করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে! ভিডিও কলে মৃত বাবার মুখ দেখল ছেলে, চিরবিদায় জানাল হাসপাতালের জানালা থেকে
নাগরিক সচেতনতার বিরল এবং একই সঙ্গে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত রাখলেন কেরলের ফটোগ্রাফার লিনো আবেল।
কোট্টায়ম: করোনা যখন মহামারীর আকার ধারন করেছে তখন নাগরিক সচেতনতার বিরল এবং একই সঙ্গে উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত রাখলেন কেরলের ফটোগ্রাফার লিনো আবেল। বৃদ্ধবাবা মরণাপন্ন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এই খবর পাওয়া মাত্রই দোহায় কর্মরত লিনো কাতার হয়ে দেশে ফেরেন। কোচি বিমানবন্দরে যখন নামেন, তখন তাঁর শরীরে জ্বর জ্বর ভাব ছিল। কোচি থেকে কোট্টায়ম পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ মোটরবাইকে চেপে ফেরার সময় গলা ব্যথা শুরু হয় এবং কাশিও হয় তাঁর। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। সরাসরি হাসপাতালে পৌঁছে যান এবং করোনার সন্দেহজনক উপসর্গের কথা চিকিৎসকদের জানান। লিনোর বাবা যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানেই করোনা আক্রান্তদের জন্য তৈরি বিশেষ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় লিনো আবেলকেও। সেদিনই মৃত্য হয় লিনোর বাবার। লিনো চিকিৎসকদের জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি শেষবারের জন্য তাঁর বাবাকে দেখতে পারবেন? চিকিৎসকরা জানান, যেহেতু লিনো সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত, তাই তাঁর জনসমক্ষে আসা একেবারেই নিরাপদ হবে না। উল্টে লিনোর শরীর থেকে ছড়াতে পারে করোনা।
যার ফলে বাবার শেষকৃত্য তো দূর, তার কাছেও ঘেষেননি লিনো। ভিডিও কলে দেখেছেন মরদেহ। আর বাবাকে বিদায় জানিয়েছেন হাসপাতালের জানালা দিয়ে। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর বাবাকে নিয়ে যাওয়া হল। শোকাতুর তাঁর বাড়ির পরিজন। শোকবিহ্বল ছেলে সবই দেখেছেন, তবে দূর থেকে।
শনিবার লিনো করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পান। সেটা নেগেটিভ এসেছে। তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। শেষবেলায় বাবাকে আর ছুঁয়ে দেখতে পারলেন না। দুঃখ চেপে ছেলের উত্তর, “যদি আমার সত্যিই করোনা হত? এই ভেবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি।”
লিনো আবেলের এই মহৎ সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্বের কথা জানার পর স্বয়ং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন তাঁর বোধের প্রশংসা করেছেন। একটি ভিডিও বার্তায় পিনারাই বিজয়ন বলেন, “একজন যুবক তাঁর বাবাকে দেখতে এসেছেন। আসার পথে তাঁর মনে হয়েছে তিনি কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত। সেকারণে তাঁকে স্বাভাবিকভাবেই আইসোলেশনে রাখা হয়। এরপর তাঁর বাবা মারা যান। কিন্তু তিনি বাবাকে দেখতে যাননি। এটা তাঁর মহৎ নাগরিক দায়িত্বের পরিচয় যে তিনি এই আত্মত্যাগ করলেন।”