১৫% ডিএ বৃদ্ধি, বছরে বাড়তি ৮ দিন ছুটি, রাজ্য সরকারি কর্মীদের জোড়া উপহার মুখ্যমন্ত্রীর
কলকাতা: পুজোর আগেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য পুজোর উপহার দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, আগামী বছর ১ জানুয়ারি ১৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৯-এর মধ্যে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়া হবে, আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর।
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ইউনিয়ন, রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকা সভায় ডিএ-র কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগামী বছর ১ জানুয়ারি ১৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়া হবে। আওতায় থাকবেন সরকারি কর্মচারী, টিচিং, নন-টিচিং স্টাফ সকলে।’ মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘২০১৯ সালের মধ্যে বাকি ডিএ দিয়ে দেব। সরকারের সঙ্গে থাকুন, সরকার আপনার সঙ্গে থাকবে।’
একইসঙ্গে, কর্মীদের ডিএ-অসন্তোষকে হাতিয়ার করে শুরু আন্দোলনের তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘ডিএ নিয়ে অসত্য প্রচার করা হচ্ছে। ইউনিয়নের দোহাই দিয়ে আমাকে চাপ দিয়ে লাভ নেই। তারা জানে না টাকা কোথা থেকে আসবে?’ এই প্রসঙ্গে তিন পূর্বতন বাম সরকারকেও আক্রমণ করেন। বলেন, ‘পূর্বতন সরকার কেন টাকা ধার করেছিল? কী করে আয় বাড়াতে হয় জানত পূর্বতন সরকার?’ শুধু দেনা করে গেছে।’
এখানেই থেমে না থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল বাম সরকার। তাও কেন ডিএ সমস্যা মেটেনি?। এখন সরকারি কর্মচারীরা ঠিক সময়ে মাইনে পান। সরকারি কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, ‘নিয়মিত মাইনে চান, না ডিএ? কাজ ঠিক সময়ে হবে।’ সরকারের প্রচুর দেনা, তাও কাজ হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের ডিএর বর্তমান তফাত ৫৪ শতাংশ। সরকারের এদিনের ঘোষণার পর তা কমে দাঁড়াবে ৩৯ শতাংশ।
মহার্ঘভাতার পাশাপাশি, ক্যালেন্ডার বর্ষে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাড়ানোর কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বছর ছিল ২৭ দিন। আগামী বছর বেড়ে তা ৩৫ দিন করা হয়েছে। এপ্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগে তো কোনও সরকার ভাবেইনি।
এছাড়া, সরকারি কর্মীদের জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, সরকারি কর্মীদের সিঙ্গাপুর, অক্সফোর্ডে প্রশিক্ষণের সুযোগ হবে। সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হবে। বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পুজোর বোনাস বাড়িয়ে ১০০০ টাকা থেকে ৩৬০০ টাকা হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় ৫৫.৫ লক্ষ মানুষ। একইসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সরকারি টাকা অপচয় ঠিক নয়।
সরকারি কর্মচারীদের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে এদিন কড়া দাওড়াই দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বার্তা, অযথা ফাইল আটকে রাখবেন না। ফাইল তাড়াতাড়ি ছাড়তে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী নয়, আগামীতে গর্ব করবেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। তিনি বলেন, কর্মসংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে যাতে বাল ব্যবহার করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাল ব্যবহার করলে সরকারের ভাবমূর্তি ভাল হবে। ভাল করলে ভাল হবে। বি ডিসিপ্লিন। বি ডিটারমাইন্ড। বি পজিটিভ, থিঙ্ক পজিটিভ। সাভিস উইথ স্মাইল। হাসিমুখে জনগণের কাজ করুন। মানুষের পাশে থাকুন, বাকিটা আমার উপর ছেড়ে দিন।
নিচু তলার সরকারি কর্মীদের বদলি নিয়ে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এখন অফিসাররা বদলি হলে ছেলেমেয়েদের ভর্তির জন্য সাধারণ কর্মীরাও যাতে এই সুবিধা নতুন নির্দেশিকা দারা হবে বলে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। আবার পদন্নোতি নিয়ে গাইডলাইন তৈরির ঘোষণা করেন তিনি। বলেন, প্রোমোশনের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হবে। সাধারণ অফিসারদের জন্য যুগ্মসচিব পর্যায়ে যেতে পারে তার জন্য মুখ্যসচিবের নেতৃত্ব কমিটি। সাধারণ কর্মীদের প্রমোশনের জন্য গাইড লাইন তৈরিতেও কমিটি। এর মাথায় থাকছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।