Mamata Banerjee: ‘গণতন্ত্রের উপর হিটলারি আক্রমণ, দেশে সুপার এমার্জেন্সি’, সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ মমতার
Amit Shah Amendment Bill: বুধবারই সংসদে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

কলকাতা: আদালতে অপরাধ প্রমাণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা নয়। গুরুতর অপরাধ মামলায় আটক বা গ্রেফতার হলেই অপসারণের বিধান। কেন্দ্রীয় সরকারের ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল নিয়ে তাই চরমে তরজা। সেই আবহে এবার মুখ খুললেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশে ‘সুপার এমারজেন্সি’ চলছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। ভারতের গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে ফেলতে, বিচারব্যবস্থার ক্ষমতা হরণ করতেই এই বিল আনা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। (Mamata Banerjee)
বুধবারই সংসদে ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই বিলে বলা হয়েছে, বিনা বিচারে, শুধুমাত্র গুরুতর অপরাধ মামলায় গ্রেফতার বা আটক হলেই প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রীদের অপসারণ করা যাবে। বিরোধী শিবিরের মুখ্যমন্ত্রীদের নিশানা করতেই ওই বিল আনা হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সেই আবহেই আজকের দিনটিকে 'কালো দিন' এবং কেন্দ্রের বিলটিকে 'কালো বিল' বলে উল্লেখ করেন মমতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, '১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিলটির তীব্র নিন্দা করছি আমি। এই পদক্ষেপ সুপার এমার্জেন্সির চেয়েও বড়, এটা ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার পদক্ষেপ। ভারতের গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার গোড়ায় শেষ পেরেক পুঁততেই এই মধ্যযুগীয় পদক্ষেপ'। (Amit Shah Amendment Bill)
ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের নামে যেভাবে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, সেভাবেই নতুন বিলটি মধ্যযুগীয় রীতিনীতি ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ বলে দাবি মমতার। তাঁর কথায়, 'দেশের বিচারব্য়বস্থার স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে এই বিল। যে ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি আমরা, তা অভূতপূর্ব। ভারতের গণতান্ত্রিক আত্মার উপর এটা হিটলারি আঘাত ছাড়া আর কিছু নয়। বিচারব্যবস্থার সাংবিধানিক ভূমিকা কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি, এই বিলের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারসাম্য রক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বিষয়গুলি নিয়ে বিচারব্যবস্থার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে'।
I condemn the 130th Constitutional Amendment Bill, proposed to be tabled, by the Government of India today. I condemn it as a step towards something that is more than a super- Emergency, a step to end the democratic era of India for ever. This draconian step comes as a death… pic.twitter.com/Vx78R1fh6V
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 20, 2025
পক্ষপাতদুষ্ট শক্তির হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দিয়ে গণতন্ত্রের অঙ্গচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, 'এটা সংস্কার নয়, পশ্চাদপসরণ, যেখানে স্বাধীন বিচারব্যবস্থা নয়, বরং স্বার্থান্বেষীদের হাতেই আইনের রাশ থাকবে। বিচারবিভাগকে নীরব রাখা যায়, সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলা যায় এবং জনগণের অধিকারকে পদদলিত করা যায়, এমন এক শাসন প্রতিষ্ঠার ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা চলছে। ইতিহাস সাক্ষী, এভাবেই কর্তৃত্ববাদী শাসকরা, ফ্যাসিবাদীরা ক্ষমতার একত্রীকরণ ঘটায়। বিংশ শতাব্দির যে অন্ধকার সময় নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল, সেই একই মানসিকতার পরিচয় মিলছে এখানে। আদালতকে দুর্বল করে দেওয়ার অর্থ, মানুষকে দুর্বল করে দেওয়া। মানুষকে ন্যায় অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার অর্থ গণতন্ত্রকে অস্বীকার করা'।
মমতা সাফ জানিয়েছেন, কেন্দ্রের বিলটি দেশের সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। কারণ সংবিধানে প্রশাসন এবং বিচারবিভাগকে পৃথক রাখার কথা বলা হয়েছে। বিচারব্যবস্থার নীতি অস্বীকার করতে পারে না সংসদ। এটা হতে দেওয়ার অর্থ ভারতের সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার মৃত্যুর পরোয়ানায় স্বাক্ষর করা। ক্ষমতার এই বিপজ্জনক অপব্যবহার রুখতে হবে। সাময়িক ক্ষমতায় রয়েছেন যাঁরা, সংবিধান তাঁদের সম্পত্তি নয়। সংবিধান ভারতবাসীর। এই বিল এক ব্যক্তি, এক দল এবং এক সরকারের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সংবিধানেপ মৌলিক নীতিকে পদদলিত করছে এই বিল।
এই বিলের মাধ্যমে মানুষের রায় এবং নির্বাচিত সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কিছু মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, 'যাঁরা নির্বাচিত হননি, (ED, CBI-কে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত খাঁচাবন্দি তোতা বলেছে) তাঁদের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের সংবিধানের মূল নীতির সঙ্গে আপস করে, অশুভ উপায়ে প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতাবৃদ্ধি করা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। যে কোনও মূল্যে এই বিল আটকাতে হবে। রক্ষা করতে হবে দেশের গণতন্ত্রকে। আদালত, অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা হলে ক্ষমা করবেন না মানুষ। জয় হিন্দ'।






















