World Environment Day 2023: গাছেদের 'রক্ষা-বন্ধন' তিনিই, সবুজ বাঁচাতে দেড় দশকেরও বেশি লড়াই 'লেডি টারজন'-এর
Jamuna Tudu: গত ২০১৬ সালে সাহসিকতার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন যমুনা দেবী। অরণ্য সংরক্ষণের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন যমুনাদেবী।
কলকাতা: 'কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, 'আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।'
শাল শিমুল পলাশের তিনিই রক্ষাকর্ত্রী। ভ্রাতৃস্নেহে আগলে রেখেছেন জঙ্গলকে। সবুজ বাঁচাতে তাঁর লড়াই চলছে প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে। সব বাধা পেরিয়েও তিনি আপন প্রত্যয়ে আর দৃঢ় সঙ্কল্পে সবুজ সংরক্ষণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বারবার। তিনি ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) তথা সমগ্র দেশের 'লেডি টারজন' (lady Tarzan of Jharkhand) ওরফে যমুনা টুডু। ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের চাকুলিয়ার বাসিন্দা যমুনা টুডু (Jamuna Tudu)। গাছ কাটতে কাঠ মাফিয়াদের যে অবাধ বিচরণ, তা-ই তিনি রুখেছেন।
গত ২০১৬ সালে সাহসিকতার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন যমুনাদেবী। অরণ্য সংরক্ষণের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন যমুনাদেবী। ২০১৪ সালে স্ত্রী শক্তি পুরষ্কার, গডফ্রে ফিলিপস সাহসিকতা পুরষ্কার, ২০১৭ সালে উইমেন ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়া পুরষ্কার প্রভৃতি।
সালটা ১৯৮০। ওড়িশার (Odisha) ময়ূরভঞ্জের রাঙামাটিয়ায় জন্ম যমুনা টুডুর, সেখানেই বেড়ে ওঠা। রুক্ষ, পাথুরে জমি চারপাশেই গাছ পুঁততেন যমুনাদেবীর বাবা । শোনা যায়, বাবাকে দেখেই গাছের প্রতি ভালবাসা তৈরি ছোট্ট যমুনার মনে। বিয়ের পর চাকুলিয়ায় এসে দেখেন স্থানীয় শালের জঙ্গল কেটে সাফ করছে পাচারকারীরা। তাই শুধুমাত্র সংসারে বদ্ধ হয়ে থাকতে পারেননি যমুনাদেবী। শুরু করেন পরিবেশ রক্ষার্থে জঙ্গল সংরক্ষণের লড়াই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যে যাত্রাপথ মোটেও সুগম ছিল না। আসতে থাকে একাধিক বাধা। জ্বালানির ঘাটতি হবে ভেবে গ্রামবাসীরাই বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন। তারই মধ্যে, ১৯৯৮ সালে যমুনা টুডু ৪ জন স্থানীয় মহিলা নিয়ে গড়ে তোলেন ‘বন সুরক্ষা সমিতি’। এর পর ধীরে ধীরে স্থানীয়দের মানসিকতায় পরিবর্তন এলেও বন মাফিয়াদের রোষে পড়েন যমুনা। আসতে শুরু করে খুনের হুমকি। এ হেন বাধা পেয়েও থেমে যানননি যমুনা। বন্দুকবাজ বন-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা হাতে স্থানীয়দের নিয়ে সবুজ বাঁচাতে নেমে পড়েছিলেন তিনি।
তাঁকে ঠেকাতে ২০০৪ সালে চাকুলিয়ায় তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। জানা যায়, ২০০৯ সালে কোকপাড়া স্টেশনের কাছে গাছ কাটছিল জঙ্গল মাফিয়ারা। যমুনাদেবীদের দেখে তারা রেল লাইন থেকে পাথর তুলে ছুড়তে শুরু করে। মাথা ফেটে যায় যমুনাদেবীর। কিন্তু তাতেও পিছপা হননি তিনি, পুলিশকে খবর দেন সেই অবস্থাতেই। ধরা পড়ে কাঠ পাচারকারীরা। বারবার হামলার পরও যমুনা টুডুর অদমনীয় লড়াই চলতে থাকে। দীর্ঘ লড়াই-এর পর মুতুরখাম গ্রামসংলগ্ন ৮০ একর বনভূমি বাঁচাতে এই বীরাঙ্গনার লড়াই সফল হয়।
বর্তমানে বন সুরক্ষা সমিতির ৩০০ টি দল রয়েছে এবং প্রত্যেক দলে ৩০ জন করে সদস্য রয়েছেন যারা আজও বনভূমি বাঁচাতে নিরলস কাজ করে চলেছেন।প্রতিবছর রাখীবন্ধনের দিন তিনি ও তাঁর সমিতির সদস্যরা গাছে রাখী বাঁধেন। এখন ঝাড়খন্ড পুলিশ তাঁদের নিয়ে বনরক্ষার কাজ করে। ঝাড়খন্ড সরকার বর্তমানে যমুনার গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছে। শিক্ষা ও জল পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যমুনার লড়াইয়ে, বর্তমানে তাঁর গ্রামে একটি মেয়ের জন্ম হলে ১৮ টি গাছ এবং একটি মেয়ের বিয়ে হলে ১০ টি গাছ লাগানোর নিয়ম চালু রয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যমুনা টুডুর এই লড়াই শুধু বিশ্ব পরিবেশ দিবসেই নয়, রোজ স্মরণ করার মতোই। যুমুনা টডুদের হাত ধরেই তাই কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলুক 'আমি থাকব', 'আমি থাকব'।