Uniform Civil Code: নাগরিকমাত্রই এক আইন! ভোটের আগে ফের সক্রিয় কেন্দ্র, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে এল বিজ্ঞপ্তি
Lok Sabha Elections 2024: অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সমস্ত নাগরিককে একই পারিবারিক আইন মেনে চলতে হবে।
নয়াদিল্লি: নির্বাচনের আগে গাজর ঝোলানোর আওতায় অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চলে এসেছে বলে অভিযোগ উঠছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের (Lok Sabha Elections 2024) আগেও ফের একবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপরতা দেখাচ্ছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এ ব্যাপারে জনমত গ্রহণ করতে নয়া বিজ্ঞপ্তি জারি করল তারা। বুধবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সেই নিয়ে মতামত জানাতে হবে নাগরিক নির্বিশেষে সরকারি সিলমোহরপ্রাপ্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলিকে (Uniform Civil Code)।
বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, সন্তান দত্তক নেওয়া থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার চয়ন নিয়ে এক এক দেশে ধর্ম এবং জাতি নির্বিশেষে নিজস্ব আইন-কানুন রয়েছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে দেশের সমস্ত নাগরিককে একই পারিবারিক আইন মেনে চলতে হবে। সেই নয়ের দশক থেকেই দেশে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর প্রস্তাব দিয়ে আসছে বিজেপি। এমনকি তাদের নির্বাচনী ইস্তেহারেও লাগাতার জায়গা পেয়ে এসেছে বিষয়টি। সামনে আসে খসড়া নীতিও। বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যেও ওই বিধি চালুর প্রস্তাব উঠতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে আজও তা কার্যকর করা যায়নি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে তৎপর হল কেন্দ্র।
যদিও ভোটের আগে বছর বছর অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে গাজর ঝোলানোর মতো করে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন বিরোধীরা। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক', 'বালাকোট অভিযান'কে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে একই ভাবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কেন্দ্র বিল নিয়ে এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মত বিজেপি বিরোধী শিবিরের একাংশের।
আরও পড়ুন: Manipur: ফের অশান্ত মণিপুর, গুলিতে ঝাঁঝরা কমপক্ষে নয়
ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে এই বিধির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের মতে, ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মাচারণের অধিকারের কথা বলা রয়েছে। শুধুমাত্র সংখ্যার জোরে, মেরুকরণের রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা দিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের উপর জোর করে বিধি চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ সেই সংবিধান এবং ভারতীয় গণতন্ত্রের মূলে আঘাত করা।
বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আইন বা জীবনচর্যার স্বতন্ত্র বিধান ব্যক্তিসত্তার সার্বভৌমত্বকে খর্ব করে। ভারতীয় সংবিধান ব্যক্তিকে তার আদর্শগত ভিত্তিমূলে স্থান দিয়েছে— সংবিধানের রচনাপর্বে যাঁরা গোষ্ঠী বা কৌমের অধিকারকে ভিত্তি করে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পক্ষে মত দিয়েছিলেন, প্রবল প্রতিযুক্তির সাহায্যে তাঁদের সেই মত খণ্ডন করা হয়েছিল। পরবর্তী সাত দশকেও এই প্রশ্নে বহু তর্ক হয়েছে। প্রতিযুক্তি নিছক ব্যক্তি-স্বাধীনতার নয়, ‘জাস্টিস’ বা ন্যায্যতারও। বিশেষত একটি গোষ্ঠীর কৌম-অধিকার অনেক ক্ষেত্রে তার সুযোগবঞ্চিত বা দুর্বলতর অংশের অধিকার হরণ করে। ‘তিন তালাক’ নামক বিবাহবিচ্ছেদের রীতিটি তার এক উৎকট নজির। এই ধরনের গোষ্ঠীগত আধিপত্য নির্মূল করার উদ্দেশ্যে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজন আছে। ধর্মনিরপেক্ষ, বহুসংস্কৃতিবাদী উদার গণতন্ত্রের আদর্শটির অপব্যবহার অবশ্যই আপত্তিকর।
যদিও '২৪-এর নির্বাচনের আগে সেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে নতুন করে তৎপর হল কেন্দ্র। জনমনে এ নিয়ে কী ভাবনা, মতামত রয়েছে, তা জানতে তৎপর হল ২২তম আইন কমিশন। সরকারি সিলমোহর প্রাপ্ত ধর্মীয় সংগঠনগুলির মতামতও গ্রহণ করা হবে। তার জন্য সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হল। বুধবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে নিজেদের মতামত জানাতে পারবেন আগ্রহী নাগরিক এবং ধর্মীয় সংগঠনগুলি। তার জন্য আইন কমিশনের ওয়েবসাইট lci@gov.in-এ গিয়ে 'ক্লিক হিয়ার' অপশন বেছে নিতে হবে।
The 22nd Law Commission of India decided again to solicit views and ideas of the public at large and recognized religious organizations about the Uniform Civil Code. Those who are interested and willing may present their views within a period of 30 days from the date of Notice… pic.twitter.com/s9ZV9WqKU4
— ANI (@ANI) June 14, 2023
বুধবার আইন কমিশনের তরফে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়, 'গোড়ায় ২১তম আইন কমিশন অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে সব পক্ষের মতামত জানতে চেয়ে ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর একটি প্রশ্নমালাও প্রকাশ করেছিল। এর পর ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ, ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ এবং ২০১৮ সালের ১০ এপ্রিলও মতামত জানতে চাওয়া হয়'।
আইন কমিশন জানিয়েছে, সেই সময় ব্যাপক সাড়া মিলেছিল। তার ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট পরিবার আইনে সংশোধন ঘটাতে পরামর্শ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে ২১তম আইন কমিশন। তার পর তিন বছর কেটে গিয়েছে। তার পর এই বিষয়ে দেশের একাধিক আদালত থেকে যে নির্দেশাবলী সামনে এসেছে, তাকে সামনে রেখে নতুন করে এ নিয়ে মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু কারর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।