এক্সপ্লোর
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Special Blog: সিএএ,এনআরসি: মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ
মহিলাদের প্রতিবাদের তাত্পর্য্য এসবের থেকে আরও বেশি। ভারতীয় মহিলারা অহিংসার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। দুসপ্তাহের ওপর হয়ে গেল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়, সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে গণ অসহযোগ আন্দোলন এখন আন্তর্জাতিক খবরের পরিধির অংশ হয়ে উঠেছে। তা বিশ্বব্যাপী অহিংসার ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে।
![Special Blog: সিএএ,এনআরসি: মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ Special Blog:Women, Nonviolence and Civil Resistance Special Blog: সিএএ,এনআরসি: মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2020/01/04211206/caa-women-2.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এনআরসি) বিরুদ্ধে দেশজোড়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভের নানা উল্লেখযোগ্য দিকের একটি অবশ্যই হল, ভারত রাষ্ট্রের বজ্রকঠিন চেহারা, সংবিধানে সুরক্ষিত স্বাধীনতা ও অধিকার বেশি বেশি গ্রাস হওয়ার বিরুদ্ধে মহিলারা অসন্তোষ জানাচ্ছেন, প্রতিবাদে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছেন। ‘উল্লেখযোগ্য’ শব্দটা ব্যবহার করায় কেউ কেউ হয়তো ভাববেন, এর আগের অসহযোগ আন্দোলনগুলিতে মেয়েরা তেমন সামনের সারিতে ছিলেন না, ভুলবশতঃ এটা বোঝাতে চেয়ে তাঁদের প্রতি ন্যয়বিচার করা হল না। কিন্তু অবশ্যই ব্যাপারটা তা নয়। নির্ভয়ার নৃশংস গণধর্ষণের জেরে দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ, প্রতিবাদে মেয়েদের বিরাট সংখ্যায় চোখে পড়েছিল, যেমন দেখা গিয়েছিল ২০০৪ সালে, যখন এক তরুণীর যৌন নিগ্রহ ও সামগ্রিক ভাবে মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন হিংসার বিরুদ্ধে নগ্ন প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন মনিপুরের মায়েরা।
ছাত্রী ও সামগ্রিক ভাবে সর্বস্তরের মহিলারা চলতি বিক্ষোভ আন্দোলনে যে অসাধারণ সাহস, বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তা ভারতের জনজীবনে মেয়েদের আরও বড় ভূমিকায় নামার ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারতকে আরও গণতান্ত্রিক এক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে তাদের শক্তির গুরুত্ব বোঝাচ্ছে। একটা ধারণা ছড়িয়েছে যে, সিএবি-সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলনে সরকার ঘাবড়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি এটাও বলব যে, সরকারের যেসব কারণে চমকে গিয়েছে, সেগুলির অন্যতম, এই প্রতিরোধে, যা অনেকাংশে অপ্রত্যাশিত ছিল, মহিলাদের যোগদান। ভারত রাষ্ট্র কখনও মেয়ে, মহিলাদের নিয়ে তেমন গুরুত্ব দিয়ে ভাবেনি, যদিও ক্ষমতায়ন হিসাবে তাঁদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত হয়েছে। তাঁদের ‘ভারতীয় নারীত্ব’ অটুট রাখার চেষ্টা হয়েছে। আবার একইসঙ্গে ‘আধুনিক কর্মরত মহিলা’ তকমাও দেওয়া হয়েছে। ‘দেশকে সম্মান করতে হলে মহিলাদের সম্মান করুন’, ভারতবাসীকে এই বোধে অনুপ্রাণিত করতে একের পর এক সরকার পোস্টার অভিযান চালিয়েছে, জনগণকে ‘কন্যাসন্তান রক্ষায় এগিয়ে আসতে’ বলেছে, প্রচার করেছে যে, ‘দেশের মুক্তির বীজ রয়েছে কন্যাদের শিক্ষা’য়।
