এক্সপ্লোর
Advertisement
কহো না শাদি হ্যায়
বিয়ে করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পাত্রী সুন্দরী বিমান সেবিকা। তাঁর এনগেজমেন্টে ছিলেন গৌতম ভট্টাচার্য
প্রজাপতিটা হঠাৎ উড়ে এল কোথা থেকে?
গত দু’বছরে দেখছি আমার ভাগ্য আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিচিত্র সব কাণ্ড-কারখানা ঘটছে জমি থেকে তিরিশ পঁয়ত্রিশ হাজার ফিট উঁচুতে। মনে হচ্ছে কেউ যেন ওপরে বসে আমার স্ক্রিপ্ট লিখছে।
মানে?
মানে, বাবা রামদেবজি-র সঙ্গেও দেখা হয়েছিল আকাশে। যা রাজনীতিতে হঠাৎ করে আমায় এনে ফেলে। এটাও তাই। যে রোমাঞ্চটা পেয়েছিলাম রামদেব বাবাকে সরাসরি বলে যে টিকিট দিলে আমি জিতব। সেটাই আবার অনুভব করলাম যখন একজন অচেনা এয়ার হোস্টেসের সঙ্গে আলাপের মুহূর্তের ভাল লাগার মধ্যে তার নাম আর সেল নম্বর জিজ্ঞেস করলাম।
এই দু’টো ফ্লাইটের মধ্যে তফাত কত দিনের?
মাত্র দিন দশেকের। ভাবা যায় জীবনের দুটো স্ট্রং কমিটমেন্ট রাজনীতি আর বিয়ে কি না হাওয়াতে করতে হল! তা-ও এত কম সময়ের মধ্যে।
কী ফ্লাইট ছিল?
এটাও দেখুন কী অদ্ভুত যোগাযোগ। রামদেব বাবার-টায় আমি দিল্লি যাচ্ছিলাম। অন্যটা ক্যালকাটা-মুম্বই। আমার জীবনটাও তো এই তিন শহরকে ঘিরে। ক্যালকাটা, মুম্বই, দিল্লি। সি বি ডি-র বারমুডা ট্র্যাঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া।
প্লেনে এর আগেও এভাবে এয়ার হোস্টেসদের নম্বর নিয়েছেন নাকি?
পলিটিক্সে আসার পর থেকে দেখছি এই ধরনের প্রশ্ন আর শুনতেই পাচ্ছি না।
যাই হোক এবার বিমান সেবিকা দ্রুত নম্বরটা দিয়ে দিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলে কথা।
আরে তখন মন্ত্রী কোথায়? এটা তো দু’হাজার চোদ্দো সালের কথা। সবে রাজনীতিতে এসে আসানসোলে ভোটের ক্যাম্পেন শুরু হব হব।
মিষ্টিমুখ: এনগেজমেন্টের পর মায়ের সঙ্গে বাবুল-রচনা
প্লেনে সুন্দরী এয়ার হোস্টেস দেখে অনেকেরই ভাল লাগে। খুব কম ক্ষেত্রেই সেটা বেশি দূর গড়ায়।
ঠিক। একই সঙ্গে আমার মনে হয় যখন বোঝা যায় কোথাও একটা কিছু ঘটতে চলেছে তখন অ্যাপ্রোচটা নিজেকেই করতে হয়। ইউ হ্যাভ টু মেক দ্য মুভ। কোনও কিছু কোলের ওপর এসে পড়বে না। ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ মুভিটায় একটা কনসেপ্টের কথা বলা আছে—ফিফটিন সেকেন্ডস অব ম্যাডনেস। তাতে বলা হয় যে কোনও সময় বা অবস্থাতেই আপনি যেই হন না কেন ইউ আর অ্যালাউড ফিফটিন সেকেন্ডস অব ম্যাডনেস। ইফ ইউ থিঙ্ক দ্য মোমেন্টস ডিসার্ভস ইট। এটাও এ রকম একটা মুহূর্ত ছিল। আগুপিছু ভাবার কোনও অবকাশ ছিল না।
আপনার ভাবী স্ত্রীকে কি ব্যাখ্যাটা শুনিয়েছিলেন?
