Ladakh Shivaji Statue Row: লাদাখে প্যাংগং হ্রদের ধারে শিবাজির মূর্তি কেন? বিশেষ আদর্শে দীক্ষিত করার চেষ্টা? অভিযোগ ঘিরে জোর বিতর্ক
Ladakh News: গত ২৬ ডিসেম্বর লাদাখের পূর্ব দিকে, প্যাংগং হ্রদের ধারে ছত্রপতি শিবাজির ওই মূর্তির উদ্বোধন হয়।
লেহ্: লাদাখে ছত্রপতি শিবাজির মূর্তি বসানো ঘিরে বিতর্ক চরমে উঠল। স্থানীয় বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন যেমন, তেমনই সেনার প্রাক্তন অধিকর্তারাও এর বিরোধিতা করেছেন। ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে লাদাখ, সেখানে বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে টানাপোড়েন চরমে।
গত ২৬ ডিসেম্বর লাদাখের পূর্ব দিকে, প্যাংগং হ্রদের ধারে ছত্রপতি শিবাজির ওই মূর্তির উদ্বোধন হয়। মূর্তি উন্মোচন করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিতেশ ভল্লা। তিনি লেহ্-তে সেনার ১৪ কর্পের জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং। মারাঠা লাইট ইনফ্যান্ট্রি-র অনুদানে শিবাজির মূর্তিটি প্যাংগং হ্রদের ধারে বসানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্যাংগং হ্রদের ধারে শিবাজির মূর্তি বসানো নিয়ে সেনার যুক্তি, সকলের মধ্যে শিবাজির চেতনা জাগ্রত করতে, তাঁর উত্তরাধিকার ধরে রাখাই তাঁদের উদ্দেশ্য, যাতে আগামী প্রজন্মও উৎসাহ পায়। সেই সঙ্গে শিবাজিকে শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে সেনা। কিন্তু লাদাখে শিবাজির মূর্তি বসানো নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে সেনাকেও।
As a local resident, I must voice my concerns about the Shivaji statue at Pangong. It was erected without local input, and I question its relevance to our unique environment and wildlife. Let's prioritize projects that truly reflect and respect our community and nature. https://t.co/7mpu3yceDp
— Konchok Stanzin (@kstanzinladakh) December 29, 2024
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সেনার প্রাক্তন অধিকারিক থেকে স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের দাবি, লাদাখের সঙ্গে শিবাজির কোনও সংযোগ নেই। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল বীরেন্দ্র সিংহ ধনোয়া সংবাদমাধ্যমে বলেন, "সেনার বিশেষ শ্রেণির লোকজন এখন সামরিক ক্ষেত্রে নিজেদের পূর্বপুরুষের মূর্তি বসাচ্ছেন।" ১৯ শতকে যে জোরাবর সিংহ, হিমালয় অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাঁর মূর্তি না বসিয়ে শিবাজির মূর্তি কেন বসানো হল, প্রশ্ন তুলেছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সঞ্জয় পান্ডেও। উদাহরণ তৈরি করতেই দেশের সর্বত্র মূর্তি বসানোর হিড়িক শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
শিবাজির ওই মূর্তি উন্মোচিত হওয়ার পর মুখ খোলেন পূর্ব লাদাখের চুসুলের কাউন্সিলর কোংচক স্তানজিংও। ইন্দো-চিন সামরিক এবং কূটনৈতিক ভরকেন্দ্র লাদাখে শিবাজির মূর্তি বসানোর যৌক্তিকতা কোথায়, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কোংচকের কথায়, "স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে প্যাংগং হ্রদের ধারে শিবাজির মূর্তি বসানো নিয়ে উদ্বেগের কথা জানাতেই হচ্ছে। স্থানীয়দের মতামত না নিয়েই মূর্তি বসানো হয়েছে।" লাদাখের সঙ্গে শিবাজির কী সম্পর্ক প্রশ্ন করেন তিনি। লাদাখের স্থানীয় মানুষজন, লাদাখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা মাথায় রেখে কোনও প্রকল্প গড়লে এর চেয়ে ঢের ভাল হতো বলে মত তাঁর।
SHRI CHHATRAPATI SHIVAJI MAHARAJ STATUE AT PANGONG TSO, LADAKH
— @firefurycorps_IA (@firefurycorps) December 28, 2024
On 26 Dec 2024, a majestic statue of Shri Chhatrapati Shivaji Maharaj was inaugurated on the banks of Pangong Tso at an altitude of 14,300 feet.
The towering symbol of valour, vision and unwavering justice was… pic.twitter.com/PWTVE7ndGX
লাদাখে ড্রাগন বাহিনীকে ঠেকাতে শিবাজি সাহায্য করবেন কি না, প্রশ্ন তুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মন্ত্রী নইম আখতার। তাঁর বক্তব্য, 'আমার তো মনে হয় চিনই শিবাজির রণকৌশল অনুসরণ করছে'। সমাজকর্মী তথা রাজনীতিসক সাজ্জাদ কার্গিলের মতে, জোর করে অন্য সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে লাদাখে। এ ব্যাপারে স্থানীয়দের মতামত কেন নেওয়া হল না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনিও। মহারাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে শিবাজিকে নিয়ে আবেগ থাকলেও, রাজনৈতিক ভাবে প্রাসঙ্গিক লাদাখে তাঁর কী ভূমিকা, প্রশ্ন তুলেছেন। আঞ্চলিক মানুষজনের আবেগ, অনুভূতিকে সম্মান জানানো হচ্ছে না বলে মত তাঁর। সাজ্জাদের কথায়, 'লাদাখের ইতিহাস সংরক্ষণ করা উচিত। খ্রি সুলতান চো, আলি শের খান অঞ্চনের সঙ্গে জড়িয়ে লাদাখের ইতিহাস'। পরিবেশগত ভাবে স্পর্শকাতর লাদাখে এই ধরনের মূর্তি অপ্রয়োজনীয় বলেও জানান তিনি।
Hoping that Shivaji will keep the dragon away the same way he killed Afzal Khan. China by the way seems to be following Shivaji’s war strategy and wearing the anti Afzal weapon. https://t.co/m6Ui2gPgVY
— Naeem Akhtar (@shangpal) December 30, 2024
লাদাখে যদি মূর্তি বসাতেই হতো, তাহলে জোরাবর সিংহের মূর্তি কেন বসানো হল না কেন, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। দোগরা-রাজপুর শাসক গুলাব সিংহের সেনা জেনারেল ছিলেন জোরাবর। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখ জয় করে ওই অঞ্চলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেই সময় লাহৌরের মহারাজা রঞ্জিত সিংহের শিখ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল লাদাখ। তাঁকে বাদ দিয়ে, লাদাখের স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক চরিত্রদের বাদ দিয়ে কেন শিবাজির মূর্তি বসানো বল, প্রশ্ন স্থানীয় মানুষজনেরও।
লাদাখে শিবাজির মূর্তি ঘিরে বিতর্কের পাশাপাশি, শিবাজির ভাবনা-চিন্তাকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠছে বেশ কিছু দিন ধরেই। সম্প্রতি নৌবাহিনীর প্রতীক চিহ্ন পাল্টে দেওয়া হয়। সেই নিয়েও বিতর্ক বাধে। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার আসলে সশস্ত্র বাহিনীর রাজনৈতিকরণ ঘটাচ্ছে বলে ওঠে অভিযোগ।