বালিঘাট দখল ঘিরে লাভপুরে বোমাবাজি, সংঘর্ষ, নিহত ৮
বীরভূম: দুষ্কৃতী-লড়াইয়ে উত্তপ্ত লাভপুর। বোমায় মৃত আট। আহত অনেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্রবার, সকাল ১০টা নাগাদ পাশের মীরবাঁধ গ্রাম থেকে দুষ্কৃতীরা এসে আচমকাই দরবারপুরে বোমাবাজি শুরু করে। মুড়ি-মুড়কির মতো পড়তে থাকে বোমা! খবর পেয়ে গ্রামে যায় লাভপুর থানার পুলিশ। এর মধ্যেই, দুপুর দুটো নাগাদ দরবারপুর গ্রামের পিছন দিকে বড় বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায়! কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা! গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৮-১০ জন ঝলসানো অবস্থায় পড়ে আছে! কোথাও মাথার অংশ পড়ে, তো কোথাও চাপ চাপ রক্ত। আবার কোথাও কারও শরীর থেকে পা আলাদা হয়ে গিয়েছে! গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিন্নভিন্ন দেহাংশ। স্থানীয়রা নিজেরাই আহতদের পুলিশের গাড়িতে তুলে দেয়। গ্রামজুড়ে তখন চরম আতঙ্ক।
বোমাবাজি থেকে বাদ যায়নি লাভপুরে স্কুল। শুক্রবার দাঁড়কা উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছিল। সবে তখন পড়ুয়ারা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। সেইসময়ই শুরু হয় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি। পরিস্থিতি আঁচ করে, ভিতর থেকে স্কুলে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বাইরে তখনও মুড়ি মুড়কির মতো বোমা পড়ছে, ওই অবস্থাতেই দীর্ঘক্ষণ সিঁটিয়ে বসে থাকে পড়ুয়ারা।
স্কুল থেকেই পুলিশকে ফোন করেন শিক্ষকরা। খবর দেওয়া হয় পড়ুয়াদের বাড়িতে। কিন্তু বোমাবাজির জেরে অনেকেই সন্তানকে নিতে আসতে পারেননি। পুলিশ প্রহরায় তাদের বাড়ি পাঠানো হয়। ঘটনার জেরে বাতিল হয়ে গিয়েছে স্কুলের পরীক্ষা।
দরবারপুরগ্রামের বাসিন্দারা পাশের গ্রাম মীরবাঁধ থেকে হামলার অভিযোগ করলেও, পুলিশ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, দরবারপুর গ্রামেই বোমা বাঁধা হচ্ছিল। সেই সময় বিস্ফোরণ ঘটে। তাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এদিনের বোমাবাজি হয়েছে। যদিও, সেই তত্ত্ব খারিজ করেছে শাসক দল।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, অবৈধ বালি খাদান দখলের লড়াইয়েই, এই মর্মান্তিক পরিণতি! বালির বখড়া কে নেবে, তা নিয়েই সম্মুখ-সমরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
ময়ূরাক্ষী নদীর এক পাড়ে মীরবাঁধ গ্রাম। মাঝে দাঁড়কা গ্রাম। তার পাশেই দরবারপুর। জানা গিয়েছে, মীরবাঁধে প্রচুর অবৈধ বালি খাদান রয়েছে। অভিযোগ, ওই সব বালি দরবারপুর দিয়ে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়। অর্থাত লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন!
স্থানীয় সূত্রে দাবি, এটা নিয়েই মীরবাঁধের তৃণমূল নেতা আব্দুল আহাদ ও দরবারপুরের তৃণমূল নেতা শোয়েব আলির বিবাদ! কারণ দু’পক্ষই চায় বালি খাদানের নিয়ন্ত্রণ!
বালি খাদানের দখলদারির প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলকে নিশানা করেছে সিপিএম। বীরভূমের সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোম বলেন, কয়লা, বালি লুঠ নিয়ে ভাগাভাগি। বালির খাদের দখলের কারবার। তৃণমূলের কোন্দল। সিপিএম বালির খাদানে নেই। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। লাভপুরকাণ্ডে সিপিএমের পাশাপাশি তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে বিজেপিও। যদিও, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, তৃণমূলের কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। সিপিএমের দুষ্কৃতীরা ঘটিয়েছে।