(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Mamata Banerjee Rally: "বিজেপি চম্বলের সবচেয়ে বড় ডাকাত", জলপাইগুড়ির জনসভায় আক্রমণ মমতার
"হিন্দু নয়, কুৎসা ও হিংসার ধর্ম তৈরি করেছে বিজেপি", কটাক্ষ তৃণমূলনেত্রীর
জলপাইগুড়ি: চম্বলের ডাকাতের সঙ্গে তুলনা টেনে বিজেপিকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গ সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি শহরে এবিপিসি মাঠে জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘বিজেপি সবচেয়ে বড় ডাকাত, চম্বলের ডাকাত। হিন্দু নয়, কুৎসা ও হিংসার ধর্ম তৈরি করেছে বিজেপি। মানুষে-মানুষে ভাগাভাগি করাই ওদের কাজ। দিল্লির সরকারের তো ৬ বছর হয়ে গেল!’
এনআরসি-এনপিআর নিয়ে বিজেপি ও কেন্দ্র সরকারকে একহাত নেন মমতা। বলেন, ‘আর বিজেপির এনআরসির ধাক্কা খেতে হবে না। এনপিআর খায় না মাথায় দেয়! এনআরসি ও এনপিআরের তফাৎ কী?
তৃণমূলনেত্রীর দাবি, ‘অসমে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলা একমাত্র রাজ্য যে কাউকে বঞ্চনা করে না। আগে যারা সরকারে ছিল কোন কাজটা করেছে! ভাষণ দিয়ে সব কাজ হয় না। আমাদের কাজে ভুল হলে সংশোধন করে নেব।’
এখানেই থেমে থাকেননি তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘বিজেপির প্রতিশ্রুতি মানে তো প্রতারণা। নোটিফিকেশন জারির পরেও হাল্লাবোল, কিছুই নেই! বলেছিল বছরে ২ কোটি চাকরি দেব, দিয়েছে? বাংলায় বলছে ফর্ম দেব, ভোটের পর হাওয়া! বলেছিল অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দেব, পেয়েছেন? শুধু উল্টোপাল্টা কথা বলার জন্য আছে।’
"বিজেপি হিন্দু ভোট নেবে, ওরা নেবে সংখ্যালঘু ভোট, আর আমি কি কাঁচাকলা খাব!’ নাম না করে এভাবেই আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল মিমকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘হায়দরাবাদের একটা পার্টিকে এখানে ধরে এনেছে। বিজেপি ওই হায়দরাবাদের পার্টিকে টাকা দেয়। বিজেপি হিন্দু ভোট নেবে, ওরা নেবে সংখ্যালঘু ভোট। আর আমি কি কাঁচাকলা খাব!’
সম্প্রতি, বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার যা পরিস্থিতি তাতে এখন থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন। এদিন এই নিয়ে বিজেপিকে একহাত নেন মমতা। বলেন, ‘কী করবেন, রাষ্ট্রপতি শাসন? করে দেখান না! আমি আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি, কিছু হবে না।
তৃণমূলনেত্রীর দাবি, ‘ওরা (বিজেপি) ভয় পেয়েছে বলেই মিথ্যে কথা বলছে। ভয় পেয়েছে বলেই বোমা-বন্দুক নিয়ে মিছিল করছে। তিনি বলেন, ‘তৃণমূলই গোটা ভারতকে পথ দেখাবে। নিচুতলার কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ।’
এদিন বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। ফের একবার জানিয়ে দেন, বাংলাকে তিনি গুজরাত হতে দেবেন না। বলেন, ‘বাংলাকে গুজরাত বানাতে দেব না। বাংলার মেরুদণ্ড ভাঙতে দেব না। কবিগুরুর জনগনমণ পাল্টে দেখুন না কী হয়! বাংলায় বহিরাগত গুন্ডাদের ঢুকিয়েছে। আমার প্রত্যাঘাত গুন্ডা এনেও সামলাতে পারবে না।’
৩ আইপিএসকে কেন্দ্রের তলব করার ইস্যুতেও সোচ্চার হন মমতা। বলেন, ‘এক্তিয়ার নেই, তাও রাজ্য পুলিশকে ডাকছে। কনভয়ে ৫০টি গাড়ির পিছনে কেন ৫০টি গাড়ি।’ তৃণমূলনেত্রীর প্রশ্ন, ‘কেন জেল ফেরত আসামিরা থাকবে? যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছিল কেন থাকবে?’ বলেন, ‘মানুষ এদের দেখলে রেগে যায়।’
