নাসিংহোম, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে নজরদারি চালাতে ৩ মার্চ আসছে রেগুলেটরি কমিশন বিল, ঘোষণা মমতার
কলকাতা: একের পর এক অভিযোগ। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর। ইচ্ছেমতো বিল ধরানো কিম্বা চিকিৎসায় গাফিলতি আর বরদাস্ত নয়। আরও কড়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আইন। তৈরি হচ্ছে নয়া কমিশন। বেসরকারি হাসপাতালগুলির একাংশের মর্জিতে লাগাম পরাতে জোড়া দাওয়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রোগীদের স্বার্থে দিলেন গুচ্ছ পরামর্শ। সামনে বসিয়ে একে একে অভিযোগ শোনালেন। কথা বললেন। কাউকে মাঝপথেই থামালেন। শেষে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিলেন, চড়া বিল আর বরদাস্ত নয়! তাই লাগাম টানতে জোড়া পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। এক, ‘ক্লিনিক্যাল এসটাবলিস্টমেন্ট অ্যাক্ট’-কে আরও কড়া করা। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ক্লিনিক্যাল এসটাবলিস্টমেন্ট অ্যাক্ট আরও কড়া করতে হবে। যারা ভাল কাজ করবে তাদের সরকার পূর্ণ সমর্থন করবে। কিন্তু যারা খারাপ কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে দায়বদ্দ থাকবে। ৩ তারিখই বিধানসভায় বিল পেশ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় কড়া পদক্ষেপ হল, বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাজকর্মের উপর নজর রাখতে কমিশন তৈরি করা। বললেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ রেগুলেটরি কমিশন তৈরি করবে।। ৩ তারিখ বিধানসভায় বিল আনা হবে। কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যাতে কোনও অভিযোগ না ওঠে, তা সুনিশ্চিত করতে, কমিশনে থাকছে সবপক্ষের প্রতিনিধিত্ব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান/অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, কিম্বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মাথায় থাকবেন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ সহ ৯+১ জনের কমিটি। ক্রেতা, সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্য সচিবের মতো লোকেরা থাকবেন। ‘স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন’ ঠিক কী কাজ করবে, বিল পেশের আগে তারও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মমতা। বললেন, বিলিং থেকে পারফরম্যান্স, সবের ওপর নজরদারি চালাবে। প্রতি মাসে আমার কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। শেষে আছে, মানুষের দাবি-অভিযোগ নিয়ে কিছুটা সুরাহা হবে। স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যে আর পাঁচটা ব্যবসার মতো নয়, তা সরাসরি বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দিলেন, আরও মানবিক হওয়ার পরামর্শ। বললেন, জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ফেরানো যাবে না। রোগীদের প্রতি মানবিক হোন। আগে অক্সিজেন, স্যালাইন, পরে পয়সার হিসেব। টাকার জন্য দেহ আটকে রাখবেন না। হাসিমুখে চিকিৎসা করুন।মনোভাব বদলান, অবস্থা বদলাবে। চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগে, কয়েকদিন আগেই ভাঙচুর হয়েছিল সিএমআরআই হাসপাতালে। কী ভাবে এই পরিস্থিতি এড়ানো যায়, টাউন হলের বৈঠকে তারও দিকনির্দেশ করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, রোগীর মৃত্যু হলে পরিজনের পাশে দাঁড়ান। ওদের মাথার ঠিক থাকে না। প্রিয়জন চলে গেলে মন খারাপ থাকে। কেউ কাঁদে। কেউ ভাঙচুর করে। রোগীর পরিবারের পাশে থেকে ওদের কথা শুনুন। অভিযোগ নথিবদ্ধ করুন। বারবারই অভিযোগ ওঠে, প্রতিদিনের চিকিৎসা সম্পর্কে রোগীর পরিজনদের অন্ধকারে রেখে দেয় বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশ। গোটা বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে, ই প্রেসক্রিপশন চালুর পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ওয়েবসাইটে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব তথ্য দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রোগীদের ডেটাবেস সংরক্ষণের পাশাপাশি রোগী সহায়তা কেন্দ্র চালুরও আবেদন করেছেন তিনি। বলেছেন, নিয়ম মেনে রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখার কথা। বলেন, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট। সেখানে ঢুকিয়ে তো ক্রিটিক্যাল করে দিচ্ছেন! অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাবেন না।কথায় কথায় সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসকের সুপারিশ এড়ান। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও সংক্রমণ ঠেকানোর বিষয়টি বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে গুরুত্ব দিয়ে দেখে, বৈঠকে সে বার্তাও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি চান, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল পাশাপাশি চলুক। তাই বেসরকারি হাসপাতালগুলির প্রতি তাঁর আহ্বান, অ্যাটিটিউড বদলান, অবস্থা বদলাবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ, নতুন নয়। যত সময় এগিয়েছে, ততই লম্বা হয়েছে সেই তালিকা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের জন্য, এতদিন সেইভাবে প্রশাসনের শীর্ষস্তরের তরফে প্রকাশ্যে এরকম তৎপরতা দেখা যায়নি। বেসরকারি হাসপাতালের মাথাদের নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী খোলাখুলি আলোচনা করছেন, তাদের কথা শুনছেন, দাওয়াই দিচ্ছেন--এমন ছবি সাম্প্রতিক অতীতে অনেকেই মনে করতে পারছেন না। টাউন হলের বৈঠকের পর বেসরকারি হাসপাতালগুলির মনোভাবের কতটা পরিবর্তন হয়, সেদিকেই তাকিয়ে সাধারণ মানুষ।