ইন্টেলিজেন্ট কোয়েশ্চেন। পুরো গল্পটা শুনে বিরক্ত হচ্ছে দেখে বলেছিলাম বিগত পনেরো সেকেন্ডটাই হচ্ছে ফিফটিন সেকেন্ডস অব ম্যাডনেস। স্টিভ জোভসের গল্পটাও ওকে বলি।
কিউপারটিনহো-তে স্টিভ জোভস একবার বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্টেজের ওপর একটি মেয়ের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যায়। লেকচার শেষে উনি যখন ড্রাইভ করে ফিরছিলেন হঠাৎ-ই ওই চোখাচোখির কথাটা ওঁর মনে পড়ে যায়। উনি গাড়ি ঘুরিয়ে ফেরত গিয়ে মেয়েটিকে খুঁজে বার করেন। শেষদিন অবধি ওই মেয়েটিই ছিল তাঁর স্ত্রী।
দ্বিতীয় গল্পটাও কাজ করেনি?
না, কাজ তো করছিল। কনভারসেশন চালু রাখাটাই মুখ্য লক্ষ্য ছিল। তারপর আইসিং অন দ্য কেকের মতো স্ট্রেট নম্বরটা চাইলাম। দিল না।
এর পর দেখলাম ছেলে স্টুয়ার্ডরা চলে এসেছে। ফিসফাস করে ওরা কী সব বলছে। বোঝা গেল আমাকে নিয়েই কথা হচ্ছে। কিছুক্ষণ দেখার পর আমি ওদের কাছে উঠে গিয়ে বললাম তোমরা আমার জায়গায় থাকলে কী করতে বাবা? আমি সিঙ্গল। কাউকে পছন্দ হয়েছে তার নম্বরটা চেয়েছি। আই উইশ টু টেক হার আউট ফর কফি। এর মধ্যে খারাপ কী আছে ? দেখি সব মুখ চাওয়াচায়ি করছে। আমি এ বার একটা কোস্টারে গিয়ে রচনাকে নম্বরটা দিতে বললাম। ও নম্বরটা দিল। এরপর যা করলাম তাতেই বরফটা গলল। আমি পেন দিয়ে দ্রুত ওর দেওয়া নম্বরটা কেটে দিয়ে বললাম, এ বার আসল নম্বরটা দাও। তখন ছেলেগুলো দেখি খুব হাসতে শুরু করেছে। বলল, ‘‘দে দে। দিস গাই ইজ ইন্টারেস্টিং।’’
এরপর! ক্রমাগত এস এম এস এবং শেষ পর্যন্ত ডেটিং?
একবার ফ্লাইটের মাঝে মুম্বইতে ওর লম্বা হল্ট ছিল। আমি বললাম চলো তোমাকে কফি খাইয়ে আনি। নিয়ে গেলাম বান্দ্রার সি লিঙ্কে। জায়গাটা বরাবর আমার খুব রোম্যান্টিক লাগত আর মনে হত কোনও সুন্দরীর সঙ্গে কখনও যদি আবেগময় প্রেম হয়, তা হলে এখানে নিয়ে আসব। নিয়ে এসে গাইব ‘‘শহর ছেড়ে চলো অনেক দূরে, চলো কোথাও চলে যাই।’’ রচনাকে গানটা শুনিয়েও ছিলাম। আমার কেন জানি না মনে হয়, হোয়েন ইউ রিয়েলি ওয়ান্ট সামথিং, দ্য ইউনিভার্স কন্সপায়ার্স ইন ইয়োর ফেভার।
সো বান্দ্রা সি লিঙ্কে মন গলিয়ে ফেললেন?
