৯ প্রার্থীর হোয়াটসঅ্যাপে জমা দেওয়া মনোনয়ন গ্রহণ করুক কমিশন, অন্যথায় নির্বাচন প্রক্রিয়া ফের স্থগিতের হুঁশিয়ারি:হাইকোর্ট
কলকাতা: নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো মনোনয়ন গ্রহণের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে ভাঙড়ের পোলেরহাট ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে ১১ জন প্রার্থী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তার প্রেক্ষিতে সোমবার দুপুর আড়াইটেয় বিচারপতি সুব্রত তালুকদার নির্দেশ দেন, আধ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এই ১১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন জমার ব্যবস্থা করতে হবে। কমিশন তা না করতে পারলে সেটা আদালত অবমাননার সামিল হবে। এরপর আলিপুরের প্রশাসনিক ভবনে গেলেও মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়নি ভাঙড়ের ১১ জন প্রার্থীর। এঁদের মধ্যে ৯ জন হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে বিডিওর কাছে মনোনয়নপত্র পাঠান। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের শুনানিতে মামলাকারী শর্মিষ্ঠা চৌধুরী বলেন, সোমবার আলিপুর প্রশাসনিক ভবনে আমরা আক্রান্ত হয়েছিল। মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। সব পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কোনও নথি আমাদের কাছে নেই। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব আদালতকে জানান, হোয়াটস অ্যাপে পাঠানো ৯টি মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। বিচারপতি তখন শর্মিষ্ঠাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের মনোনয়ন তো গৃহীত হয়েছে। শর্মিষ্ঠা বলেন, কমিশন এখন বলছে গৃহীত হয়েছে। কিন্তু স্ক্রুটিনির সময় নানা কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করে দেওয়া হতে পারে। ভোটে লড়ার জন্য যে টাকা জমা করার কথা, সেটাও এখনও নেওয়া হয়নি। তাই আমরা মনে করছি নানা অজুহাতে ভাঙড়ের ৯ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দেওয়া হতে পারে। আদালত হস্তক্ষেপ করুক। সব শুনে বিচারপতি কমিশন সচিবের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা ৯টি মনোনয়নপত্রকে বৈধ বলে ঘোষণা করবেন। এই ৯ জন যেন ভোটে লড়তে পারেন। কোনওরকম অজুহাতে এদের মনোনয়ন যেন বাতিল না হয়। এই প্রক্রিয়ার কোনওরকম অন্যথা হলে, গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়া আমরা বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু সেটা যাতে না করতে হয়, কমিশন বিষয়টি নজরে রাখবে। আর হাইকোর্টের এই রায়ে আশার আলো দেখছেন আইনজ্ঞ মহলের একাংশ। তাদের বক্তব্য, এর ফলে আগামী দিনে সার্বিকভাবে অনলাইনে ভোটের মনোনয়ন জমার দরজা খুলে যেতে পারে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, আমি আগেই হাইকোর্টে বলেছিলাম, অনলাইনে মনোনয়ন জমা নেওয়া হোক। হাইকোর্টের নির্দেশের পর কমিশনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে বামেরা। সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে যদি যেতে পারে, তাহলে আমরা যেগুলো অনলাইনে পাঠিয়েছিলাম সেগুলোও কমিশনকে জমা নিতে হবে। আমরা অনলাইনের মনোনয়নগুলো আবার পাঠাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সোশাল মিডিয়ায় রমরমা। মানুষে-মানুষে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এখন হয়ে উঠেছে হোয়াটস অ্যাপ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে, সেই হোয়াটস অ্যাপই হয়ে গেল মনোনয়ন পেশের মাধ্যম!! অনেকেই বলছেন, সব ভোটেই যদি এই পদ্ধতি চালু করা যায়, তাহলে অনেকটাই কমতে পারে ভোট সন্ত্রাস। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য, যেখানে ভোট মানেই হিংসা, সেখানে অনলাইনে মনোনয়ন জমা শুরু হলে, তা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।