Narendra Modi: কোমরে বাঁধা ময়ূরের পেখম, পৌরাণিক দ্বারকানগরীতে মোদি, জলের নিচেই সারলেন পুজো
Submerged City Of Dwarka:রবিবার গুজরাত উপকূলে আরব সাগরে ডুব দেন মোদি।
নয়াদিল্লি: কৃষ্ণভূমি দ্বারকায় ভক্তিভাবে উদ্বেল মন। জলে ডুব দিয়ে সারলেন দর্শন। পুজো সারলেন জলের নিচেই। পৌরাণিক দ্বারকানগরীরতে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে এভাবেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেই সেই ছবি পোস্ট করলেন তিনি। জানালেন, জলে নিমজ্জিত দ্বারকানগরী প্রাচীন আধ্যাত্মিক মহানুভবতার সঙ্গে একাত্ম বোধ করতে সাহায্য করেছে তাঁকে। (Narendra Modi)
রবিবার গুজরাত উপকূলে আরব সাগরে ডুব দেন মোদি। তাঁর পরনে ছিল গেরুয়া বসন। কোমরে বাঁধা ছিল ময়ূরের পেখম। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই মুহূর্তের একাধিক ছবিও পোস্ট করেন তিনি। লেখেন, 'জলে নিমজ্জিত দ্বারকানগরীতে পুজো সেরে স্বর্গীয় অনুভূতি হল। প্রাচীন আধ্যাত্মিক মহানুভবতা এবং ভক্তিভাবের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করলাম। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সকলকে আশীর্বাদ করুন'। (Submerged City Of Dwarka)
গুজরাত উপকূলে ওই এলাকায় স্কুবা ডাইভিং বেশ জনপ্রিয়। জলে ডুব দিয়ে প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুষ করেন অনেকে। আজ মোদিও জলে নামেন। তাঁর নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর ছিল। স্কুবা গিয়ার গায়ে চাপিয়েই জলের নিচে শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশে পুজো নিবেদন করেন তিনি। তাঁর ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
To pray in the city of Dwarka, which is immersed in the waters, was a very divine experience. I felt connected to an ancient era of spiritual grandeur and timeless devotion. May Bhagwan Shri Krishna bless us all. pic.twitter.com/yUO9DJnYWo
— Narendra Modi (@narendramodi) February 25, 2024
গুজরাতে দ্বারকানগরীর পৌরাণিক গুরুত্ব রয়েছে। কথিত আছে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ সেখানকার বাসিন্দা। দ্বারকার রাজা ছিলেন না শ্রী কৃষ্ণ, তবে দ্বারকার পত্তন তাঁর হাতেই। সমুদ্রের দেবতার কাছে দ্বারকা নগরীর জন্য পরামর্শ চেয়েছিলেন শ্রী কৃষ্ণ। সেই মতো শ্রী কৃষ্ণকে দ্বারকা নগরী তৈরির জন্য জমি দেন সমুদ্রের দেবতা। প্রথমে জায়গাটির নাম ছিল কুশস্থলী। শ্রীকৃষ্ণ সেটি পাল্টে নয়া নামকরণ করেন দ্বারকা নগরী।
কথিত রয়েছে, দ্বারকা নগরীর নির্মাণে স্বর্গীয় ভাস্কর্যের ছোঁয়া ছিল। সেটিকে ‘গোল্ডেন সিটি’ বা ‘স্বর্ণনগরী’ বলা হতো। শ্রী কৃষ্ণের উপস্থিতিই দ্বারকা নগরীকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। বহু দূর থেকেও মানুষজন ছুটে আসতেন দ্বারকা নগরীতে। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, শ্রী কৃষ্ণ যখন মর্ত্যলোক থেকে স্বর্গে পাড়ি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্বারকা নগরী জলে তলিয়ে যায়। শ্রী কৃষ্ণের প্রস্থানের সঙ্গে সঙ্গেই দ্বাপর যুগের সমাপ্তি ঘটে কলিযুগের সূচনা হয়। কলিযুগ যাতে দেখতে না হয়, বাসিন্দাদের নিয়েই তলিয়ে যায় দ্বারকা নগরী।
আদৌ দ্বারকা নগরীর অস্তিত্ব ছিল, নাকি গোটাটাই কাল্পনিক, সেই নিয়ে যদিও মতভেদ রয়েছে। ইতিহাসবিদদের মতে, দ্বারকা নগরী আসলে রূপক। আসলে গুজরাতের সমুদ্র লাগোয়া জায়গায় একটি বন্দর-শহর ছিল প্রাচীন কালে। উপকূলের মাটির ক্ষয় হতে হতে একসময় জলের নিচে তলিয়ে যায় সেটি। তবে মতভেদ থাকলেও, দ্বারকা নগরী নিয়ে কৌতূহল বরাবরই। একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক অভিযানও চালানো হয় জলের নিচে, তাতে বেশ কিছু নির্মাণের টুকরো, ভেঙে পড়া দেওয়ালের অংশ উদ্ধার হয়। মাটির পাত্র, মূর্তিও উদ্ধার হয় জলের তলা থেকে।
জলের নিচে ওই ধ্বংসস্তূপকে ঘিরে কৌতূহলের শেষ নেই এখনও। গুজরাতের দেবভূমি দ্বারকা জেলায়, গোমতী নদীর দক্ষিণ তীরে, অরব সাগরের সঙ্গে মোহনায় দ্বারকা নগরীর অবস্থান ছিল বলে মনে করা হয়। সেখানে দ্বারকাধীশ মন্দিরও রয়েছে, যা শ্রী কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে চারধামের মধ্যে অন্যতম হল এই দ্বারকাধীশ মন্দির, আরব সাগরের বুক ফুঁড়ে সেটি আবির্ভূত হয়েছে বলে বিশ্বাস করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একাংশ। শ্রী কৃষ্ণের পৌত্র বজ্রনাভ সেটি ২৫০০ বছর আগে নির্মাণ করেন বলে বিশ্বাস তাঁদের।পরবর্তী কালে সেটির সংস্কার করেন আদি শঙ্করাচার্য। পৌরাণিক ওই শহরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে পর্যটন ব্যবসাও। সেখানে জলের নিচে সাবমেরিনে ঘোরার ব্যবস্থা করতেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার।