Hyderabad Surrogacy Racket: ৯০ হাজারে কিনে ৩৫ লক্ষে শিশু বিক্রি, নিঃসন্তান দম্পতিদের সঙ্গে প্রতারণা, IVF-এ আড়ালে অপরাধচক্রের পর্দাফাঁস হায়দরাবাদে
Surrogacy Racket Case: হায়দরাবাদের গোপালপুরমে অবস্থাতি Universal Srushti Fertility Center-এর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এসেছে।

হায়দরাবাদ: কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণের আড়ালে জালিয়াতি চক্র। হায়দরাবাদে গ্রেফতার IVF ক্লিনিকের চিকিৎসক-সহ অনেকে। IVF ও সারোগেসি ক্লিনিক চালানোর নামে সেখানে শিশুপাচার চক্র চলছিল বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, সারোগেসির নামে শিশু বিক্রি, অপহরণের অভিযোগও সামনে এসেছে। পাশাপাশি, শুক্রাণু পাচারের অভিযোগও উঠছে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। (Surrogacy Racket Case)
হায়দরাবাদের গোপালপুরমে অবস্থাতি Universal Srushti Fertility Center-এর বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে এসেছে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, ৬৪ বছর বয়সি পি নম্রতা, সরকারি হাসপাতালের অ্যানাস্থেটিস্ট ৪১ বছর বয়সি নরগুলা সদানন্দম, নম্রতার ছেলে, ২৫ বছর বয়সি পি জয়ন্ত কৃষ্ণ, ক্লিনিকের দুই কর্মী ৪০ বছর বয়সি সি কল্যাণী,৩৭ বছর বয়সি জি রাও, ৩৮ বছর বয়সি ধনশ্রী সন্তোষী-সহ কয়েক জন টেকনিশিয়ানকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, শিশুপাচারের মামলা দায়ের হয়েছে। (Hyderabad Surrogacy Racket)
সম্প্রতি ওই IVF ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন এক দম্পতি। সারোগেসির মাধ্যমে সেখান থেকে সন্তান গ্রহণ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু DNA পরীক্ষার ফলাফল মেলেনি। তদন্তে নেমে জানা যায়, ওই দম্পতি বেশ কিছুদিন ধরে সন্তানধারণের চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁদের সারোগেসির পরামর্শ দেন নম্রতা। সেই মতো স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে Srushti Test Tube Baby Centre-এ গোটা বিষয়টি সম্পন্ন হয়।
সারোগেসির জন্য ওই দম্পতির কাছ থেকে মোট ৩৫ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন নম্রতা। কিছুদিন আগে ওই দম্পতিকে ফোন করে তিনি জানান, সারোগেসির মাধ্যমে তাঁদের পুত্রসন্তান হয়েছে। সন্তানকে কোলে পেয়ে আনন্দে মন ভরে যায় ওই দম্পতির। নিশ্চিন্ত হতে আলাদা করে DNA পরীক্ষা করান তাঁরা, যাতে দেখা যায়, ওই দম্পতির সঙ্গে শিশুটির DNA-র মিল নেই। এর পরই ওই IVF ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ওই দম্পতি।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, IVF ও সারোগেসি ক্লিনিকের আড়ালে শিশুপাচার চক্র চলছিল। নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করা হলেও, সারোগেসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতো না। বরং দরিদ্র মানুষের থেকে কম টাকায় শিশু কিনে এনে মোটা টাকায় তা নিঃসন্তান দম্পতিদের বিক্রি করা হতো। ওই দম্পতির কাছ থেকে সারোগেসির খরচ বাবদ ৩৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হলেও, এক দরিদ্র মহিলার থেকে মাত্র ৯০ হাজার টাকা দিয়ে শিশুটিকে কিনে আনা হয়েছিল। শিশুর আসল মা-বাবা, ২৫ বছর বয়সি নাসরিন বেগম ও ৩৮ বছর বয়সি মহম্মদ আলি আদিককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁরা আসলে অসমের বাসিন্দা, হায়দরাবাদে বাস করছিলেন। ডেলিভারির পর ৯০ হাজার টাকা দিয়ে বিশাখাপত্তনম পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। ডেলিভারির দু’দিন পরই শিশুটিকে বিক্রি করা হয়। ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে অভিযুক্তদের।
কিন্তু IVF ও সারোগেসি ক্লিনিকের আড়ালে শিশু বিক্রির চক্র চললেও, এতদিন কেউ টের পেল না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ২০২১ সালে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন এক দম্পতি। জানান, তাঁদের শুক্রাণু ও ডিম্বাণুও সংগ্র করা হয়। নেওয়া হয় ২.৫ লক্ষ টাকাও। কিন্তু পদ্ধতি সম্পূর্ণ করা হয়নি। একটা সময় পর ফোন ধরাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০২০ সালেও সারোগেসির নামে এক দম্পতির থেকে ১২.৫ লক্ষ টাকা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। ওই বছরই বিশাখাপত্তনমে সংস্থার বিরদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে ২৪ বছর বয়সি এক তরুণী জানান, তাঁর সন্তানকে অপহরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আদালতে বিষয়টি মিটমাট হয়ে যায়। আরও একটি মামলায় ১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে।
নম্রতার বিরুদ্ধে প্রতারণার এমন পাঁচটি মামলা রয়েছে। নিঃসন্তান দম্পতিদের শুক্রাণুও বিক্রির অভিযোগ উঠছে তাঁর বিরুদ্ধে। আরও দুই চিকিৎসকের নাম উঠে এসেছে এই মামলায়। পুলিশ জানিয়েছে, ২০২১ সালেই Universal Srushti Fertility Center-এর লাইসেন্স বাতিল করা হয়। তার পরও এতদিন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল তারা। কোন্ডাপুর, বিজয়ওয়াড়া, বিশাখাপত্তনমেও শাখা রয়েছে ওই সংস্থার। রবিবার সেখানে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে এখনও পর্যন্ত যত অভিযোগ সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করছে।






















