Bankura Dokra Art: উধাও চেনা কর্মব্যস্ততা, করোনাকালে চরম দুরবস্থায় 'ডোকরা' শিল্পের জন্য বিখ্যাত বাঁকুড়ার বিকনা
এখন করোনা নামক এক ভিলেনের সৌজন্যে এই গ্রামের শিল্প ও শিল্পীরা আজ চরম দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন...
পুর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: 'ডোকরা' বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাঁকুড়া শহরের উপকণ্ঠে বিকনা গ্রামের শিল্পীদের কর্মব্যস্ততার ছবি।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারী নানান বিধিনিষেধের গেরোয় পড়ে সেই চেনা ছবিটাই যেন উধাও। এই মুহূর্তে ঠিক কেমন আছেন এই যুগের বিশ্বকর্মারা?
গ্রামে ঢুকতেই নজরে এল বেশীরভাগ শিল্পীরাই বাড়িতে বসে। বিক্ষিপ্তভাবে কেউ কেউ নিজের মতো করে কাজ করছেন। তবে গত দু'বছর ধরে করোনার উপস্থিতিতে বিক্রিবাটা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে বলে তাঁরা জানান। এই অবস্থায় আর পাঁচজনের মতো রেশনটুকু মেলে, এর বাইরে সরকারী কোনও সাহায্যই তাঁরা পাননি বলেই জানান।
সরকারি সহযোগিতায় বানানো হয়েছিল শিল্পীদের কেনাবেচার জন্য বেশ কয়েকটি স্টল। তাও এক বছরের বেশি বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। করোনাকালে বাইরে থেকে আর কেউ আসছেন না। ফলে, ডোকরা স্টলে সেই জন্য বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।
বিডিও শুভব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, করোনা আবহে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ। অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিল্পসামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ঠিক কবে বাঁকুড়ার এই গ্রামে ডোকরা শিল্পের প্রচলন হয়েছিল তা এখন আর কেউ বিশেষ মনে করতে পারেন না। কারোর মতে ১৫০ বছর বা আবার কেউ বলেন তারও বেশি। তবে দিন-মাস-বছরের হিসেবে সময় যাই হোক না কেন, দীর্ঘ এই যাত্রা পথে একটু একটু করে বদলেছে বিকনার ডোকরা শিল্পীদের কাজের ধরণ।
এক সময় যেখানে লক্ষ্মীর ভাঁড়, চাল মাপার পাই, কিংবা হাতি, ঘোড়া আর এবং দেবদেবীর মূর্তি তৈরির কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, পরবর্তীকালে তার পরিধি অনেক বেড়েছিল। মানুষের চাহিদা ও আগ্রহের কারণে নিজেদের শিল্পকর্মকে একটু একটু করে বদলে ফেলেছিলেন এই গ্রামীণ শিল্পীরা।
ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখান তৈরি হতো সুদৃশ্য কারুকার্য সমৃদ্ধ গয়নার বাক্স, সোপ কেস, অ্যাশট্রে সহ ঘর সাজানোর নানান জিনিসপত্র। পাশাপাশি তৈরি হতো মহিলাদের জন্য বিভিন্ন রকমের গয়না।
কিন্তু এখন করোনা নামক এক ভিলেনের সৌজন্যে এই গ্রামের শিল্প ও শিল্পীরা আজ চরম দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কবে আবার ফিরবে সেই পুরনো কর্মব্যস্ততা, কবে আগের মতো রোজগার বাড়বে, কবে আবার শিল্পীদের মুখের হাসি চওড়া হবে-- এখন সেদিকেই তাকিয়ে এখানকার প্রায় ৭০টি পরিবারের কয়েকশো মানুষ।