(Source: Matrize)
Presidential Election 2022: জনজাতি তাস বিজেপি-র, যশবন্তে ভরসা বিরোধীদের, রাইসিনা হিলের দৌড়ে কে এগিয়ে
Yashwant Sinha vs Draupadi Murmu: রাইসিনা হিলের দৌড়ে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, দ্রৌপদী এবং যশবন্তের মধ্যে মিলও রয়েছে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ সর্বজনবিদিত।
নয়াদিল্লি: নির্বাচনী মারপ্যাঁচে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা অসম্ভব। বিগত কয়েক বছরে বার বার তা প্রমাণিত হয়েছে। তার পরেও চেষ্টায় খামতি ছিল না। সেই মতো রীতিমতো ঝাড়াই বাছাই করে নাম তুলে এনেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু বিধি বাম। শরদ পওয়ার থেকে ফারুখ আবদুল্লা এবং সর্বোপরি গোপালকৃষ্ণ গাঁধী, রাষ্ট্রপতি হওয়ার (Presidential Election 2022) দৌড়ে যেতে রাজি হননি কেউই। শেষ মেশ তাই যশবন্ত সিন্হাতেই (Yashwant Sinha) এসে থিতু হতে হয়েছে তাঁদের। প্রাক্তন আইএএস অফিসার তথা বিজেপি-তে দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতা, সবমিলিয়ে ঠিকঠাকই ছিল সব কিছু। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মহিলা এবং জনজাতি তাস খেলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই পালে হাওয়া টেনে নিল বিজেপি তথা তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। তাদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু ( Draupadi Murmu)।
আগামী ১৮ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। তাতেই মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হচ্ছেন দ্রৌপদী এবং যশবন্ত। ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি পদে মেয়াদ শেষ হচ্ছে রামনাথ কোবিন্দের। তার আগে, ২১ জুলাই ভোটগণনা সম্পন্ন হবে। তবে রাইসিনা হিলের দৌড়ে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, দ্রৌপদী এবং যশবন্তের মধ্যে মিলও রয়েছে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে তাঁদের সংযোগ সর্বজনবিদিত। কারণ দীর্ঘ ছ'বছর ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন দ্রৌপদী। আবার ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন যশবন্ত।
শিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবনের সূচনা। সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান ১৯৯৭ সালে। ওড়িশায় জনজাতি নেত্রী হিসেবে সুপরিচিত তিনি। ২০০০ সালে পৃথক ঝাড়খণ্ড গঠিত হওয়ার পর দ্রৌপদীই সেখানকার প্রথম পূর্ণমেয়াদি রাজ্যপাল। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পদে টিকে ছিলেন তিনি। ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলা. বিজেপি-র সভাপতিও ছিলেন দ্রৌপদী। একেবারে অপ্রত্যাশিত ভাবেই তাঁর নাম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য মনোনীত করে এনডিএ, যার পর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও ভূমিকন্যা দ্রৌপদীকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
যশবন্ত সিন্হা
আইএএস অফিসার যশবন্ত ১৯৬০ সালে কাজে যোগ দেন। দীর্ঘ ২৪ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন। অটলবিহারি বাজপেয়ীর আমলেও ১৯৯৮ সালের মার্চ থেকে ২০০২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান। ২০০২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০০৪ সালের মে মাস পর্যন্ত বিদেশমন্ত্রীও ছিলেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের বিজেপি-তে মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় যশবন্তের। নানা বিষয়ে মতানৈক্য হতে হতে এখ সময় বিজেপি-তে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। শেষমেশ ২০২১ সালের মার্চ মাসে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বছর ২১ জুন জাতীয় ক্ষেত্রে বিরোধী জোটকে ঐক্যবদ্ধ করার স্বার্থে তৃণমূল থেকেও অব্যাহতি নেন তিনি। দলনেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম সুপারিশ করেন।
কী ভাবে ভোট নির্ণয়
তবে দ্রৌপদী না যশবন্ত, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তা ঠিক করবেন সংসদের দুই কক্ষ, রাজ্যসভা ও লোকসভা, বিভিন্ন রাজ্যের এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুচুচ্চেরীর বিধানসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ইলেক্টোরাল কলেজ। বর্তমানে ইলেক্টোরাল কলেজে সংসদের দুই কক্ষ মিলিয়ে ৭৭৬ জন (লোকসভার ৫৪৩ এবং রাজ্যসভার ২৩৩ জন সাংসদ) এবং রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভাগুলির ৪ হাজার ৮০৯ জন সদস্য রয়েছেন। সব মিলিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের সামগ্রিক ভোটের মান ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৩১।
তবে এ ক্ষেত্রেও বিভাজন রয়েছে। প্রত্যেক সাংসদের ভোটের মান ৭০৮। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা যেহেতু কার্যকর নয় এই মুহূর্তে, তার জন্য সাংসদ প্রতি ভোটের মান কমে ৭০০ হতে চলেছে। ১৯৭১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, রাজ্যের জনসংখ্যার নিরিখে বিধায়কদের ভোটের মান নির্ধারিত হয়। সেই নিরিখে উত্তরপ্রদেশের একজন বিধায়কের ভোটের মান ২০৮। রাজ্যের ৪০৩ জন বিধায়কের সামগ্রিক ভোটের মান সে ক্ষেত্রে ৮৩ হাজার ৮২৪। রাজ্যের ৮০ জন সাংসদের ভোটের মান ৫৬ হাজার ৬৪০। ফলে উত্তরপ্রদেশ থেকেই ১ লক্ষ ৪০ হাজার অর্থাৎ মোট ভোটের ১২.৭ শতাংশ উঠে আসছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কে বেশি ভোট পাচ্ছেন, তার উপর জয় নির্ভর করে না। বরং নির্ধারিত কোটার উপর কে, কত বেশি ভোট পাচ্ছেন, তা দেখা হয়। তাই প্রত্যেক প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট গোনার পর, তার সঙ্গে বৈধ ভোটের মান সংযোগ করেন রিটার্নিং অফিসার। বৈধ ভোটকে দুই দিয়ে ভাগ করে, তার সঙ্গে ভাগফল যোগ করে জয়যুক্ত পার্থী বেছে নেওয়া হয়। নির্ধারিত কোটার চেয়ে বেশি ভোট যদি কেউ-ই না পান, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন যিনি, তাঁকে পরাজিত বলে ধরা হয়।
ভোটের সমীকরণে কে কোথায়
বর্তমানে ১৭টি রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, ছত্রিশগড় এবং ঝাড়খণ্ডের মতো কিছু রাজ্য গত কয়েক বছরে হাতছাড়া হলেও, মধ্যপ্রদেশ এবং কর্নাটকে ভোট বেড়েছে তাদের। আবার তেলুগু দেশম পার্টি, শিবসেনা, অকালি দল এবং জনতে দল ইউনাইটেডের মতো শরিকও তাদের ছেড়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও এনডিএ-র সম্মিলিত ভোটের মান ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৪২০-তে রয়েছে, ৫০ শতাংশ ভোটের চেয়ে ১ শতাংশ কম। সে ক্ষেত্রে বিজু জনতা দলের দ্রৌপদীকে সমর্থন, তাদের পক্ষে শাপে বর হয়ে উঠতে চলেছে। এ ছাড়াও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো আঞ্চলিক দলও এনডিএ-র দিকে ঝুঁকতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। ইলেক্টোরাল কলেজে বিজু জনতা দলের ভোটের মান ৩১ হাজার এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভোটের মান ৪৩ হাজার। ওড়িশার মেয়েকে চয়ন করে বিজু জনতা দলের ভোট প্রায় নিশ্চিত ভাবেই কুক্ষিগত করে ফেলেছে বিজেপি।
২০১৭ সালে এনডিএ প্রার্থী রামনাথ কোবিন্দকেই সমর্থন জানিয়েছিল ওয়াইএসআর কংগ্রেস। তবে উপরাষ্ট্রপতি পদে এনডিএ প্রার্থীকে সমর্থন জানায়নি তারা। সাম্প্রতিক কালে দূরত্ব আরও বেড়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। তবে বিজু জনতা দলকে পেলে ওয়াইএসআর কংগ্রেস পাশে না থাকলেও চলবে এনডিএ-র। সে ক্ষেত্রে যশবন্তের জয়যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণই। কারণ বিরোধীদের সম্মিলিত ভোটের মান ৩ লক্ষ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ইউপিএ জোট থেকে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার এবং তৃণমূল থেকে ৫৮ হাজার এবং সমাজবাদী পার্টি থেকে ২৮ হাজার আসছে। তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি ইতিমধ্যেই যশবন্তকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু বিরোধী প্রার্থী জয়ী হওয়ার পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। তাই অত্যাশ্চর্য কিছু না ঘটলে, যশবন্তের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।