধূ নির্যাতনে এগিয়ে বাংলা! বলছে কেন্দ্রীয় রিপোর্ট, কলকাতায় তুলনামূলক কম
Cruelty Against Women: কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবমিলিয়ে দেশে বধূ নির্যাতনের গর হার ২০.৫০ শতাংশ। সেখানে বাংলা প্রতি ১ লক্ষ বিবাহিত মহিলা পিছু বাংলার হার ৪১.৫০ শতাংশ।
কলকাতা: দেশের অন্য রাজের তুলনায় কলকাতায় অপরাধ তুলনামূলক কম বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (National Crime Record Bureau) ২০২১ সালের বধূ নির্যাতন, অর্থাৎ বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার রিপোর্টে বাংলার পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে ধরা পড়েছে। কারণ দেশের অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় মহিলাদের শ্বশুরবাড়িতে স্বামী এবং অন্যদের হাতে মহিলারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার বলে উঠে এসেছে পরিসংখ্যানে (Domestic Violence)।
আজও স্বামী-শ্বশুরবাড়ির হাতে নির্যাতনের শিকার বাংলার মেয়েরা!
বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসা সংক্রান্ত দায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো। তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮-এ ধারায় বাংলায় ১৯ হাজার ৯৫২টি বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার মামলা দায়ের হয়েছে। স্বামীস, শ্বশুরবাড়ির লোকজন, তাঁদের আত্মীয়দের হাতে নিগ্রহের ক্ষেত্রে গত বছর যত অভিযোগ দায়ের হয়, তা নিয়েই এই রিপোর্ট। বাংলার ঠিক পরেই এই তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। সেখানে গত বছর ১৮ হাজার ৩৭৫টি বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার মামলা দায়ের হয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থান। সেখানে গত বছর ১৬ হাজার ৯৪৯টি গার্হস্থ্য হিংসার মামলা দায়ের হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবমিলিয়ে দেশে বধূ নির্যাতনের গর হার ২০.৫০ শতাংশ। সেখানে বাংলা প্রতি ১ লক্ষ বিবাহিত মহিলা পিছু বাংলার হার ৪১.৫০ শতাংশ। বাংলার মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ নিয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "সমাজে আজও বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসা যে ঘটে চলেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ভারত তথা বাংলার বাস্তব পরিস্থিতি এটাই। তবে আমার মনে হয়, এর একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে। কারণ বোঝা যাচ্ছে, বাংলার মহিলারা এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আজকাল আর অভিযোগ জানাতে ইতস্তত বোধ করেন না। এবং প্রশাসনও তার প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। একটা স্বচ্ছতা যে তৈরি হয়েছে, এই রিপোর্টই তার প্রমাণ। তবে এখনও অনেক রাজ্যের মহিলারা অভিযোগ জানাতে ভয় পান।"
এই তালিকায় সবচেয়ে শেষে রয়েছে গোয়া। গত এক বছরে সেখানে বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার মাত্র একটি মামলা দায়ের হয়। নাগাল্যান্ডে এই সংখ্যাটি ছিল দু'টি, সিকিমে তিনটি। মেট্রোপলিটন শহরগুলির মধ্যে দিল্লিতে গত বছর ৪ হাজার ৭৭৪টি বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের হয়। কলকাতা শহরে বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জমা পড়ে ৮৪১টি। হায়দরাবাদ, জয়পুর এবং লখনউতে যথাক্রমে ১৬৭৮, ১২০০ এবং ১১০১টি করে অভিযোগ দায়ের হয়।
এর আগে, ২০১৯-এর রিপোর্টে রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের পর বিবাহিত মহিলার উপর গার্হস্থ্য হিংসার তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিল বাংলা। সে বছর রাজ্যে ১৬ হাজার ৯৫১টি অভিযোগ দায়ের হয়। ২০২০ সালে দায়ের অভিযোগের রিপোর্টেও প্রথম পাঁচে ছিল বাংলা।
অন্য দিকে, সামগ্রিক ভাবে কলকাতা শহর দেশের অন্য শহরের তুলনায় নিরাপদ বলেও জানিয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো। ২০২১ সালের রিপোর্টের ভিত্তিতে তিলোত্তমার মাথায় নয়া পালক যুক্ত হল। মাঝে ২০১৯ সালটিকে বাদ দিলে, গত চার বছরে এই নিয়ে তৃতীয় বার কলকাতা দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহরের তকমা পেল বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। চুরি, ডাকাতি, খুন, খুনের চেষ্টা, ধর্ষণ, নারী নিগ্রহ, দেশের অন্য রাজ্যের তুলনায় কলকাতায় এই জাতীয় অপরাধ কম বলে পরিসংখ্যান তুলে দেখানো হয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর রিপোর্টে।
তবে আগের তুলনায় বেশি সংখ্যক মেয়ে অভিযোগ জানাতে এগিয়ে আসছেন
যে সমস্ত শহরের জনসংখ্যা ২০ লক্ষের বেশি, সেখানে প্রতি ১ লক্ষ জনসংখ্যায় কত সংখ্যক অপরাধ নথিবদ্ধ হচ্ছে, তার নিরিখে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কলকাতায় খুনের ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। খুনের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে ১৩৫টি। ১১টি ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। নারী নিগ্রহের ঘটনা ১২৭টি। ডাকাতির অভিযোগ রয়েছি তিনটি এবং চুরির অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১ হাজার ২৪৬টি।
সেই তুলনায় দিল্লিতে খুনের অভিযোগ জমা পড়েছে ৪৫৪টি। ৭৫২টি খুনের চেষ্টা, ১ হাজার ২২৬টি ধর্ষণ, ১ হাজার ২৩টি নারী নিগ্রহ, ২৫টি ডাকাতি এবং ১ লক্ষ ৯৮ হাজারটি চুরির অভিযোগ জমা পড়েছে। মুম্বইতে ১৬২টি খুন, ৩৪৯টি খুনের চেষ্টা, ৩৬৪টি ধর্ষণ, ৬৪৪টি নারী নিগ্রহ, ১৬টি ডাকাতি এবং ৭ হাজার ৮২০টি চুরির ঘটনা সামনে এসেছে।