এমন প্রচারমুখী স্লোগান ন্যয়বিচার ও সাধারণ বোধের প্রতিফলন ঘটায় নিঃসন্দেহে, কিন্তু বর্তমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভে মহিলাদের আরও সাড়া ফেলে দেওয়া ছবি সামনে এসেছে, যাঁরা সুরক্ষা-নজরের বেঁধে দেওয়া গন্ডির বাইরে পা দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ, বিরুদ্ধ মতপ্রকাশের কাদামাখা জলে নেমেছেন। দুনিয়াব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিতদের কাছে তরুণী পড়়ুয়াদের নিরাপত্তা জওয়ানদের হাতে ফুল তুলে দেওয়ার ছবি হয়তো একটু ক্লিশে লাগতে পারে,
কিন্তু ঘটনা হল, ভারতীয় মহিলারা নেতৃত্বদানে সাহস, উদ্ভাবনীশক্তি, শৃঙ্খলা দেখিয়েছেন, পুরুষের সামনে তাঁদের অনুসরণ করার দৃষ্টান্ত রেখেছেন, রাষ্ট্রকে নির্ধারক পদক্ষেপ নেওয়া থেকে ঠেকিয়েছেন। তাঁরা নজর কাড়ার মতো দারুণ দারুণ প্ল্যাকার্ড দেখিয়েছেন-যেমন, বাবা জানে, আমি ইতিহাস পড়ছি, কিন্তু জানে না, আমিই ইতিহাস গড়তে ব্যস্ত। আরেকটিতে রয়েছে, পিএম ২.০ পিএম ২.৫ থেকে আরও খারাপ। পিএম ২.০ মানে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়া নরেন্দ্র মোদি। আর পিএম ২.৫ বাতাসের সেই দূষিত কণা যা খালি চোখে দৃশ্যমান নয় এবং একবার ফুসফুসে ঢুকে গেলে ক্রনিক হার্টের সমস্যা বাধায়, শ্বাসকষ্ট এমনকী মৃত্যু ডেকে আনে। মান্ডি হাউস থেকে যন্তরমন্তর মিছিল করে যাওয়া মেয়েদের হাতে আরেকটি প্ল্যাকার্ডে আবার দেখা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ একটা অগ্নিকুন্ডের সামনে বসে। মোদি বলছেন, এই ঠান্ডায় একটু গরম পেলে আরাম লাগে, কী বলো? শাহের জবাব, আমার দারুণ আনন্দ, এই আগুন আমরাই জ্বালিয়েছি।
কিন্তু মহিলাদের প্রতিবাদের তাত্পর্য্য এসবের থেকে আরও বেশি। ভারতীয় মহিলারা অহিংসার ক্ষমতা দেখিয়েছেন। দুসপ্তাহের ওপর হয়ে গেল একটা ভিডিও ভাইরাল হয়, সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে গণ অসহযোগ আন্দোলন এখন আন্তর্জাতিক খবরের পরিধির অংশ হয়ে উঠেছে। তা বিশ্বব্যাপী অহিংসার ইতিহাসে ঢুকে পড়েছে। জামিয়া মিলিয়ার ছাত্ররা প্রতিবাদ-বিক্ষোভে নামলেন। হিংসা ছড়াল, যদিও তার উত্স কোথায় ছিল, তা এখনও পরিষ্কার নয়। আয়েশা রেন্না, লাবিদা ফরজানা, ছন্দা যাদব-জামিয়ার এই তিন ছাত্রী তাঁদের এক পুরুষ সহপাঠীকে পুলিশের লাঠির মার থেকে বাঁচালেন। তাঁদের দেখা গেল, ওই ছাত্র আর লাঠিধারী পুলিশের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন, অকল্পনীয় পুলিশি নৃশংসতাকে ধিক্কার দিচ্ছেন। আবার অন্য ভাবে প্রতিবাদ জানালেন পুদুচেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাবিহা আবদুরচিম, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবস্মিতা চৌধুরি। নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গোল্ড মেডালিস্ট দুই ছাত্রী সমাবর্তন উত্সবে সিএএ-র তীব্র বিরোধিতা করলেন। দেবস্মিতা তো মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’ বলে গর্জে উঠে উপস্থিত সবার সামনে সিএএ-র কপি ছিঁড়ে ফেলে ‘ইনক্লাব জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিয়ে নেমে গেলেন।
