(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Afghanistan : 'যেদিন মারা যায়, সেদিন ফেরার কথা ছিল' তালিবানের সন্ত্রাস দেখে মনে পড়ছে 'কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ' পরিজনদের
১৯৮৯ সালে কলকাতাতেই আফগান যুবক জানবাজ খানের সঙ্গে আলাপ হয় কলকাতার মেয়ে সুস্মিতার।
কোথাও বিউটি পার্লারের বাইরে মহিলাদের ছবি মোছার চেষ্টা হচ্ছে। কোথাও সংবাদমাধ্যম থেকে মহিলা অ্যাঙ্করকে বের করে দেওয়া হচ্ছে! আবার আফগানিস্তানের বল্খ প্রদেশের যে গভর্নর সালিমা মাজারি তালিবানকে রুখতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন সেই তাঁকেই আটক করল তালিবান জঙ্গিরা। তালিবানের কব্জায় চলে যাওয়ার পর, এটাই এখন আফগানিস্তানের ছবি! মুখে ভাল ভাল কথা বললেও, গত দু’দিনে সামনে চলে এসেছে তালিবানের নারী-বিদ্বেষের সেই চেনা ছবি। যার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন এই বাংলার এক মেয়ে।
যিনি আরও পরিচিত ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’ বইয়ের জন্য। সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে বিয়ে করে আফগানিস্তানে গিয়ে অকথ্য অত্যাচারের শিকার হন সুস্মিতা। তারপর ২০১৩ সালে সেই আফগানিস্তানে গিয়েই তালিবানি জঙ্গিদের গুলিতে খুন হন তিনি।
আট বছর বাদে, আফগানিস্তান দখলের পর সেই তালিবানের হিংস্র উল্লাস দেখে পুরনো কথা মনে যাচ্ছে সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সুস্মিতার ভাই বলেন, ' ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখছি। পরের বার যখন দিদি আফগানিস্তান ফিরে গেল তখন পরিস্থিতি খারাপ ছিল। খবরের চ্যানেল থেকে খবর পাই। জঙ্গিরা এখন দেশ চালাচ্ছে, যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল দিদি, তারাই আবার দেশ চালাচ্ছে। অনেক দেশ সেটাকে সমর্থন করছে। এটা দেখতে হচ্ছে, এর থেকে খারাপ আর কীই বা হতে পারে।
১৯৮৯ সালে কলকাতাতেই আফগান যুবক জানবাজ খানের সঙ্গে আলাপ হয় কলকাতার মেয়ে সুস্মিতার। পরিচয় থেকে প্রেম, তারপর বিয়ে। ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ-বইতে সুস্মিতা লিখেছিলেন, অনেকের মতো তালিবানি ফতোয়া মেনে নিতে পারেননি তিনি। প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁকে পড়তে হয় তালিবানি রোষের মুখে৷ দিনের পর দিন তাঁকে অন্ধকার ঘরে বন্দি করে রাখা হত। বারবার পালিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ শেষ পর্যন্ত আফগান মুলুক থেকে ১৯৯৫ সালে পালিয়ে আসেন সুস্মিতা।
তাঁর লেখা ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’য়ের কাহিনি অবলম্বনেই ২০০৩ সালে বলিউডে তৈরি হয় ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’ ছবিটি৷ পরিচালক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ছবি শুটিং করতে চেয়েছিলেন আফগানিস্তানেই। তাই রেকে করতে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। কিন্তু সুস্মিতার শ্বশুরবাড়ির এলাকা সারারায় যেতেই তাঁদের ঘিরে ধরে অস্ত্রধারী তালিবানরা। এরপর জালালাবাদের একটি হোটেলে ছিলাম। সেই সময় দেখা ভীত সন্ত্রস্ত মুখগুলো এখনও ভুলতে পারিনি।'
দশবছর পর আফগানিস্তানে গিয়েই খুন হন সুস্মিতা। বিয়ের পর ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েও কেন ফের কাবুলিওয়ালার দেশে ফিরে গেলেন লেখিকা ? ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, '' পরবর্তীতে কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউয়ের পরবর্তী পর্ব লিখতে চেয়েছিলেন সুস্মিতা। পরবর্তী পরিস্থিতি হয়ত জানতে পারা যেত তাঁর লেখায়। আমি বারণ করেছিলাম। ও বলেছিল এখন তো আর তালিবানরা ওখানে নেই। আর দিন চারেকের কাজ বাকি ছিল বলে জানায় ও। সেই বই লেখার কাজ শেষ করতেই তো ও গিয়েছিল ফের ওখানে। ওর ল্যাপটপ এখনও ওখানে। যেদিন মারা যায়, সেদিন ফেরার কথা ছিল ''
তালিবান যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, তা একেবারে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন সুস্মিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তাই আজকে যে ভারতীয়রা তাঁদের হাতে আটকে রয়েছে, তাঁদের নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না।