বরাদ্দ অর্থ নিয়ে কেন্দ্র বনাম রাজ্যের তরজা দীর্ঘদিনের। এই ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তোলেন মমতা। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘কেন্দ্রের কাছে ৮৫ হাজার কোটি টাকা পাই, দেয়নি। ১০ বছর পার্টির সুবিধা নিয়ে, সরকারের খেয়ে। ভোটের আগে বোঝাপড়া করে বিরোধিতা করবেন। এটা আমরা বরদাস্ত করব না। একুশে বিজেপি বাংলা থেকে দূর করে দিতে হবে।’
কেন্দ্রকে মমতার কটাক্ষ, ‘বলছে দিল্লির টাকা, কোথায় পায় ওরা? রাজ্য থেকে রাজস্ব আদায় করে, তার ৪০% রাজ্য পায়। সেই টাকাটাও দেয় না, মাছের তেলে মাছ ভাজে। ভোটের আগে টাকার প্যাকেট আসবে, নিয়ে নেবেন। টাকা নিয়ে খেয়ে নেবেন, উল্টে দেবেন ওদের।’
মমতা জানিয়ে রাখেন, কেন্দ্র নয় রাজ্যই যাবতীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বলেন, ‘ওরা চা বাগান খুলে দেব বলেও খোলেনি। উত্তরবঙ্গের ৩৭০টি বাগানের চা শ্রমিককে পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের ভাতা, বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে রাজ্য।
বিজেপি নয়, পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান তৃণমূলই করতে পারবে বলেও জানিয়ে দেন মমতা। বলেন, ‘ভোট এলেই গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে বিজেপি। পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান আমরাই করব। দার্জিলিং, তরাই-ডুয়ার্স নিজেদের মতো ভাল থাকবে। তিনি যোগ করেন, ‘রাজবংশীদের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারে পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস হচ্ছে।’
শুধু বিজেপি নয়, এদিন একযোগে কংগ্রেস ও বামেদেরও কটাক্ষ করেন মমতা। বলেন, ‘আগে ৩ দলকে বলতাম জগাই-মাধাই-গদাই। ওই ৩টি দল এখন অঙ্কা-বঙ্কা-শঙ্কা।’
মমতা বলেন, ‘আলিপুরদুয়ারের ১০০% মানুষ সরকারি পরিষেবা পান। জলপাইগুড়ির ৯৫% মানুষ সরকারি পরিষেবা পান। ২ জেলাতেই প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ, বেঙ্গল সাফারি তৈরি হয়েছে। হলদিবাড়ি থেকে মেখলিগঞ্জ সেতু তৈরি হয়েছে। যা ছিল করে দিয়েছি, আর কিছু বাকি নেই। ২ জেলার সব উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনি স্বীকৃতি।
তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘ওদের চাকরি দরকার নেই, পরিযায়ীদের তাড়িয়ে দিয়েছে। ৪০ লক্ষ বেকারের সংখ্যা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। হেঁটে ফিরেছেন পরিযায়ীরা, ট্রেনের ভাড়া দেয়নি। আমরা ৩০০ ট্রেন ভাড়া করে পরিযায়ীদের ফিরিয়েছি। বাংলায় ৪০% দারিদ্র কমেছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘মূলস্রোতে ফিরেছে কেএলও জঙ্গিরা। যারা পরিষেবা পাননি, দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে যান। করোনায় থমকে বিশ্ব, এগোচ্ছে বাংলা। আমরা চাই সব মানুষই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পান। একদিনে সব কাজ সম্ভব নয়, বাকি থাকলে করে দেব।
মমতা মনে করিয়ে দেন, ‘যে ক্ষমতায় থাকে সে চেষ্টা করে কাজ করার। যে ক্ষমতায় থাকে না সে শুধু মিথ্যে কথা বলে। ক্ষমতায় না থাকলে বাইরের গুন্ডা এনে দখল করে যায়।’
এদিন মমতার কথায় উষ্মাও ধরা পড়ে। বলেন, ‘লোকসভা ভোটে এখানে একটা আসনও পেলাম না। এখানকার সব আসন বিজেপি নিয়ে চলে গেল! আর কোন কাজটা বাকি আছে, বলুন? লোকসভা ভোটে আমরা একটাও আসন পাইনি। বিধানসভা আসনে আমরা আপনাদের আশীর্বাদ চাই।’