Shimla Agreement 1972: শিমলা চুক্তি স্থগিত পাকিস্তানের, LoC নিয়ে উদ্বেগ, কাশ্মীর জটিলতা কি বাড়বে?
India-Pakistan Relations: বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সিকিওরিটি কমিটির বৈঠক বসে। আর সেখান থেকেই শিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা করা হয়।

নয়াদিল্লি: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ঘটনায় উত্তাপ বেড়েই চলেছে। জঙ্গিদের পাকিস্তান সংযোগ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার পাশাপাশি, পাকিস্তানিদের ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। এর পাল্টা বৃহস্পতিবার পাকিস্তানও একাধিক পদক্ষেপের ঘোষণা করল, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল শিমলা চুক্তি স্থগিত রাখা। এই ঘোষণা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। (Shimla Agreement 1972)
বুধবার ভারতের তরফে একাধিক পদক্ষেপের পর, বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে সিকিওরিটি কমিটির বৈঠক বসে। আর সেখান থেকেই শিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান জানায়, বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষর হওয়া সিন্ধু জলচুক্তি একতরফা ভাবে স্থগিত করা যায় না। পাকিস্তানের জল বন্ধ করার চেষ্টাকে ‘যুদ্ধঘোষণা’ হিসেবেই ধরা হবে। আর তার পাল্টা হিসেবেই শিমলা চুক্তি স্থগিতের কথা জানায় পাকিস্তান। (India-Pakistan Relations)
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যুদ্ধের পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি মূলত একটি শান্তিচুক্তি, যার আওতায় Line of Control অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণরেখার দুই তরফে শান্তি বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় দুই দেশ। ১৯৭২ সালের ২ জুলাই, হিমাচলপ্রদেশের শিমলায় ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী এবং পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর ভুট্টোর মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে গণ্য হয় শিমলা চুক্তি। এর ফলে যুদ্ধ ভুলে দুই দেশের মধ্য়ে পারস্পরিক সৌজন্য বজায় রাখার পাশাপাশি, সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে শান্তি টিকিয়ে রাখতে সম্মত হয় দুই দেশ। চুক্তিতে বলা হয়, ‘ভারত এবং পাকিস্তান সরকার সংঘাতে ইতি টেনে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্প্রীতির সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এবং উপমহাদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিস্থাপনের লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। দেশের যাবতীয় শক্তি এবং সম্পদকে মানুষের কল্যাণের কাজে উৎসর্গ করা হবে’।
পাশাপাশি চুক্তিতে বলা হয়—
- দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কে মধ্যস্থতা করবে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
- যাবতীয় সংঘাত, মতানৈক্য শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে মেটাবে দুই দেশ, পারস্পরিক বোঝাপড়াকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
- কোনও পক্ষ শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বিঘ্ন ঘটাবে না, কোনও সংগঠন বা গোষ্ঠী শান্তি ও সম্প্রীতি ভঙ্গ করতে চাইলে, তা রুখবে।
- প্রতিবেশী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ অবস্থান, পরস্পরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমিকতাকে সম্মান জানাবে দুই দেশ। একে অপরের অভ্য়ন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না।
- রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি মেনে কেউ কাউকে হুমকি দেবে না, কেউ কারও আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর বলপ্রয়োগ করবে না।
- ওই চুক্তি মেনে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের যে ১৩০০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা ভারত দখল করেছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ টুরটুক এবং চালুঙ্কা ধরে রাখে ভারত।
- আর এই শিমলা চুক্তির পরই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় পাকিস্তান, যার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভারত।
এর মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। ওই চুক্তির পরই যুদ্ধবিরতি রেখা নিয়ন্ত্রণরেখায় পরিণত হয়। একতরফা ভাবে কোনও পক্ষ ওই রেখা পরিবর্তন করতে পারবে না বলে জানানো হয়। গত কয়েক দশকে বার বার নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্রবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও, কোনও পক্ষই রেখার অবস্থান পরিবর্তনের দিকে এগোয়নি। কিন্তু পাকিস্তান এদিন শান্তিচুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা করায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কূটনীতিক থেকে সামরিক বিশেষজ্ঞরা। শুধু সীমান্তের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের আশঙ্কাই থাকছে না, কাশ্মীর সমস্যায় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ দাবি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। শুধু রাষ্ট্রপুঞ্জ নয়, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান এবার Organisation of Islamic Cooperation এবং চিনের দ্বারস্থও হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনই পাকিস্তান সেই পথে না এগোলেও নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন এলাকাকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা।






















