Nitish Kumar: চিরকালের জন্য দরজা বন্ধ বলেও নীতীশকে ফেরত নিলেন মোদি-শাহ, I.N.D.I.A জোটকে ছত্রখান করতেই কি?
I.N.D.I.A Alliance: শেষ বার যখন বিজেপি ত্যাগ করেন নীতীশ, সেই সময় বিজেপি-র তরফে বলা হয়েছিল, চিরকালের জন্য নীতীশের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
নয়াদিল্লি: জল্পনা সত্যি করে I.N.D.I.A জোট ছাড়লেন নীতীশ কুমার (Nitish Kumar)। পুরনো সঙ্গী NDA জোটেই ফিরে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। আর তাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে, নীতীশের এই সিদ্ধান্ত বিজেপি বিরোধী শিবিরকে জোর ধাক্কা দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। নীতীশকে পাশে পায়ে, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র হাত আরও শক্ত হল বলেও মনে করা হচ্ছে। (I.N.D.I.A Alliance)
শেষ বার যখন বিজেপি ত্যাগ করেন নীতীশ, সেই সময় বিজেপি-র তরফে বলা হয়েছিল, চিরকালের জন্য নীতীশের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফিরতে চাইলেও আর নীতীশকে ফেরত নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন খোদ অমিত শাহ। তাই আবারও নীতীশের হাত ধরা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেও। তবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিজেপি নেতৃত্ব ফের নীতীশের হাত ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। (Lok Sabha Elections 2024)
এর সপক্ষে যে যুক্তি উঠে আসছে, তা হল, গত এক বছরে বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটের অন্যতম রূপকারের ভূমিকা পালন করেছেন নীতীশ। দফায় দফায় বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে, বিরোধীদের একজোট করার দায়িত্ব যেচে পড়েই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন, সেই নিয়ে যখন টানাপোড়েন শুরু হয়, সেই সময়ও নীতীশ জানিয়েছিলেন, তিনি মুখ হতে চান না। জোটে থেকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চান।
তাই মাস দুই-তিনেকের মধ্যেই লোকসভা নির্বাচন হতে পারে বলে যখন জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে, সেই আবহে নীতীশের শিবির বদল অস্বস্তিতে ফেলেছে I.N.D.I.A শিবিরকে। নেতৃত্বের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বরাবর শিবির বদল করে এসেছেন যে নীতীশ, তাঁকে আহ্বায়ক হতেই বা কোন আক্কেলে আহ্বান জানিয়েছিলেন বিরোধী শিবিরের নেতারা, প্রশ্ন উঠছে। আর সেই আবহে নীতীশকে ভাঙিয়ে নিয়ে কার্যতই নিজেদের হাত শক্ত করল BJP. ভোটবাক্সে এর প্রভাব যদি না-ও পড়ে, নীতীশকে ভাঙিয়ে এনে I.N.D.I.A জোট যে স্থিতিশীল নয়, বিজেপি তা প্রমাণ করতে সফল হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এদিন নীতীশও সেই বার্তাই দিয়েছেন। যে I.N.D.I.A জোট গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন তিনি, নিজে কেন সেই জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন, জানতে চাওয়া হয় নীতীশের কাছে। উত্তরে নীতীশ বলেন, "খুব পরিশ্রম করেছিলাম। জোটকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তাই সিদ্ধান্ত নিতে হল আমাকে।" শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বার বার নীতীশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। অর্থাৎ ভাবনা-চিন্তা করেই I.N.D.I.A ছেড়ে বেরিয়ে এলেন নীতীশ। জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নীতীশ NDA শিবিরে চলে আসার অর্থ, বিহারেও সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে যাওয়া। সেই নিরিখেও নীতীশকে পাশে পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিজেপি। আসন সমঝোতা নিয়ে এমনিতেই বাংলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্জাবেও আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেসের জোটে ফাটল ধরেছে। বিহারে RJD এবং নীতীশের দল JD (U)-এর মধ্যে ভাঙন ধরলে, I.N.D.I.A জোট গোড়াতেই ধাক্কা খাবে বলে আঁচ করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই বৃহত্তর স্বার্থেই নীতীশকে ফেরত নিতে রাজি হয়ে যান তাঁরা।
নীতীশকে পাশে পেলে বিহারেও লাভ রয়েছে বিজেপি-র। কারণ এর আগে, জোট সরকার থাকাকালীন, কার্যতই নামমাত্র মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নীতীশ। রিমোট ছিল দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের হাতে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ফলও খারাপ করে নীতীশের দল। সেই তুলনায় অনেকটাই এগিয়েছিল বিজেপি। পাশাপাশি, বার বার শিবির বদলেও নীতীশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তাই আপাতত নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী থাকলেও, বিহারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে বিজেপি-র হাতেই। আগেই যেহেতু নীতীশ 'পল্টুরাম' উপাধি পেয়েছেন, তাই এখানে ঘোড়া কেনাবেচার দায়ও বিজেপি-র উপর বর্তাবে না।