Fighting Covid Exclusive : দিন দশেক যমে-মানুষে লড়াই, তারপর মৃত্যুকে হারিয়ে জীবনে ফেরা
' হয়তো প্রতিদিনই নেতিবাচক কথা শুনতে হত ... আজ শরীরের এইটা খারাপ হয়েছে ... কাল অন্যদিকে অবনতি হয়েছে। আশার কথা, প্রায় কোনওদিন শুনিইনি । ' চোখ ঝাপসা স্ত্রীর
কলকাতা : সিনান মনোজ প্রসাদ । সারা দেশে প্রায় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী তাঁর । ক্যারাটেতে বিপক্ষকে কাবু করার কৌশলে তিনি তুখোড়। আছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খেতাবও। দেশে ও বিদেশে অসংখ্য আন্তর্জাতিক মানের ক্যারাটে টুর্নামেন্টে রেফারির ভূমিকায় দেখা যায় মনোজ প্রসাদকে । ক্যারাটের কৌশলে তাবড় তাবড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন তিনি । এহেন মনোজের জীবন এক প্রকার ফিরে এল খাদের কিনারা থেকে ! বাস্তব যে কাহিনিকেও হার মানায় তা বলে দেয় মনোজের করোনা-সংগ্রাম ।
দিনটা ছিল ৭ এপ্রিল। শরীরে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে মনোজের। সদ্যই ফিরেছেন টুর্নামেন্ট থেকে। সেখানেই হালকা জ্বর এসেছিলো মনোজের । যদিও অসম্ভব জেদি মনোজ হালকা শরীর খারাপকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি তখনই। প্যারাসিটামল খেয়ে জ্বর কমিয়ে ফেলেছিলেন সেই সময় । কিন্তু বাড়ি ফিরেও জ্বর না কমায় করোনা পরীক্ষা করান মনোজ । তারপরেই ধরা পড়ে শরীরে ভাইরাসের অস্তিত্ব । শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। শহরের এক হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করান স্ত্রী সংগীতা। সেখানে দ্রুতই অবস্থার অবনতি হয় শুরু হয় । আর দেরি না করে কলকাতার একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে ইসিএমও বিভাগে ভর্তি করতে হয় মনোজকে।
২৪ ঘণ্টাও বাঁচার আশা নেই, এমন রোগীও সুস্থ হয়ে কাজ করছেন, সৌজন্যে ECMO, বললেন ডা. কুণাল সরকার
ততদিনে ফুসফুসে সংক্রমণ গভীর। শরীর আস্তে আস্তে বেহাল হতে শুরু করেছে। হুঁশ নেই বললেই চলে । সেই সময়ের কথা তেমন মনে পড়ে না আজ মনোজের। স্ত্রী একপ্রকার মনের জোর নিনেই সই করে দিয়েছিলেন বন্ডে। সঙ্গীতার কথায়, 'বন্ড সই করতে গিয়ে হাত-পা কাঁপছিল ... বারবার চোখের সামনে ভেসে আসছিল ৬ বছরের মেয়ের মুখটা । চরম অনিশ্চয়তা গ্রাস করছিল মনটাকে । কিন্তু তখনই ভেবে নিয়েছিলাম, দুর্বল হব না । এই লড়াইটা লড়তেই হবে । যুদ্ধে পরাজয় হতেই পারে । কিন্তু হেরে যাওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করব না ।
