Sambhal Archaeological Survey: দোতলা নির্মাণের নীচে জলাধার, রাজারানিদের জন্যই তৈরি, সম্ভলে খোঁড়াখুঁড়িতে প্রাণ পেল ইতিহাস
Sambhal Stepwell: মাটির নীচে এতদিন চাপা পড়েছিল কূপটি। কূপের দেওয়ালের গায়ে পাথরের নির্মাণও রয়েছে।
সম্ভল: পরতে পরতে জড়িয়ে ইতিহাস। খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হতেই একে একে উন্মোচিত হচ্ছে। সম্ভলে মাটি খুঁড়ে বিশালাকার কূপের হদিশ মিলেছিল আগেই। তবে আরও চমক অপেক্ষা করছিল, বুধবার যার খোলসা হল। ঐতিহাসিক কূপটির প্রথম তল উন্মোচিত হল চোখের সামনে। এতদিন জেসিবি দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। কিন্তু নির্মাণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে জেসিবি নামানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আপাতত শ্রমিকরাই খননকার্য চালাচ্ছেন। মাটির নীচে এতদিন চাপা পড়েছিল কূপটি। কূপের দেওয়ালের গায়ে পাথরের নির্মাণও রয়েছে।
সম্ভলের কূপটি রানি সুরেন্দ্রবালার বলা জানা গিয়েছে। মানববন্ধন করে মাটি বের করা হচ্ছে। এলাকায় ভিড় জমতে শুরু করেছে। খননস্থলে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের অনেকেই কূপ কী, জানেন না। প্রাচীন কালে রাজা-রানিদের জন্য এমন কূপ তৈরি করা হতো। দোতলা নির্মাণের একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকত কুয়ো। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, সম্ভলে আবিষ্কৃত কূপটিতে তিনটি ঘর রয়েছে। সেখান থেকে মাটি বের করা হচ্ছে।
সম্ভলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। মধ্যযুগে সম্ভল একটি নগর ছিল। পৃথ্বীরাজ চৌহান এবং গাজি সৈয়দ সালার মাসুদের মধ্যে সেখানেও যুদ্ধও হয় বলে জানা যায়। পরবর্তীকে দিল্লির সুলতানের রাজত্ব কায়েম হয় সেখানে। ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব সমীক্ষা উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে খননকার্য চালাচ্ছে এই মুহূর্তে। বুধবার চন্দৌসীতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারও। তাঁরা কূপের মধ্যে প্রবেশ করেন। দেওয়ালগুলি স্পর্শ করে দেখেন। পাশাপাশি, ফিরোজপুর কেল্লাতেও যান। তাঁরা তোতা-ময়না কবরও আজ পরীক্ষা করে দেখেন বলে খবর।
জেলাশাসক রাজেন্দ্র পেনসিয়া জানিয়েছেন, সম্ভল একটি প্রাচীন নগর। আগেও মিলেছে এবং এখনও সেখানে প্রচুর ঐতিহাসিক নিদর্শন চোখে পড়ে। সেগুলিকে সংরক্ষণ এবং বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। সেই মতোই ASI পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, ফিরোজপুর দুর্গ আগে থেকেই ASI দ্বারা সংরক্ষিত। সেটিকে রক্ষা করতে চারিদিকে প্রাচীর তোলা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও মানুষজনের যাতায়াত লেগেই রয়েছে। বিষয়টি আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখবে ASI. নীমসার কূপটিও অত্যন্ত জাগ্রত বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। ওই কূপের মধ্যে জলও পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন। জলের গভীরতা প্রায় ১০-১২ ফুট বলে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, তোতা-ময়না কবরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেটিরও সংরক্ষণ প্রয়োজন। পাশাপাশি, রাজপুত জমানায় পৃথ্বীরাজ চৌহানের আমলে যে সোপানটির নির্মাণ হয়েছিল, সেটিও অত্যন্ত সুন্দর এবং সেটিকেও রক্ষা করতে হবে বলে জানান জেলাশাসক। তাঁর মতে, ইতিহাসকে লালন না করলে, তা হারিয়ে যাবে। ইতিহাসকে ধরে রাখতে হয়, মুখে মুখে প্রচার করতে হয়, ইতিহাসকে জানতে হয়। সম্ভলকে সংরক্ষণ করা গেলে, নিরাপদে রাখতে পারলে, সেটি তীর্থস্থান, পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশাবাদী তিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তিনি এই কাজে ব্রতী বলে জানিয়েছেন।
সম্ভলে এমন ২০০-২৫০ স্থান রয়েছে, যেখানে আগামী দিনে মানুষের ঢল নামবে বলে দাবি জেলাশাসকের। তাঁর দাবি, আগামী দিনে এখানে ছুটে আসবেন মানুষজন। দু'-চার দিন কাটিয়ে যাবেন। তাঁরাও বলতে পারবেন, "একদিন তো কাটিয়ে যান সম্ভলে।" কূপটিকে সংরক্ষণ করে শীঘ্রই সাধারঁম মানুষের ভ্রমণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্ভলে মন্দিরের পাশের রাস্তায় যে খালি জায়গা রয়েছে, তার নীচে সোপান রয়েছে বলে আগেই দাবি উঠেছিল। জেলাশাসকের নির্দেশে তড়িঘড়ি খননকার্য শুরু হয়। আর তাতেই সোপানের খোঁজ মিলেছে। রোজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত সেখানে খননকার্য চলছে।