ওপারে অ্যাম্বুলেন্স,দুর্যোগে উত্তাল মুড়িগঙ্গা, কাকদ্বীপে পৌঁছতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু শিশুর
ঘূর্ণিঝড়ে উন্মত্ত প্রকৃতির দাপটে বিপর্যস্ত গঙ্গাসাগরের জনজীবন। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একের পর এক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই প্রতিকূলতাই প্রাণ কাড়ল নাবালকের।
হিন্দোল দে, সাগর: উত্তাল মুড়িগঙ্গার একপারে অপেক্ষায় অ্যাম্বুল্যান্স। অন্য পারে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে নদী পেরনোর চেষ্টায় মা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। অভিযোগ, সময়ে কাকদ্বীপে পৌঁছতে না পারায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল ৯ বছরের স্কুলপড়ুয়ার! দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে মর্মান্তিক ঘটনা। আগে জানালে ব্যবস্থা নিত প্রশাসন। দাবি কাকদ্বীপের মহকুমাশাসকের।
প্রকৃতির কাছে মানুষ, ভীষণ....ভীষণ অসহায়! সদ্য নাতি হারা প্রৌঢ়ার বিলাপ আর মুড়িগঙ্গার উত্তাল ঢেউ, যেন সেই চরম সত্যিটা আরও একবার মনে করিয়ে দিল।ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।একদিকে বঙ্গোপসাগর...আরেকদিকে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদ-নদী।
ঘূর্ণিঝড়ে উন্মত্ত প্রকৃতির দাপটে বিপর্যস্ত গঙ্গাসাগরের জনজীবন। মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একের পর এক গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এই প্রতিকূলতাই প্রাণ কাড়ল নাবালকের।
৯ বছরের অভিনব প্রধান ক্লাস ফোরে পড়ত। সাগরের মন্দিরতলা গ্রামে বাড়ি। দুর্যোগের মধ্যেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অভিনব। পরিজনদের দাবি, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাড়াবাড়ি হওয়ায়, অভিনবকে নিয়ে যাওয়া হয় সাগরের রুদ্রনগর গ্রামীণ হাসপাতালে। কিন্তু, অবস্থা খারাপ হতে অভিনবকে রেফার করে দেওয়া হয় কলকাতায়।পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কাকদ্বীপে থাকা আত্মীয়দের সঙ্গে।জোগাড় হয় অ্যাম্বুল্যান্স।কিন্তু, উত্তাল নদী পেরিয়ে তাকে নিয়েই যাওয়া যায়নি হাসপাতাল অবধি।কার্যত লকডাউনের কারণে এমনতিই ফেরি বন্ধ।তারওপর এমন ভয়াবহ দুর্যোগ।
নদীর একপারে অপেক্ষায় রইল অ্যাম্বুল্যান্স...আর অন্য পারে নিজের ছেলেকে, একটু একটু করে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে দেখলেন মা। সত্যিই অসহনীয় এক পরিস্থিতি।
কাকদ্বীপের মহকুমাশাসকের দাবি, বিষয়টি প্রশাসনের নজরেই আনা হয়নি। শিশুর পরিবারের সদস্যরাও কেউ যোগাযোগ করেননি। জানতে পারলে, হাজারও প্রতিবন্ধতা থাকলেও, আমরা শিশুটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতাম।
৯ বছরের অভিনব ভালো গান করত। সে গান আর কোনওদিন শোনা যাবে না। নদীর পাড়ে কার্যত বিনা চিকিৎসায় প্রাণ গেল ছোট্ট ছেলেটার। অসহায় পরিবারের সদস্যদের কান্না মিশল মুড়িগঙ্গার জলে।