ইসিএমও বিভাগে ভর্তি করা হয় যখন চিকিৎসকরা কোন নিশ্চয়তা দিতে পারেননি বরং নেতিবাচক দিকটাই বেশি ছিল । ''প্রতিদিন যখন আমি মনোজের খবর নিতে হাসপাতালে যেতাম ডাক্তারবাবুরা অসম্ভব ধৈর্য নিয়ে আমাকে বোঝাতেন । কোনওদিন কোনও কথা গোপন করেননি । হয়তো প্রতিদিনই নেতিবাচক কথা শুনতে হত ... আজ শরীরের এইটা খারাপ হয়েছে ... কাল অন্যদিকে অবনতি হয়েছে। আশার কথা, প্রায় কোনওদিন শুনিইনি । '' বলতে গিয়ে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে সংগীতার।
Black Fungus Mucormycosis : সুস্থ মানুষ রাস্তায় হাঁটছে আর তাকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ধরে নিল, এমনটা নয়
এভাবে কেটে গেছে প্রায় ১০ টা দিন । একদিকে যখন চলছিল যমে-মানুষের টানাপোড়েন অন্যদিকে অসম্ভব চিন্তা ছিল চিকিৎসার খরচ নিয়ে। কিন্তু সেই সময় যেভাবে মনোজের বন্ধুরা পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তা আজও ভুলতে পারেনি সংগীতা । এখনও কথা বলতে গেলেই দুজনের নাম বার বার করেন তিনি ... রজত আর প্রদীপ। '' এই মানুষগুলো না থাকলে যে কী ঘটতে পারত! আসলে মানুষই ঈশ্বরের দূত আর ডাক্তাররা ভগবান। ''
অবশেষে এলো সেই দিন। ডাক্তারবাবুরা ফোন করে জানালেন সামান্য ভাল হয়েছেন মনোজ । তাঁকে একমো থেকে বার করা হচ্ছে ।
সে সময় ছিল না কথা বলার ক্ষমতা। মনোজের কথায়, '' নতুন জন্ম হল আমার। আমি ভাবছিলাম কোথায় আছি আমি কী ঘটেছে আমার সঙ্গে , কীভাবেই বা এলাম এখানে। কত দিন, কত মাস, কত বছর পার হয়ে গেছে ? নাকি এই সবে এলাম? মাঝে সময়টা যেন আমার জীবন থেকে কেউ ডিলিট বাটন প্রেস করে দিয়েছে '' বলছিলেন মনোজ ।
আর স্ত্রীর স্মৃতিতে সেই সময়টা ভয়ঙ্কর । মানুষটা জ্ঞান ফিরে চিনতেই পারেননি সহযোদ্ধা স্ত্রীকে। মনে পড়ছিল শুধু পুরনো লোকেদের কথা। তখন চিকিত্সকরাই আশ্বাস দিয়েছিলেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই হলও। অবশেষে সম্বিত পেলেন তিনি। '' বাড়িতে মেয়েটা ছটফট করত বাবাকে দেখার জন্য। ডাক্তারবাবুরা ভিডিও কল করে অসুস্থ মানুষটাকেই দেখাতেন। সারা শরীরে অসংখ্য নল এবং আশেপাশে জটিল যন্ত্রগুলো দেখে গা শিউরে উঠত। ''
প্রায় মাসখানেক ক্রিটিক্যাল কেয়ার ও ভেন্টিলেশনে কাটানোর পর বাড়ি ফিরেছেন মনোজ। প্রথম কিছুদিন অক্সিজেন সাপোর্টে থাকার পর এখন অনেকটাই সুস্থ তিনি। মনোজের কথায় 'আমি তো নয় অসুস্থ হয়ে আটকা পড়েছি। কিন্তু ওই মানুষগুলো তে ভগবান। যাঁরা দিনের পর দিন বাড়ি ফেরেননি। পিপিই পরে সারা দিনরাত আমাকে পাহারা দিয়েছে অতন্দ্র প্রহরীর মতো। মৃত্যুকে কাছে ঘেঁষতে দেননি। মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের ডাক্তার দীপাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় ও অর্পণ চক্রবর্তী আমার ঈশ্বর '
এখন আস্তে আস্তে হাঁটতে পারছি নিচু হওয়া বারণ আরও বেশকিছু বাধা-নিষেধ ও আছে তবু জানি একদিন সব বাধা অতিক্রম করে আবার আবার লড়াইয়ের ময়দানে নামব । সে হবে এক অন্য লড়াই।
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )