আমফান ত্রাণে দুর্নীতি? ক্যাগকে তদন্তভার কলকাতা হাইকোর্টের
একাধিক মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি ক্যাগকে দেখতে হবে, কী পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। কারা বিলি করেছেন ত্রাণ?
কলকাতা: আমফান নিয়ে এবার উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগ। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবার বড়সড় নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্তভার দেওয়া হল কেন্দ্রীয় সংস্থা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল তথা ক্যাগকে। তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে তিন মাসের মধ্যে। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে রাজ্যে আমফান বেনজির ধ্বংসলীলা, ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তছনচ হয়ে যায় কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। ত্রাণের জন্য চারদিকে হাহাকারের ছবি সামনে আসে। সেই ত্রাণ বিলি নিয়েই স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজ্য। দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কের জল গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। দুর্নীতির অভিযোগে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং-সহ মামলা করেন ৫ জন।
একাধিক মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চের এই নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি ক্যাগকে দেখতে হবে, কী পদ্ধতিতে ত্রাণ বিতরণ হয়েছে। কারা বিলি করেছেন ত্রাণ? ঘূর্ণিঝড়ের জেরে মোট কতগুলি পরিবারের ক্ষতি হয়েছে? ক্ষতিপূরণ পেয়েছে এবং পায়নি, এমন পরিবারের সংখ্যা কত? এই ঘটনার জন্য কারা দায়ী?
যদিও হাইকোর্টের এই নির্দেশের পর মামলাকারীদের আইনজীবীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের তরফে আইনজীবী শমিক বাগচি বলেন, অনেক সময় তদন্ত চলাকালীন বিভিন্ন প্রকল্প আটকে যায়। এক্ষেত্রেও ত্রাণ বিলি বন্ধ হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিপাকে পরবে। এরপরই প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দেন তদন্তের সঙ্গে ত্রাণ বিলির কোনও সম্পর্ক নেই। তদন্তের পাশাপাশি ত্রাণ বিলিও হবে। মামলাকারীর তদন্ত করে ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে ক্যাগকে।
এদিকে ত্রাণ বিলি নিয়ে প্রথম থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। কাঠগড়ায় তুলেছে তৃণমূল সরকারকে। হাইকোর্টের রায়ের পর নিজেদের জয় দেখছে তারা। এবিষয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ি বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কৃষক সভা হাইকোর্টে গিয়েছিল, তার ভিত্তিতে রায় দিয়েছে। সরকারের উপর আস্থা না রেখে ক্যাগকে তদন্তভার দিয়েছে আদালত। প্রথম থেকেই কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। হাইকোর্টও তাই বলছে। এই হচ্ছে রাজ্য সরকারের অবস্থা। একইভাবে রাজ্য সরকারকে এক হাত নিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়।
পাল্টা এদিন দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে আমফানের পর সরকারের মানুষের পাশে থাকার দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্য়ের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতি নয়। হাইকোর্ট তদন্তভার দিয়েছে। রাজ্য সরকার ক্যাগের কাছে সব রিপোর্ট দিয়ে দেবে।