না। রচনা খুব আড়ষ্ট ছিল সে দিন। বললাম, আমার ওপর বিশ্বাস কতটা? বলল,‘‘ওনলি টুয়েলভ পার্সেন্ট।’’ সে দিন নায়কোচিতভাবে ওকে বলেছিলাম তোমার হার্ট জেতার জন্য, টুয়েলভকে হান্ড্রেড করার জন্য আজ থেকে চল্লিশ দিন সময় নিচ্ছি। ওটাই ধরে নাও আমার মিনিমাম গ্যারান্টি।
কিন্তু একবার বিবাহিত, টিন এজার কন্যা থাকা পুরুষের পক্ষে এত কম আলাপেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া তো নিছক ইনটিউশন। ব্যাক ফায়ারও করতে পারত?
আমি এ ভাবে দেখি যে জীবন হল অনেকগুলো সুন্দর মুহূর্তের নেকলেস। সুতোটা আপনাকেই হতে হবে। আর হোয়াট ইফ আই ফেল ব্যাপারটা কখনও আমাকে খুব বিচলিত করে না।
জাম্প কাট। ৯ অগস্ট নয়াদিল্লিতে বিয়ে?
ইয়েস।
কলকাতায় পার্টি দেবেন না?
কলকাতায় ফার্স্ট অ্যানিভার্সারি। মুম্বইয়ে ফিফথ। বললাম না এই তিনটে শহর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
প্রথম বিয়ের অসাফল্য থেকে কী শিখেছেন?
শিখেছি সব ভাল জিনিসেরই এক্সপায়ারি ডেট থাকে। কিন্তু সেই এক্সপায়ারি ডেটটা যেন মনটাকে নেগেটিভিটিতে ভরিয়ে না দেয়।
হঠাৎ প্লেনে একঝলক এমন কী দেখলেন যে মনে হল এই আমার সার্থক জীবনসঙ্গিনী!
কান্ট এক্সপ্লেন। কিছু একটা ঝলক, কোথাও একটা স্পার্ক অনুভব করেছিলাম যে মুহূর্তটাকে লালমোহন বাবুর মতো একটু কালটিভেট করতে হবে।
কিন্তু সেই দেখাটা তো মরীচিকাও হতে পারত?
পারত। কিন্তু ইট ওয়াজ ইম্পর্ট্যান্ট ফর মি টু টেক দ্য লিড অ্যান্ড ফাইন্ড আউট। পুরোটাই তো চান্স নেওয়া। ওর তো বয়ফ্রেন্ডও থাকতে পারত। সেখানেই তা হলে গল্প শেষ।
কোন রোম্যান্টিক পাগলামিতে হৃদয় জিতলেন?
রোজ একটা করে গান গেয়ে ওকে হোয়াটস অ্যাপ-য়ে পাঠাতাম। প্রথম এক মাস পাঠিয়েছি। আর সময় অসময়ে জিম রিভসের ‘অ্যাম আই দ্যাট ইজি টু ফরগেট’ গানটা পাঠাতাম।
বিয়েটা কীভাবে হবে?
খুব সিম্পল। বাংলার দইয়ের ঘোল আর পঞ্জাবের লস্যি মিশিয়ে।
বিয়ের পরেও বাইক চালাবেন?
যে পুরুষ মানুষ দু’বার বিয়ে করতে ভয় পায় না সে একটা দুর্ঘটনা হয়েছে বলে বাইক চালাতে ভয় পাবে?
সক্রিয় রাজনীতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে থাকতে থাকতে দ্বিতীয় বার বিয়েতে কি ইমেজ টোল খাওয়ার ঝুঁকি নেই?
