Rakesh Kishore: ‘পরমাত্মা করিয়েছেন, আফশোস নেই’, প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছুড়ে বললেন রাকেশ কিশোর, বার্তা সনাতনীদের
Shoe at CJI BR Gavai: কাউকে ভয় পান না তিনি, জানালেন রাকেশ কিশোর। বার্তা সনাতনীদের।

নয়াদিল্লি: ভরা আদালতে দেশের প্রধান বিচারপতিকে জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা। গোটা দেশ সেই নিয়ে নিন্দায় সরব হলেও, কোনও আফশোস নেই আইনজীবী রাকেশ কিশোরের। তাঁর দাবি, সনাতনীদের বিরুদ্ধে একের পর এক রায় দিয়ে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। সনাতনীদের বিদ্রুপ করেছেন প্রধান বিচারপতি। এর বিরুদ্ধে সনাতনীদের জেগে উঠতে হবে বলেও বার্তা দিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, কিশোরের দাবি, ‘পরমাত্মা’ই তাঁকে দিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। (Rakesh Kishore)
খাজুরাহোর জাভারি মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তির সংস্কার নিয়ে একটি মামলা সম্প্রতি খারিজ করে দেয় শীর্ষ আদালত। ওই মামলায় আদালতের ভূমিকায় তিনি অসন্তুষ্ট ও আহত হন, তাই বিচারপতিকে জুতো ছুড়ে মারতে যান বলে জানিয়েছেন কিশোর। সংবাদ সংস্থা ANI-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন তিনি। (Shoe at CJI BR Gavai)
প্রশ্ন: প্রধান বিচারপতির প্রতি কেন এমন আচরণ? কেন জুতো ছুড়ে মারতে গেলেন?
রাকেশ কিশোর: ১৬ সেপ্টেম্বর একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় CJI-এর কাছে। CJI গাভাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন-ই, সেই সঙ্গে আবেদনকারীকে বিদ্রুপ করেন। বলেন, ‘মূর্তির কাছে গিয়ে প্রার্থনা করুন। বলুন, নিজের মাথা নিজে জুড়ে নিন’। অথচ অন্য় ধর্মের ক্ষেত্রে, ভাল করেই জানেন কোন ধর্ম…তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে আদালত পদক্ষেপ করে। হলদওয়ানিতে রেলের জমি দখল করে রয়েছে বিশেষ সম্প্রদায়। তুলতে গেলে তিন বছর আগে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। আজও সেটা রয়েছে। নূপুর শর্মাকে বলা হয়, উনি পরিবেশ খারাপ করেছেন। আমাদের সনাতন ধর্মের কথা উঠলেই, সে জাল্লিকাট্টু হোক বা দহি-হান্ডি, উচ্চতাও বেঁধে দেওয়া হয়। ছোটখাটো বিষয়ে এমন নির্দেশ দেয় আদালত, যাতে আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। রেহাই না দিলেও, কাউকে অন্তত বিদ্রুপ করতেন না! তা না করে বললেন, মূর্তির সামনে ধ্যান করতে। রিট পিটিশন খারিজ করে অন্যায় করেছেন উনি। আমি খুব আহত হই। নিজে হিংসার বিরোধী আমি। কিন্তু এটা তো দেখতে হবে যে, আমার মতো একজন অহিংস মানুষ এমন সিদ্ধান্ত নিল কেন! আমার নামে কোনও মামলা নেই, আমি কোনও দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নই। কেন এমন করতে হল আমাকে? ভেবে দেখুন। ভেবে দেখুক গোটা দেশ। আমি অশিক্ষিত নই। এমএসসি, পিএইচডি, এলএলবি করেছি। গোল্ড মেডেলিস্ট আমি। নেশার ঘোরেও ছিলাম না। ওষুধও খাইনি। উনি অ্যাকশন নিয়েছেন, আমি রিঅ্যাকশন দিয়েছি। যেভাবে পারেন দেখুন। আমি ভয় পাই না। কোনও আফশোস নেই আমার।
প্রশ্ন: আগে থেকে পরিকল্পনা করে গিয়েছিলেন আপনি? আদালতে কাল কোনও মামলা ছিল আপনার?
রাকেশ কিশোর: কোনও মামলা ছিল না আমার। সব দিক ভেবেই গিয়েছিলাম। কারণ ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ঘুম হচ্ছিল না আমার। পরমাত্মার শক্তি আমাকে ঘুম থেকে তুলে বার বার বলছিল, ‘এটা কী করছো তুমি? ঘুমাচ্ছো? দেশ জ্বলছে, আর তুমি ঘুমাচ্ছো’? তাই করতে হয়েছে। গলকাল প্রস্তুতি ছিল। আমি হার্টের রোগী। একটা ভালভ পুরো খারাপ। প্রতিস্থাপন করতে হবে। গত সাত-আট বছর ধরে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। দু’-তিন দিনের ওষুধ নিয়ে গিয়েছিলাম। জানতাম, এদিক ওদিকের মামলায় দেরি হবে। আমি তো অবাক যে CJI ছেড়ে দিয়েছেন। ওঁর উপকার, না দয়া, কী ভাবে দেখব বিষয়টিকে, জানি না।
প্রশ্ন: ওই ঘটনার পর আপনার সঙ্গে কী হল?
রাকেশ কিশোর: ডিসিপি-এসিপি তিন-চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন আমাকে। চা-বিস্কিট, মধ্যাহ্নভোজ খাওয়ান। জল চাই কি না, জানতে চান ওঁরা।
প্রশ্ন: বিচারব্যবস্থা গণতন্ত্রের একটি স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের প্রধান CJI. আপনার মনে হয় না, এটা অন্য়ায়?
রাকেশ কিশোর: কী উচিত, কী নয়, ওসব ছাড়ুন। ওসবে পড়তে চাই না আমি। CJI-কে ভাবতে হবে। এত উঁচু সাংবিধানিক পদে বসে রয়েছেন। বড় বড় আইনজীবীরা মি. লর্ড বলছেন। এর অর্থ বুঝতে হবে ওঁকে। পদের গরিমা রক্ষা করতে হবে। ভিক্ষা দিতে না পারলে কারও বাটি ভেঙে দেবেন না। মরিশাসে গিয়ে উনি বলেছেন, দেশে বুলডোজারের শাসন চলবে না। CJI এবং বিরোধীদের কাছে প্রশ্ন, আমি বরেলীর লোক। ওখানে বাড়ি আছে আমার। ওখানকার কলেজে পড়াশোনা। আমাকে বলুন তো, যাদের উপর বুলডোজার চলেছে, তারা সরকারি সম্পত্তি দখল করে রাখেনি? সরকারি সম্পত্তিতে অট্টালিকা, হোটেল, ম্যারেজ হল বানিয়ে রেখেছে। যোগীজির বুলডোজার চালানো ভুল! বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে জায়গা। আর তুলতে বাধা দিচ্ছে আদালত। হলদওয়ানিতে রেললাইনের দুই ধারে বেআইনি দখলদারিতে তিন বছর ধরে স্থগিতাদেশ। বেআইনি সম্পত্তি হলে সিদ্ধান্ত নিন , ফিরিয়ে দিন জমি। বলছেন, বুলডোজার চলবে না। আমি এতে আহত হয়েছি, আহত থাকবও।
প্রশ্ন: আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা যদি বাড়ে?
রাকেশ কিশোর: হাজারো বছর আমরা সবার গোলাম থেকেছি। অন্য, ছোট ছোট জাতির লোক রাজত্ব করে চলে গিয়েছে আমাদের উপর। আমরা সহিষ্ণু ছিলাম বলেই। কিন্তু অস্তিত্ব যদি সঙ্কটে পড়ে, আমি চাই, সনাতনীরা যেন চুপ করে না থাকে। বাড়িতে যার যেমন ক্ষমতা করুন। আমি উস্কানি জোগাচ্ছি না। কিন্তু আমি চাই, নিজের ভাল নিজে দেখুন। বুঝতে হবে, ১৯৪৭ সালে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল…এদিককে অর্ধেক, ওদিকে অর্ধেক চলে গিয়েছিল। ফের ভাগাভাগি হলে কী হবে? আমরা কোথায় যাব? এটাই আমার প্রশ্ন।
প্রশ্ন: আপনাকে তো ছেড়ে দিয়েছে? অভিযোগ হয়নি?
রাকেশ কিশোর: বার কাউন্সিল পদক্ষেপ করে ফেলেছে! হার্ড কপি এসে গিয়েছে আমার কাছে। বলা হয়েছে, অ্যাডভোকেট আইনের আওতায় সাসপেন্ড করা হয়েছে আমাকে। অথচ তার ৩৫ নং ধারায় বলা আছে, অভিযোগ এলে তবেই পদক্ষেপ। অভিযোগ দায়েরই হয়নি। স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করেছে বার কাউন্সিল। নোটিস, জবাব, অনেক প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন করেছে বার কাউন্সিল। কোনও নোটিস দেয়নি, শৃঙ্খলাভঙ্গ কমিটি বানানো হয়নি। ছেড়ে দিয়েছে। অভিযোগ নেই! সাসপেন্ড করে বলেছে প্র্যাকটিস করতে পারব না। আমার হাতে তো মামলা রয়েছে! ফি নিয়েছি মক্কেলের কাছ থেকে! টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে। সকালেই এসে ফাইল ফেরত নিয়ে গেলেন একজন। টাকা ফেরত চাইলেন। জানালাম, এখন নেই আমার কাছে। দিয়ে দেব। কারও টাকা মেরে দেব না আমি। কিন্তু ওঁদের ভাবতে হবে। তুঘলকি ফরমানে সাসপেন্ড করে দিয়েছে। এভাবে সাসপেন্ড করা যায়?
প্রশ্ন: বিরোধীরা বলছেন, দলিত প্রধান বিচারপতির উপর আক্রমণ!
রাকেশ কিশোর: এসব কথা ঘোরানো। আমার নাম ডক্টর রাকেশ কিশোর। আমার জাত বলতে পারবেন? এ তো একতরফা কথা! দলিত হওয়ার একতরফা ফায়দা তুলছেন। উনি (CJI) দলিত নন। সবচেয়ে আগে সনাতনী ছিলেন, হিন্দু ছিলেন। হিন্দু দলিত। সব ছেড়ে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর যদি মনে করেন আর হিন্দু নন, তাহলে দলিত কিসের! এটা মানসিকতার উপর নির্ভর করে। আর যাঁরা দলিত হওয়ার কথা বলছেন, তাঁরা চান, এই সরকারকে ফেলে দিতে। দেশ আবার গোলাম হয়ে যাক আর কী! আমি এসব ভাবি না।
প্রশ্ন: এই যে পুলিশ পদক্ষেপ করল না, এমন ঘটনা বাড়তে পারে তো!
রাকেশ কিশোর: বাড়তে পারে, একথার কী গুরুত্ব! বিচারপতিদের সংবেদনশীল হতে হবে। লক্ষ লক্ষ মামলা পড়ে রয়েছে। একটি দুর্ঘটনার মামলা চলছে চার বছর ধরে। স্পষ্ট যে আমাদের গাড়ি ওঠেনি, মোটর সাইকেল আরোহীর হেলমেট ছিল না, লাইসেন্স ছিল না। ক্ষতিও হয়নি কোনও। হাসপাতালের অনেক বড় ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: কোনও আফশোস হচ্ছে না আপনার?
রাকেশ কিশোর: কোনও আফশোস নেই। ক্ষমাও চাইব না। কিছু করিনি আমি। পরমাত্মা করিয়েছেন। আমি করিনি, আমি তো মাধ্যম! ওঁর ইচ্ছেই সব। ওঁর ইচ্ছে হলে জেল হবে, ফাঁসি হবে, মেরে ফেলা হবে আমাকে। সবই পরমাত্মার ইচ্ছে। আমার বয়স ৭২। আর কত সহ্য করব?























