New Criminal Law Bills: রাজদ্রোহ হল দেশদ্রোহ, ‘বিরোধীশূন্য’ লোকসভায় বিতর্কিত 'নয়া অপরাধ বিল' পাস করিয়ে নিল কেন্দ্র
Indian Penal Code: কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিলগুলির বিরোধিতা করে আসছিল বিরোধী শিবির।
নয়াদিল্লি: দেশের সংসদকে কার্যত বিরোধীশূন্য থাকা অবস্থায় লোকসভায় বিতর্কিত 'নয়া অপরাধ আইন বিল' পাস করিয়ে নিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার (New Criminal Law Bills)। এযাবৎ ইন্ডিয়ান পিনাল কোড বা ভারতীয় দণ্ডবিধি বলে পরিচিত ছিল যে আইন, তার পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওরের পরিবর্তে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা এবং ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্টের পরিবর্তে ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিল পেশ করেছিল কেন্দ্র। মঙ্গলবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিল তিনটি পেশ করা হয়। বুধবার ফের আলোচনা শুরু হলে, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে সেই বিল পাস হয়ে যায়। এর পর রাজ্যসভায় বিল তিনটি পাস হলে, সই করবেন রাষ্ট্রপতি। তার পর নয়া অপরাধ আইন কার্যকর হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। গণ-সাসপেনশনের পর এই মুহূর্তে রাজ্যসভাও কার্যত বিরোধীশূন্য। তাই সেখানেও বিল পাস হতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। (Indian Penal Code)
কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিলগুলির বিরোধিতা করে আসছিল বিরোধী শিবির। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে বিরোধী শিবিরের অন্যদের তরফে সেই নিয়ে বার বার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করে, কারও মতামত গ্রাহ্য না করে বিলগুলি পাস করানোর প্রচেষ্টায় মোদি সরকার রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে তাতে। এমনকি দেশের আইন বিশারদ থেকে বিচারপতি, আমলা, মানবাধিকার সংস্থা, কারও কোনও মতামতের ধার ধারা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। শুধু তাই নয়, নয়া বিল এনে মোদি সরকার ঘুরপথে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ফেরাতে চাইছে, দেশের আইনশৃঙ্খলার খোলনলচে বদলে দিতে চাইছে বলেও বিরোধীরা দাবি করেন।
বিরোধীদের সেই অভিযোগ কার্যতই বৈধতা পেল বুধবার। এদিন বিল নিয়ে আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, "আগে রাজদ্রোহ আইন ছিল। আমরা সেটিকে দেশদ্রোহ আইন করলাম। কারণ রাজদ্রোহ বলতে ব্যক্তির বিরোধিতা বোঝায়, আমরা দেশকে যোগ করলাম। দাসত্বের চিহ্ন মুছে দিলেন নরেন্দ্র মোদি। যাঁরা দেশের ক্ষতি করবেন, কেউ নিস্তার পাবেন না।" গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনার সাজা ফাঁসি বলেও এদিন জানান শাহ। এদিন শাহ জানান, CrPC-তে ৪৮৪টি ধারা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫৩১ করা হয়েছে। ১৭৭টি ধারায় পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, যোগ করা হয়েছে ৯টি নতুন অনুচ্ছেদ। ৩৯টি উপধারাও যুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আনা হয়েছে ৪৪টি নতুন ধারাও।
আরও পড়ুন: Dhankhar Mimicry Row: ধনকড়ের ‘মিমিক্রি’ বিতর্কে অভিযোগ নীতি কমিটিতে, কল্যাণ-রাহুলকে বহিষ্কারের দাবি
এদিন শাহ জানান, অটল বিহারি বাজপেয়ীর সরকারও এই বিল পাস করানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় যথেষ্ট সংখ্যক সাংসদের সমর্থন ছিল না, কারণ জোট সরকার ছিল কেন্দ্রে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকারকে গত দু'দফায় বিপুল সমর্থন দিয়ে জিতিয়েছেন দেশের মানুষ। তাতেই এই বিল আনা গেল। লোকসভায় তাণ্ডবের ঘটনায় গত কয়েক দিন ধরেই উত্তাল সাংসদ। শাহের বিবৃতির দাবিতে সরব ছিলেন বিরোধী সাংসদরা। কিন্তু এযাবৎ তাণ্ডবের ঘটনায় বিবৃতি দেননি শাহ। মঙ্গলবার যদিও নয়া অপরাধ বিল পেশ করার সময় সংসদে হাজির ছিলেন তিনি। বুধবারও আলোচনায় অংশ নেন। যদিও বিল নিয়ে আলোচনা এবং বিল পাস হওয়ার সময় লোকসভা কার্যতই বিরোধীশূন্য ছিল। কারণ গত কয়েক দিনে পর পর ১৪৩ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সেই আবহেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে নয়া অপরাধ আইন বিল পাস হয়ে গেল লোকসভায়।
যদিও গোড়া থেকেই এই বিলের বিরোধিতা করে আসছেন বিরোধী সাংসদরা। এই সব বিলের মাধ্যমে মোদী সরকার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন ঘুরপথে ফেরাচ্ছে, পুলিশের হাতে বিপুল ক্ষমতা তুলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, নয়া তিনটি বিলের ৯৫ শতাংশই পুরনো আইনের হুবহু নকল করা হয়েছে, ঔপনিবেশিক ধারা পাল্টানোর অজুহাত দেওয়া হলেও, আসলে এই তিনটি বিলের মাধ্যমে দেশকে আরও পিছনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন বিরোধীরা। যদিও সমালোচনার ধার ধারেনি কেন্দ্র। সংসদের বাদল অধিবেশন চলাকালীন, অগাস্ট মাসেই লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করা হয়। তার পর বিজেপি সাংসদ ব্রিজলাল নেতৃত্বাধীন ৩১ সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে বিলগুলি পাঠানো হয়। তার পর মঙ্গলবার লোকসভায় তিনটি বিল তোলা হয়।
১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি, ১৮৯৮ সালের কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিওর এবং ১৮৭২ সালের ইন্ডিয়ান এভিডেন্স আইন ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার প্রতীক বলে সেই সময় যুক্তি দেওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। কিন্তু শুধুমাত্র ঔপনিবেশিক ছায়া রয়েছে বলে দাগিয়ে দিয়ে গোটা আইনব্যবস্থা পাল্টে দেওয়ার আগে, কেন কারও মতামত নেওয়া হল না প্রশ্ন ওঠে। মঙ্গলবার বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে লোকসভায় যে ভাবে বিল পাস করিয়ে নেওয়া হল, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এদিন বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে বলতে শোনা যায়, "সব সাংসদদের চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বিচারপতি, শিক্ষাবিদদের মতামতও নেওয়া হয়। এমন বৃহত্তর আলোচনার পরিসর আগে কখনও দেখা যায়নি।"