পুলিশ হতে চায় দুঃস্থ ঘরের কিশোর, রাতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অঙ্ক, ইংরেজি পড়াচ্ছেন পুলিশ অফিসার!
কিন্তু কোথায় বসে পড়াবেন? আলো আছে এমন জায়গা খুঁজতে হবে। শেষটায় কখনও এটিএম-এর সামনে, কখনও বা পথের ধারে বাতিস্তম্ভের নিচে পুলিশ ভ্যানের বনেটের উপর খাতা বই রেখে চলতে থাকে রোজকার পড়াশোনা।
নয়াদিল্লি: মনে পড়ে যেতে পারে বিদ্যাসাগরের কথা!
রাস্তার বাতিস্তম্ভের নিচে কিংবা এটিএমের আলোকিত অংশটার সামনে জিপের ইঞ্জিনের বনেটের উপর খাতা রেখে লিখছে একটা বাচ্চা ছেলে। তারপর সেই খাতা নিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। পথচলতি মানুষ এমনটাই দেখে আসছেন মাস দুয়েক ধরে। ব্যাপারটা কী? জানা যাচ্ছে, বছর বারোর রাজ নামের ছেলেটি আগামী দিনে পুলিশ হতে চায়। কিন্তু পড়াশোনা তো করতে হবে। পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই এক পুলিশ অফিসারকেই অনুরোধ করে নিজের শিক্ষক বানিয়ে ফেলেছে সে। কে এই পুলিশ অফিসার? তিনি পলাশিয়া এলাকার স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) বিনোদ দীক্ষিত। তিনিই এখন রাজের মাস্টার মশাই, সম্মানীয় “চাচাজি”। প্রতিদিন ছেলেটিকে রাতে নিয়ম করে পড়াশোনা করান বিনোদ। আর এই খবরটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বহু মানুষ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ভাইরাল হয়ে গিয়েছে বিষয়টি। মানুষ বিনোদের যেমন প্রশংসা করছেন, তেমনই বাহবা জানিয়েছেন রাজের অধ্যবসায়কেও।
মাস দুয়েক আগে লকডাউনের মাঝে রাতে জিপ নিয়ে একদিন এলাকায় টহল দিতে বেরিয়েছিলেন বিনোদ। তখনই রাজের সঙ্গে তাঁর আলাপ জমে ওঠে। বিনোদ সংবাদমাধ্যমকে বিশদে জানিয়ে বলেছেন, "লকডাউন চলাকালীন আমি থানার কাছাকাছি একটি বস্তি এলাকায় টহল দিচ্ছিলাম। তখনই রাজ আমার কাছে এসে তার ইচ্ছা জানায়, বলে পড়াশোনা করে পুলিশ হতে চায়। কিন্তু গরিব বাড়ির ছেলে। টাকা-পয়সা নেই। কীভাবে পড়াশোনা চালাবে বুঝতে পারছে না।”
বিনোদ কথা বলে জানতে পারেন, রাজের বাবা দিনমজুর, আর দাদু রাস্তার ধারে একটা ছোট দোকানে কাজ করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। রাজ বিনোদকে বলে, করোনার সময়ে সে দেখেছে যে পুলিশকর্মীরা সাধারণ মানুষের জন্য কতো কাজ করছেন। এতে সে মনে-প্রাণে ভীষণ অনুপ্রাণিত। তাই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে , বড় হয়ে পুলিশ হবে। রাজের উৎসাহেই তাকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বিনোদ।
কিন্তু কোথায় বসে পড়াবেন? আলো আছে এমন জায়গা খুঁজতে হবে। শেষটায় কখনও এটিএম-এর সামনে, কখনও বা পথের ধারে বাতিস্তম্ভের নিচে পুলিশ ভ্যানের বনেটের উপর খাতা বই রেখে চলতে থাকে রোজকার পড়াশোনা। এভাবেই কেটে গিয়েছে দু মাস। রাতে অঙ্ক আর ইংরেজি শিখছে রাজ। চলছে পুলিশ হওয়ার প্রস্তুতি।
বিনোদ দীক্ষিত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ তাঁর প্রথম ছাত্র নয়। ধর এবং রতলমে তিনি যখন পোস্টেড ছিলেন, সেখানেও পড়াশোনায় উৎসাহী অনেক পথশিশুকে তিনি পড়াশোনা শিখিয়েছেন।তাদের কেউ কেউ সত্যিই সত্যিই পরবর্তীকালে পুলিশে যোগ দিয়েছে।রাজের জন্যও তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন।