Election Commission: ১৪ মিনিটে ভোটার তালিকা থেকে ১২ জনের নাম ডিলিট! ফের ‘ভোটচুরি’র প্রমাণ পেশ রাহুলের, জানালেন, ‘হাইড্রোজেন বোমা শীঘ্রই’
Rahul Gandhi on "Vote Chori" Row: বিজেপি-র সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও 'ভোটচুরি'তে যুক্ত বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন রাহুল।

নয়াদিল্লি: মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নাম করে ফের 'ভোটচুরি'র অভিযোগ তুললেন কংগ্রেস সাংসদ তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গাঁধী। এবার কর্নাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের 'ভোটচুরি'র খতিয়ান পেশ করলেন রাহুল। জানালেন সেখানে ৬০১৮ জন ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাও আবার স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে, সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে। মূলত বিরোধী শিবিরের ভোটার, দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং অন্য়ান্য অনগ্রসর শ্রেণির ভোটারদের নামই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন রাহুল। (Election Commission)
বিজেপি-র সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও 'ভোটচুরি'তে যুক্ত বলে লাগাতার অভিযোগ তুলে আসছেন রাহুল। 'ভোটচুরি' নিয়ে 'হাইড্রোজেন বোমা' ফাটানোর ঘোষণাও করেছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার দিল্লির ইন্দিরাভবনে সাংবাদিক বৈঠকে যে তথ্য তুলে ধরেন রাহুল, তা 'হাইড্রোজেন বোমা' নয় বলে জানিয়ে দেন গোড়াতেই। তিনি জানান, 'হাইড্রোজেন বোমা' ফাটাবেন, তার আগে চুরির প্রক্রিয়া সকলকে বোঝাতে চান তিনি। (Rahul Gandhi Press Conference)
এদিন আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের ২০২৩ সালের ভোটার তালিকার খতিয়ান তুলে ধরেন রাহুল। তিনি জানান, গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ লক্ষ ভোটারকে নিশানা করা হচ্ছে, তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে ভোটার তালিকা থেকে। তাঁর কাছে ১০০ শতাংশ প্রমাণও আছে। রাহুল জানিয়েছেন, আলন্দে মোট কত জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তার সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। তবে যে ৬০১৮ জনের নাম বাদ দেওয়ার কারসাজি ধরা পড়ে গিয়েছে, তা সকলের সামনে তুলে ধরছেন তিনি।
রাহুল জানান, নেহাতই কাকতালী ভাবে ৬০১৮ জনের নাম বাদ যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। সেখানকার এক বুথস্তরের অফিসার দেখেন, তাঁর কাকার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, যে ব্যক্তি তাঁর কাকার নাম মোছার আবেদন জমা পরে, সেটি এক প্রতিবেশীর। ওই প্রতিবেশীর কাছে গেলে তিনি জানান, এব্যাপারে কিছু জানেনই না তিনি। ফোন থেকে কাউকে কোনও মেসেজ বা আবেদনও পাঠাননি। তাই আড়াল থেকে অন্য শক্তি যে কাজ করছিল, বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ এমন আরও একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে একজনের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে একসঙ্গে ১২ জন বা তার বেশি সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়ে।
কী ভাবে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয় তালিকা থেকে, সেই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে রাহুল জানান, আলন্দে যে ৬০১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়ে, যাঁরা আবেদন জমা দেন, বাস্তবে তাঁরা আবেদন জমাই দেননি। আপনাআপনি সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ওই নামগুলি বাদ দেওয়ার আবেদন জমা পড়ে। যে ফোন নম্বরগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি কর্নাটকের বাইরের, অন্য রাজ্যের। আলন্দের যেখানে কংগ্রেস জিতছিল, সেখানকার ভোটারদেরই নিশানা করা হয়।
রাহুল জানিয়েছেন গোদাবাই নামের একজনের নামে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ১২ জন ভোটারের নাম ডিলিট করা হয়। আসল গোদাবাই যিনি, তিনি এর কিছুই জানতেন না। সাংবাদিক বৈঠকে ভিডাও কনফারেন্সের মাধ্যমে আসল গোদাবাইকেও হাজির করান রাহুল। ওই মহিলা বলেন, "আমি কিছুই জানতাম না।" এর পর সূর্যকান্ত নামের আর একজনের কথা তুলে ধরেন রাহুল। জানান, সূর্যকান্তের নামে লগ ইন করে মাত্র ১৪ মিনিটে ১২ জন ভোটারের নাম ডিলিট হয়। মাত্র ১২ মিনিটে ১৪ জন ভোটারের নাম মোছার আবেদন জমা পড়ে। নাগরাজ বলে এক ব্যক্তির নামে ৩৮ সেকেন্ডে দু'জন ভোটারের নাম মোছার আবেদন জমা পড়ে বলেও জানান রাহুল। রাহুল প্রশ্ন তোলেন, "হাতে ধরে ফর্ম ফিল আফ করে দেখুন, কতটা সময় লাগে। ভোর ৪টে বেজে ৭ মিনিটে হঠাৎ মনে হল ভোটারের নাম মুছে দিই। তার পরই ৩৮ সেকেন্ডের মধ্যে নাম মোছার দু'টি আবেদন জমা পড়ল! কোনও মানুষের কাজ নয়, সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে।"
সফ্টওয়্যার থেকে ভোটারদের নাম মোছার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে রাহুল জানান, যাঁদের নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ভোটার ডিলিট করা হচ্ছে, বুথের নিরিখে তাঁদের সিরিয়াল নম্বর হল ১। অর্থাৎ প্রত্যেক বুথের প্রথম নামটি বেছে নিচ্ছে সফ্টওয়্যার। সেই অনুযায়ী লগ ইন করে ভোটারের নাম ডিলিট করা হচ্ছে। অর্থাৎ একটা সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্য রাজ্যের নম্বর ব্যবহার করে জমা দেওয়া হচ্ছে আবেদনপত্র। রাহুলের কথায়, "আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এটা কোনও নীচুস্তরের লোকেদের কাজ নয়। উপর থেকে গোটা বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভাবে পরিচালিত হয়েছে। যে ১০টি বুথে সবচেয়ে বেশি নাম মোছা গয়েছে, সেগুলি সব কংগ্রেসের গড়। পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে।"
সেই সূর্যকান্তকে সরাসরি মঞ্চে ডেকে আনেন রাহুল। তাঁর নামে লগ ইন করে যে ববিতার নাম ভোটার তালিকা থেকে মোছা হয়, সেই ববিতাও আসেন মঞ্চে। সূর্যকান্ত বলেন, "আমার নাম ব্যবহার করে ১২ জনের নাম ডিলিট করা হয়েছে। আমি কিন্তু কিছুই জানি না। কাউকে কোনও মেসেজ পাঠাইনি। ববিতা এসে জিজ্ঞেস করায় বুঝলাম আমার ফোন থেকে মেসেজ গিয়েছে।"
এদিন রাহুল বলেন, "লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে এই দাবি করছি আমি। প্রমাণ-সহ বিষয়টি তুলে ধরছি। বিষয়টি হালকা ভাবে নেবেন না। একটি বিষয় স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্র ধ্বংসকারীদের রক্ষা করছে। যে উপায়ে চুরি হচ্ছে, কী ভাবে নাম যুক্ত হচ্ছে, কী ভাবে বাদ যাচ্ছে, সব কিছু তুলে ধরছি আপনাদের সামনে। আপনারাই বিচার করবেন।"
জ্ঞানেশ কুমারের বিরুদ্ধে সরাসরি কেন অভিযোগ করছেন, তা নিয়ে রাহুলের বক্তব্য, "তদন্ত চলছে এই বিষয়টি নিয়ে। কর্নাটকের CID ১৮টি চিঠি পাঠিয়েছে গত ১৮ মাসে। নির্বাচন কমিশনের কাছে ডেস্টিনেশন আইটি চাওয়া হয়, যেখান থেকে আবেদনপত্র জমা পড়ে। ডিভাইস ডেস্টিনেশন স্পট, ওটিপি ট্রেল চাওয়া হয়। কারণ আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ওটিপি বাধ্যতামূলক। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ওই সংক্রান্ত তথ্য দিচ্ছে না। কারণ তাতে কোথা থেকে ঘটানো হচ্ছে বিষয়টি, তা বেরিয়ে যাবে। আমরা জানি কোথা পৌঁছবে বিষয়টি।"
এদিন 'ক্রোনোলজি'ও বোঝান রাহুল। তিনি জানান, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এফআইআর জমা পড়ে। মার্চেই চিঠি পাঠানো হয়। অগাস্টে কমিশন যে জবাব দেয়, তাতে কোনও তথ্য ছিল না। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফের চিঠি দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ তথ্য চাওয়া হয় কমিশনের কাছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ বার চিঠি দেওয়া হয়। রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার চিঠি দেন। বার বার করে জবাব চাওয়া হয়। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি। রাহুলের বক্তব্য, "এতেই প্রমাণিত হয় যে, জ্ঞানেশ কুমার দুষ্কৃতীদের রক্ষা করছেন। কেন্দ্রীয় ভাবে, উপরমহল থেকে, প্রযুক্তির সাহায্যে যে গোটা বিষয়টি সম্পন্ন হচ্ছে, তাও পরিষ্কার। কে করছে এসব? উত্তর হল, নির্বাচন কমিশন সব জানে। আমি যুবসমাজকে বলতে চাই, দেশের সংবিধানের উপর হামলা হচ্ছে। কমিশন গণতন্ত্রের হত্যা হতে দিচ্ছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আসল তথ্য দিচ্ছেন না। এটা হাইড্রোজেন বোমা নয়, সেটা আসছে। এটা ভোটচুরির আরও একটি উদাহরণ। কলসেন্টার, সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ভোটচুরি হয়েছে। ভোটচোরদের বাঁচাচ্ছেন জ্ঞানেশ কুমার।"
মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা কেন্দ্রেও একই ভাবে ৬৮৫০ জন ভুয়ো ভোটারের নাম যুক্ত করা হয় বলে দাবি করেছেন রাহুল। আলন্দে ভোটারদের নাম মোছা হয় এবং রাজুরাতে নাম যুক্ত করা হয় বলে দাবি তাঁর। তবে পদ্ধতি এক বলে জানিয়েছেন। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশেও একই কাজ হয়েছে এবং সব প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি রাহুলের। যদিও তাঁকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপি-র অনুরাগ ঠাকুর। তাঁর বক্তব্য, "রাহুল গাঁধীর অভিযোগ অসত্য। উনি নিজের উপর হাইড্রোজেন বোমা ফেলেছেন। রাহুল গাঁধী কি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করেন? কর্নাটকে ভোট চুরি হলে কংগ্রেস প্রার্থী জিতলেন কী করে?"