প্রথমত মন্ত্রিত্ব থেকে বিয়ের তো আরও এগজাম্পল আছে। আমি ঝুঁকি নিতে ভালবাসি। ইমেজ নিয়ে কেবল ভয়ে ভয়ে বসে থাকলে তো জীবন বয়ে যাবে। আর লাইফ তো একটাই। সবচেয়ে বড় কথা নিজের প্রেম খোঁজার মধ্যে, নিজের নতুন পরিবার তৈরি করে তা থেকে সুখ পেতে চাওয়ার মধ্যে তো কোনও অন্যায় নেই।
আপনার প্রথম বিয়ে স্থায়ী হয়েছিল বেশ কয়েক বছর। কী পাননি সেই বিয়ে থেকে যা এটাতে পেতে চান?
জীবনে দু’টো আলাদা ফিল্ম থাকলে তার আলাদা দু’টো স্ক্রিপ্টও হয়। তুলনা না করাই ভাল।
মোদী বিয়ের খবর শুনে কী বললেন?
মোদীজি একটু আশ্চর্য হলেন। পরিবার নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করলেন। তারপর বেস্ট অফ লাক জানালেন। বললেন, ‘‘পরিবারের প্রতি কর্তব্য পালন ঠিকঠাক করে যাচ্ছ তো?’’
দিদিকে নেমন্তন্ন করবেন?
নিশ্চয়ই। ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ইনভাইট করে আসব। আশা করব উনি আসবেন।
দিদির কাছে কী গিফট চাইবেন? উপহারের সঙ্গে একঠোঙা ঝালমুড়ি?
হাঃ হাঃ বলব সেরা উপহার হবে যদি আসানসোলকে আপনি ডিস্ট্রিক্ট ঘোষণা করে দেন।
আসানসোল ২০১৯ আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অবশ্যম্ভাবীভাবে আসছে। বিয়েটিয়ে করতে গিয়ে নিজের কেন্দ্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকবে?
দায়বদ্ধতার অভাবের প্রশ্ন উঠছে কোথা থেকে? আমি এমনিতেও প্রচুর সময় একা কাটাই। একাকীত্বে নিজেই নিজের কম্প্যানিয়ন থাকি। সেই জায়গাটা আশা করি ভরবে। আর একটা কথা—আমি বড় পরিবার পছন্দ করি যেখানে অনেক মানুষ হেসে খেলে কুটোপাটি খাচ্ছে।
আপনার গাওয়া কোন গানটা রচনার সবচেয়ে পছন্দের?
আমার মনে হয় সেরা রোম্যান্টিক মুহূর্ত হল সমুদ্রের ধারে দু’জনে চুপ করে বসে থাকা। আর আমি গান না গাইলেও গানগুলো ঠিকঠাক শুনতে পাওয়া। যেগুলো ও পাচ্ছে।
এখনও কেমন অবাক লাগছে। একজন মধ্যবয়সী প্রাক বিবাহিত মানুষ যে সবে রাজনীতিতে পা দিয়ে অনন্ত চাপের মুখে। সে প্লেনে একজন এয়ার হোস্টেসকে দেখে এতটা প্রভাবিত হয়ে গেল যে জীবনসঙ্গিনী বেছে ফেলছে !
আই কান্ট এক্সপ্লেন। ওই লেট নাইট ফ্লাইটের আবছা আলোয় হঠাৎ দেখায় যেন আশ্চর্য একটা স্পার্ক ছিল। একেই নিশ্চয়ই লোকে বলে ‘হয়তো তোমারই জন্য’ মোমেন্ট। অনেক শুনেছিলাম। প্রথম নিজে এক্সপিরিয়েন্স করলাম।
একটা প্রশ্ন কিন্তু করলেন না রচনার সবচেয়ে অ্যাট্রাক্টিভ কোয়ালিটিটা কী?
ওকে, রচনার সবচেয়ে অ্যাট্রাক্টিভ কোয়ালিটিটা কী?
নিটোল সিমপ্লিসিটি। আমার কমপ্লেক্স জীবনের মধ্যে ওটাই এক্স ফ্যাক্টর।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
ব্যবসা-বাণিজ্যের
খবর
Advertisement