দিল্লির জামিয়া নগরের মুসলিম অধ্যুষিত শাহিনবাগের মহিলারা দুসপ্তাহের ওপর সিএএ, এনআরসির বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ করছেন। নয়ডার সঙ্গে শহরের সংযোগকারী মূল হাইওয়ের একাংশ জুড়ে অবস্থানে বসেছেন ওঁরা। কয়েকজন দিনের পর দিন বাড়ির বাইরে আছেন, অনেকে কাচ্চাবাচ্চাদের নিয়েই সামিল হয়েছেন। দেশব্যাপী এনআরসি করার সরকারি প্ল্যানের পরিণতি কী হতে চলেছে, সেটা ভালই জানেন এঁদের মধ্যে নিরক্ষর মহিলারা। মহিলারাই যে বেশি বিপন্ন হবেন, সেটা বোঝেন সবাই। কেননা সম্পত্তির যাবতীয় কাগজপত্র বাড়ির ছেলেদের নামে। অনেকের কাছেই ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের দরকারি নথি-কাগজ নেই। সর্বোপরি, ওঁদের উপস্থিতি, দৃঢ়তা, হিম্মত, শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিবাদ এই প্রচারকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে যে, ওদের বিক্ষোভ, অবস্থানের পিছনে ‘বাইরের প্ররোচনাদাতাদের’ বা ‘বিরোধীদের’ উসকানি রয়েছে।
সংবিধানে দেওয়া আইনের চোখে সাম্যের প্রতিশ্রুতিকে অহিংস রাস্তায় রূপায়ণে এবং রাষ্ট্রশক্তিকে অহিংস প্রতিরোধে মহিলারা যে সামনে থাকেন, সেটা মহাত্মা গাঁধীকে বিস্মিত করেনি। ব্রিটেনের সাফ্রাগেট আন্দোলনের দিকে তাঁর গভীর নজর ছিল, ১৯০৭ সালে তার সমর্থনে ‘ব্রেভ উইমেন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেওছিলেন। তিনি মনে করতেন, প্রকৃতিগত ভাবেই মহিলারা অহিংসার দিকে ঝোঁকেন। যদিও তিনি বারংবার বলেছেন, ‘দুর্বলের অহিংসা’ আর ‘সবলের অহিংসা’র মধ্যে পার্থক্য করা জরুরি। দুর্বল বলতে তিনি শুধু মহিলাদের বোঝাননি, বরং বুঝিয়েছেন, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাঁদের, যাঁরা নিজেদের পছন্দ, বিচার বোধ বা নৈতিক যুক্তি খাটিয়ে নয়, স্বভাব, প্রবৃত্তির বশে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, পরিস্থিতির ফেরে অহিংসার পথে হাঁটেন। গাঁধীর স্থির বিশ্বাস ছিল, মহিলাদের অহিংসার প্রতি প্রকৃতিগত ঝোঁককে অহিংসার পথে সামাজিক রূপান্তরের আন্দোলনে চালিত করা গেলে তাঁরাই হতে পারেন আদর্শ সত্যাগ্রহী।
বছরভর নিজের সাপ্তাহিক কাগজ হরিজন-এ লেখনীর মাধ্যমে গাঁধী এই মত তুলে ধরেছেন যে, মহিলারা হলেন অহিংসার মূর্ত প্রতিরূপ। অহিংসার অর্থ অন্তহীন ভালবাসা যা থেকে আবার আসে দুঃখ, যন্ত্রণা সহনের অসীম ক্ষমতা। আমাদের সময়ে অহিংসার ওপর আলোচনার চৌহদ্দিতে ‘সমতা’, ‘অধিকার’ এই শব্দগুলি যতটা জোরে উচ্চারিত হয়, হয়তো ততটা হয় না ‘প্রেম’, ‘যন্ত্রণা’। কিন্তু যে শব্দই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলুক না কেন, বর্তমান অসহযোগ আন্দোলনে মহিলাদের উত্থান নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বড় আশার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দেশটা নিজের জয়ের গর্বে মত্ত একনায়কতন্ত্রী রাষ্ট্রশক্তির কাছে এখনও বশ্যতা স্বীকার করেনি। অতীতের মতো আজও মহিলারা নিশ্চিত ভাবেই দেখাবেন যে, নগ্ন পেশীশক্তির সঙ্গে আপস হতে পারে না গণতান্ত্রিক চেতনার।
বিনয় লাল লেখক, ব্লগার, সংস্কৃতি সমালোচক ও ইতিহাসের অধ্যাপক
ডিসক্লেমার: এই নিবন্ধে লেখকের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ তাঁর নিজস্ব। তা এবিপি নিউজ নেটওয়ার্কের মতামত, বক্তব্যের প্রতিফলন নয়।
![Special Blog: সিএএ,এনআরসি: মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2020/01/04154302/protests-300x225.jpg)
![Special Blog: সিএএ,এনআরসি: মহিলাদের অহিংস প্রতিবাদ-প্রতিরোধ](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2020/01/04154302/caa-protest-women-300x225.jpg)
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার খবর
ব্যবসা-বাণিজ্য
খবর
পুজো পরব
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)