Harvard Sues Trump Administration: ‘নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছে সরকার’, টাকা আটকানোয় এবার ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
Donald Trump: হার্ভার্ড-সহ আমেরিকার ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বজ্রআঁটুনিতে বেঁধে ফেলতে বেশ কিছু নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়।

নয়াদিল্লি: আমেরিকায় সরকারের সঙ্গে বেনজির সংঘাত বিশ্বপ্রসিদ্ধ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির। বরাদ্দ বন্ধ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি আদালতে মামলা ঠুকলেন হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। হার্ভার্ড-সহ আমেরিকার ঐতিহ্যশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বজ্রআঁটুনিতে বেঁধে ফেলতে বেশ কিছু নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়। হার্ভার্ড গোড়াতেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেয়। এর পাল্টা হার্ভার্ডের বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় ট্রাম্প সরকার। সেই নিয়েই এবার যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতে মামলা করলেন হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। যেভাবে হার্ভার্ডের বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে, গ্রান্টের উপর শর্ত আরোপ করা হয়েছে তাকে বেআইনি ঘোষণা করার পাশাপাশি, হার্ভার্ডের আইনি প্রক্রিয়ার খরচ খরচাও সরকারে দিতে হবে বলে জানিয়ে মামলা করা হয়েছে। (Harvard Sues Trump Administration)
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার লিখিত বিবৃতিতে বলেন, ‘বেআইনি দাবিদাওয়া মানতে না চাওয়ায় গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। সরকারের এই বাড়াবাড়ির পরিণতি গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠতে পারে। হার্ভার্ডের শিক্ষা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সরকার, তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় তহবিলে হার্ভার্ডের বরাদ্দ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত। সরকারের পদক্ষেপ সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক স্বাধীনতার পরিপন্থী, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন এবং বিধিরও বিরোধী”। ট্রাম্প সরকারের আচরণকে ‘স্বৈরাচারী’ এবং ‘খামখেয়ালি’ বলেও উল্লেখ করেছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট। (Donald Trump)
ট্রাম্প সরকার বরাদ্দ বন্ধ রাখায় পেডিয়াট্রিক ক্যান্সার, অ্যালজাইমার্স এবং পারকিনসন্স নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজ থমকে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট গার্বার। তিনি নিজে ইহুদি। প্যালেস্তাইনের সমর্থনে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলবে না বলে শর্ত দেয় ট্রাম্প সরকার। ইহুদিবিদ্বেষ দূর করতে বাইরের সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে হবে, যারা সরকারকে রিপোর্ট দেবে বলেও শর্ত দেওয়া হয়। সেই নিয়ে হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট গার্বার জানিয়েছেন, ইহুদিবিদ্বেষ থেকে মুসলিমবিদ্বেষের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দু’টি টাস্কফোর্স রয়েছে। তারাই সেই রিপোর্ট দেবে।
দ্বিতীয় বার আমেরিকায় ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মধ্যেই দেশের তাবড় ইউনিভার্সিটিতে বেশ কিছু বিধিনিয়ম কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছেন ট্রাম্প। গত কয়েক মাস ধরে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালেস্তাইনের সমর্থনে সরব হয়েছেন পড়ুয়ারা। ইজরায়েলের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা প্রকৃতপক্ষে প্যালেস্তাইনে গণহত্যায় মদত জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। আর তাতেই ইউনিভার্সিটিতে কড়া বিধিনিষেধ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে ট্রাম্প সরকার। সেই মতো দেশের তাবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একগুচ্ছ নির্দেশাবলী পাঠানো হয়। বৈচিত্র, সাম্য এবং সকলের অন্তর্ভুক্তির নীতি থেকে সরে এসে বিদেশি পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়ার ক্ষেত্রে বাছবিচারে জোর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, বিদেশি পড়ুয়ারা সন্ত্রাসী সংগঠনকে সমর্থন করেন কি না, তাঁরা ইহুদিবিদ্বেষী কি না, ভর্তি নেওয়ার আগে তা যাচাই করতে হবে। পৃথিবীর বঞ্চিত, শোষিত দেশের পড়ুয়াদের বিশেষ সুযোগ দেওয়ার যে রীতি রয়েছে আমেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে, তার পরিবর্তে মেধাকেই মাপকাঠি করতে হবে।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, 'এই ধরনের অবৈধ নীতি আমেরিকার নাগরিক অধিকারের মূল নীতি এবং চেতনাকেই শুধু লঙ্ঘন করে না, আমাদের জাতীয় ঐক্যও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ এই ধরনের নীতির জেরে পরিশ্রম, মেধাকে অস্বীকার করে। এতে আমেরিকার মূল্যবোধকে অসম্মান করা হয়। এই ব্যবস্থা পরিচয় ভিত্তিক লুণ্ঠনের সুযোগ তৈরি করে দেয়'।
যদিও হার্ভার্ড গোড়াতেই জানিয়ে দেয়, সরকারি নির্দেশাবলী পালন করবে না তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে কী পড়ানো হবে, কাকে ভর্তি নেওয়া হবে, কাকে নিয়োগ করা হবে, কী কী বিষয় থাকবে, তা কোনও সরকার ঠিক করে দিতে পারে না’। হার্ভার্ডের পাশে দাঁড়িয়েছেন আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও। শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধীনতা হরণের বেআইনি চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড নজির স্থাপন করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার ট্রাম্প সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করল হার্ভার্ড।
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার হার্ভার্ডের জন্য গ্রান্ট বাবদ যে ২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছিল, তা বাজেয়াপ্ত করার কথা জানায় হোয়াইট হাউস, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি, আরও ৬০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তিও স্থগিত রাখা হয়, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। শুধু হার্ভার্ড নয়, কলম্বিয়া, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, জন হপকিন্স, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, নর্থ-ওয়েস্টার্ন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ইন বার্কলি অ্যান্ড লস অ্যাঞ্জেলস, ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াও এই তালিকায় রয়েছে।
ইতিমধ্যেই কলম্বিয়ার ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান আটকে দিয়েছে ট্রাম্প সরকার, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ৪ মিলিয়ন ডলার, কর্নেল ইউনিভার্সিটির ১ বিলিয়ন ডলার, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ৭৯০ মিলিয়ন ডলার অনুদান আটকানো হয়েছে। জন হপকিন্সের ২০০০ কর্মীকে ছাঁটাই করতে বলা হয়েছে।






















